thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

চুয়াডাঙ্গায় চিনিকলের বর্জ্যে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

২০১৭ আগস্ট ১৩ ০৯:৩২:০৬
চুয়াডাঙ্গায় চিনিকলের বর্জ্যে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানির চিনিকলের বর্জ্যের কারণে মারত্মক পরিবেশ দূষণে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে গোটা দর্শনা পৌর এলাকা এখন নোংরা, দুর্গন্ধময় ও অস্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত হয়েছে।

দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানির চিনিকলের জৈবসার তৈরির কাঁচামাল চিনিকল ও ডিষ্টিলারির বর্জ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাব ও মিলের বর্জ্য পানি নিষ্কাশন লাইনের পাইপ ফেটে নোংরা পানি বের হয়ে বিভিন্ন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় মারাত্মকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শহরে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও ভ্রুক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

জানা যায়, ১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দামুড়হুদার দর্শনায় এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল ও ডিষ্টিলারির সমন্বয়ে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের সময় চিনিকলের তরল বর্জ্য ও মিলের যন্ত্রপাতি ধোয়ামোছাসহ আবাসিক এলাকার নোংরা পানি নিষ্কাশনের জন্য চিনিকল থেকে মাথাভাঙ্গা নদী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো হয়। এ পাইপ লাইনটি দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় প্রায় এক যুগ ধরে পাইপের বিভিন্ন অংশ ফেটে ও ভেঙ্গে গিয়ে মিলের তরল বর্জ্যসহ নোংরা পানি বের হয়ে রেলবাজার সংলগ্ন গর্ত, দক্ষিন দিকের আশুর গর্ত, মোছাদ্দারুল মিয়ার পুকুর ভর্তি হয়ে ও পুরাতন বাজার হিন্দু পাড়ার রাস্তাসহ বসতবাড়ির উঠানে ভর্তি হয়ে গোটা এলাকায় মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।

অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করলে কয়েক বছর আগে চিনিকল কর্তৃপক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে পাইপ লাইনটি মেরামত করে। মেরামতকালে চিনিকলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুর্নীতির সুযোগে নিয়োজিত ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে পাইপলাইনটির সংস্কার কাজ শেষ করে বিল তুলে নেয়। ফলে সংস্কারের কিছুদিনের মাথায় আবারও পাইপ লাইনের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ধরে আগের অবস্থায় ফিরে যায় এবং অসহনীয় দুর্গন্ধে অতিষ্ট করে তুলেছে দর্শনা শহরবাসীকে।

এছাড়া কয়েক বছর আগে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় বড় আকারের দুইটি খোলা জলাধার নির্মাণ করে সেখানে জৈব সারের কাঁচামাল চিনিকলের বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা করে। খোলা অবস্থায় থাকার কারনে এ বর্জ্যের দুর্গন্ধে রাতদিন এলাকার বাতাস ভারি হচ্ছে। দিনের বেলা যত রোদ পড়ে পানি শুকিয়ে দুর্গন্ধের মাত্রা তত বাড়তে থাকে। এ দুর্গন্ধের কারণে চিনিকল এলাকা ছাড়াও শহরের আনোয়ারপুর, শান্তিপাড়া, পাঠানপাড়া, মোবারকপাড়া, ইসলামবাজার, পুরাতনবাজার, মহম্মদপুর, আজমপুর মহল্লাসহ গোটা শহর জুড়ে মারাত্মকভাবে বায়ু দূষণ ঘটছে। ফলে বায়ু দূষনজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকায় বসবাসকারী মানুষ।

সরেজমিনে চিনিকল বর্জ্যপানির ট্যাংক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে একটি ট্যাংকে রক্ষিত নোংরা পানি উপচে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। পাশের সিগনাল ব্যারাকের সামনের মাঠ ও আশপাশ এলাকা এখন বর্জ্য পানির ট্যাংকে পরিণত হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া এই পানিতে মশা-মাছি দেখা দিচ্ছে। এ সময় স্থানীয় গৃহবধু হাফিজা (৭০), রেজাউল (৪০), হাসপাতালপাড়ার নুর ইসলাম, চিনিকলের কোয়ার্টারের বাসিন্দা আমেনা খাতুনসহ (৫৫) বেশ কয়েকজন জানায়, বৃষ্টির কারণে পুকুরের বর্জ্য পানি উপচে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে একাকার হয়ে গেছে। এ নোংরা পানির দুর্গন্ধ ও সেই সঙ্গে পানিতে জন্ম নেওয়া মশা-মাছির কারণে এখানে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায়ও মশারি ছাড়া ছেলেমেয়েরা থাকতে পারে না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এ বিষাক্ত ও নোংরা পানি জমে থাকার কারনে বিভিন্ন গাছপালা মরে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে বারংবার অভিযোগ করেও কোন ফল হয়নি। এলাকায় বাড়ি হওয়ার কারণে শত অসুবিধা হলেও বাধ্য হয়েই মুখ বুজে সব সহ্য করছি।

ক্লাস শেষে বর্জ্যপানির ট্যাংকের পাশের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন ছাত্রী জানায়, আমরা রোজ এ রাস্তাটি দিয়েই স্কুল ও মাদরাসায় যাতায়াত করি। এখানে আসলে রাস্তার দু’পাশের ট্যাংকের নোংরা পানির দুর্গন্ধে আমাদের খুবই অসুবিধা হয়। অনেক সময় বমি ওঠার উপক্রম হয়। এ রাস্তাটি ছাড়া অন্য রাস্তায় অনেক দুরত্বের কারনেই এখান দিয়েই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে রোদ ও বৃষ্টির সময় বেশি অসুবিধা হয়।

কেরু এ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমরা সব বিষয়ে নিয়ম মেনেই চলি। আমাদের কারণে পরিবেশষ দূষণ ঘটে না। আর তা হলেতো পরিবেশবাদীরা আমাদের বলতেন।

(দ্য রিপোর্ট/এআরই/আগস্ট ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর