thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

টানা বর্ষণে দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

২০১৭ আগস্ট ১২ ২০:৫৮:৫৮
টানা বর্ষণে দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরে টানা বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বিদ্যালয় মাঠ, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, খাল-বিল, ডোবা-নালাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। টানা বর্ষণে দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। এতে করে দাম বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের।

বুধবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত শনিবার (১২ আগস্ট) পর্যন্ত চলতে থাকায় জনজীবনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে জেলায় শ্রমজীবী মানুষ কাজে যেতে পারছে না। শহরের রাস্তাগুলো ফাঁকা ছিল। দোকানপাট অনেকটাই বন্ধ। শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি।

জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২১৬ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও ২ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের ৬০টি বাড়ী পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে সুজালপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা। পানিবন্দী পরিবারের লোকজন গবাদি পশুসহ আসবাবপত্র নিয়ে স্থানীয় বলদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং সুজালপুর ইউনিয়নের উত্তর মাকড়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী এলাকার শেখ মো. জাকির হোসেন জানান, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে নতুন করে আরও এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন।

শতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. কেএম কুতুব উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলম হোসেনকে জানিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া পরিবারের মাঝে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে কোন প্রকার সাহায্য প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রেজাউল করিম জানান, অব্যাহত বর্ষণের ফলে বিদ্যালয় মাঠে হাটু পানি জমে গেছে। কয়েকটি ক্লাশরুমে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। ফলে শিক্ষক উপস্থিত হলেও শিক্ষার্থী না আসায় শিক্ষাকার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।

কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের বটতলা এলাকার অটোরিক্সা চালক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বৃষ্টির কারণে যাত্রী নেই। তাই দুই দিন ধরে কিস্তি দিতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে আজ (শনিবার) বৃষ্টিতে বেরিয়ে পড়েছি। আজ কিস্তির জন্য নয়। টাকা রোজগার করে বাজার নিয়ে বাড়ী ফিরতে হবে। তা না হলে দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

চিরিরবন্দর উপজেলার রাণীবন্দর এলাকার দিন মজুর মোহাম্মদ আলী জানান, দুই দিন ধরে কোন কাজ নেই। তাই আজ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কাজের সন্ধানে রাণীবন্দর বাজারে এসেছি। অপেক্ষা করেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোন কাজের সন্ধান মেলেনি। বোধ হয় আজ আর কাজ মিলবে না। তাই ভাবছি কারো কাছে টাকা ধার করে বাজার করতে হবে। তা না হলে পরিবারের লোকজন না খেয়ে থাকবে।

টানা বর্ষণে আগুন লেগেছে কাচা বাজারে। মরিচ এবং পিয়াজের ঝাজ বেড়েছে আরও একদফা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সজবিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক পণ্যের দাম।

বৃহস্পতিবার বাজারে পিয়াজের দাম প্রতি কেজি ৬০টাকা হলেও আজ শনিবার ৬৫টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেদিন কাচা মরিচের কেজি ছিল ১৩০টাকা কিন্তু আজ তা বেড়ে ১৪০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও আলু-২০, পটল-৩০, বেগুন ৩০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাচামাল ব্যবসায়ী মো. সাব্বির হোসেন।

তিনি জানান, বৃষ্টির ফলে পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। আবার বাজারে ক্রেতার অভাবে অনেক পণ্য পচে যাওয়ায় অনেকে দোকান বন্ধ রেখেছে। বৃষ্টি থেমে গেলে মালামাল আমাদানি স্বাভাবিক হবে এবং তখন অনেক পণ্যের দাম কমে যাবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, টানা বর্ষণে এলাকার নদ-নদীর পানি বেড়েছে। প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা। পুনর্ভবা নদীর পানি বেড়ে ৩৩.১০ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই নদীর পানি বেড়ে ৩৯.৫ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। এ সকল নদীর পানি বিপদ সীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

তবে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যার আংশকা আছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি জানান, আমরা বৃষ্টিপাতের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/আগস্ট ১২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর