thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

২০১৭ আগস্ট ১৩ ২০:৩৯:২২
উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : কয়েকদিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আগেরদিনের পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর রবিবার (১৩ আগস্ট) নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট ও নীলফামারীর নিম্নাঞ্চল। বন্যার পানিতে এসব এলাকার ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে। কয়েকটি জেলার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার ফসলের মাঠ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের কাঠালবাড়ি থেকে চওড়াহাট পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে যাওয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থল বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বরকত মো. খুরশিদ আলম জানান, কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ের সাড়ে ৪ কিলোমিটার ও কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সহড়ের সাড়ে ৯ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারী সড়কের পাটেশ্বরী এলাকায় দুইটি পয়েন্টে ধ্বসে গেছে।

কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার ভেলাকোপায় দুলু মিয়ার দেড় বছরের শিশু বাবু বন্যার পানিতে ডুবে ও হলোখানা ইউনিয়নের খামার হলোখানায় খালেকের স্ত্রী জোসনা (২৫) এর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে।

বন্যার পানিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সাড়ে ৫ শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠন।

সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১২৪ সোন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও সদর উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। তলিয়ে গেছে ৪০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত।

পানির তীব্র ¯্রােতে সদরের আরডিআরএস বাজারে ৩০ মিটার ও ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়কমন্ডলে ১৫ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে ১০টি গ্রাম ও কাঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাংটুর ঘাট এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। প্রবল পানির তোরে ধরলার তীরবর্তী মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদি পশুসহ উচুঁ স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভরে যাওয়ায় অনেকেই উচু সড়কে খোলা আকাশের নীচে গবাদি পশু ও পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছে।

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের বাংটুর ঘাট এলাকার আছিয়া খাতুন জানান, রোববার সকালে বাঁধ ভেঙ্গে ঘর-বাড়ির তলিয়ে গেছে। শুধু মাত্র গরু ছাগল নিয়ে কাঠালবাড়ি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। স্কুলের মাঠও পানিতে তলিয়ে গেছে।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, আমার ইউনিয়নের সম্পুর্ণটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ২৭ টি ঘর-বাড়ি পানির প্রবল ¯্রােতে ভেসে গেছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা মোকাবেলায় সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য সাড়ে ১১ লাখ টাকা ও ৫শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৮৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, সহ অন্যান্য ১৩টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা, ধরলা নদীর পাশাপাশি ছোট ছোট সানিয়াজান নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার কারণে ডুবে গেছে লালমনিরহাট বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক, রেললাইন, স্কুল কলেজ, বসতবাড়িসহ ফষলী জমি। বন্যার কারণে লালমনিরহাট জেলার সাথে রেল ও স্থল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। মনুষজন কোন উপায় না পেয়ে আশ্রয় নিয়েছে রেলষ্টেশনে। ভোক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এখন পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধিরা তাদের খোজ খবর নেয়নি।

দোয়ানী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষায় সবকটি জল কপাট খুলে দেয়া হয়েছে। ভারত থেকে প্রচন্ড গতিতে পানি আসায় তিস্তা ব্যারাজ হুমকির মুখে পড়েছে। তাই তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। আর এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তি এলাকায় ফের বন্যা দেখা দিয়েছে । নদীর পাশাপাশি ভারি বৃষ্টিপাতের পানিতে ডুবে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এরই মধ্যে পাটগ্রামের পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডসহ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তি দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গীমারী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, কালীগঞ্জের ভোটমারী, আদিতমারীর মহিষখোচা, দুর্গাপুর, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, মোঘলহাট কুলাঘাট ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের নদী বিধৌত এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে গোটা জেলায় লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। এসব মানুষজন তাদের গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লোকজন। পানি নিচে ডুবে গেছে সদ্য রোপন করা কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষেত, বিনষ্ট হয়েছে সবজি ও মরিচ ক্ষেত।

লালমনিরহাটের রেলওয়ের সহকারী ট্রাফিক সুপারিয়েন্টেন্ট(এটিএস) সাজ্জাত হোসেন জানান, লালমনিরহাট বুড়িমারী রেলরুটের অনেক স্থানে রেল লাইনের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি। বেশ কিছু স্থানে লাইনের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহের কারনে লাইনের নিচে সুড়ঙ্গ গর্তের সৃষ্ট হয়েছে। তাই রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, উপজেলার ২৬ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে হয়েছে। শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ চেয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুজা উদ দৌলা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক বর্নত্যদের খোজ খবর নেয়া হচ্ছে। ত্রাণ হিসেবে জেলায় ২০২ মে. টন জিআর চাল ও সাড়ে ৪ লাখ টাকা মজুদ আছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্ধ নেয়া হবে বলে।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাফিউল আরিফ জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বন্যার্ত লোকজনের নিরাপদ স্থানে সরে আনাসহ তাদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ চলছে।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জয়পুরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে এক হাজার ২শ’ হেক্টর জমির রোপা আমন ও শাক-সবজি। ভেসে গেছে কমপক্ষে ৫শ’টি পুকুরের প্রায় ৫কোটি টাকার মাছ।

জেলা প্রশাসক মো. মোকাম্মেল হক জানান- টানা বর্ষনে জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তেিলয়ে যাওয়ায় রোপা আমন ধানের ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

এদিকে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন- জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় এক হাজার ২শ’ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মারজান হোসেন জানান- গত ২৪ঘন্টায় জেলায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার ছোট যমুনা, তুলশীগঙ্গা হারাবতি নদীর পানি এখন বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানিয়েছেন- জেলার কমপক্ষ্যে ৫শ’ টি পুকুরের প্রায় ৫কোটি টাকার মাছ পানিতে ভাসিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর পানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আগামী ২৪ ঘন্টায় আরো অনেক আবাদি জমি তলিয়ে যাওয়া আশংকা রয়েছে।

বিশেষ করে ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা, মামুদপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ মাঠ এবং জয়পুরহাট সদর উপজেলা ধলাহার ও চকবরকত ইউনিয়নের সব কটি মাঠের ফসল পানির নীচে। কৃষকরা জানান, দু একদিনের মধ্যে এসব এলাকা থেকে পানি না সরলে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করবে এবং সব রোপা আমন নষ্ট হবে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে হুহু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। এতে গাইবান্ধার ব্রক্ষপুত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে দ্বিতীয় দফায় গাইবান্ধার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলার নিম্নঞ্চল ও চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে এসব এলাকার অন্তত অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। টানা বৃষ্টিতে কর্মহীন পানিবন্দি এসব মানুষ খেয়ে না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

তাছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ কাঁচা সড়কসহ বেশ কিছু কাঁচা রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, আমন বীজ তলাসহ ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বাঁশের সাঁকো ও নৌকা দিয়ে পারপার হতে দূর্ভোগে পড়েছেন মানুষরা। পানি উঠায় বন্ধ করা হয়েছে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

এদিকে, পানির প্রবল চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়া-রতনপুর, বালাসীঘাটের কাইয়াঘাটসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে গিয়ে নতুন করে আরও হাজার হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ার আশস্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে অনেকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে শেষ সম্বল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। এসব মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে রেলের জায়গা, বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী মাহাবুবুর রহমান জানান, টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার নদ-নদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। রবিবার সকাল পর্যন্ত ব্রক্ষপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ২৯ ও ঘাঘট নদীর পানি ব্রিজ রোড় পয়েন্টে ৮ সে. মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকলে জেলায় আবারও বড় বন্যার আশস্কা করো হচ্ছে’।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, ‘বন্যার জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভানবাসী মানুষদের ত্রাণ সহায়তাসহ তাদের খোঁজখবর নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন তদারকি করছে। বানভাসীদের তালিকা অনুযায়ী দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।’

এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে পঞ্চগড়ের বন্যা পরিস্থিতি। এরই মধ্যে সেখানে ১৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২৯ হাজার মানুষ।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টানা চারদিনের ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পঞ্চগড়ে আকষ্মিক বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার অধিকাংশ এলাকাই প্লাবিত হয়েছে।

এতে পানিবন্দি হয়েছে ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার। পাঁচটি উপজেলায় খোলা হয়েছে ১৫৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র আর তাতে আশ্রয় নিয়েছেন ২৯ হাজার বন্যা দূর্গত মানুষ।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন সুত্রে জানাযায়, বন্যা দূর্গতদের জন্য নিকটস্থ স্কুল-কলেজ গুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এই সব আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানীয়ভাবে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সরকারি বরাদ্দে শুকনো খাবার এবং খিচুরীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের বিশেষ নজরদারী ও অসুস্থাতা জনিত সমস্য সমাধানের জন্য সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ উপজেলায় চিকিৎসকদের নিয়ে সার্বক্ষনিক নজরদারী করছেন।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ পরিচালক মো. শামছুল হক বলেন, ‘জেলার পাঁচ উপজেলা ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর আমন ক্ষেত এবং ১৫৩ হেক্টর শাক-সবজি ক্ষেত পনিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আগামী ২৪ ঘন্টায় এ জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে। তবে বন্যা পরিস্থির সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ না করা পর্যন্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা যাবেনা বলে তিনি জানান।’

জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘যেসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে ইতোমধ্যে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তার তাদের জন্য সরকারি বরাদ্দে খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন মানুষের অসুস্থ্যতার খবর আমাদের কাছে আসেনি। তবে দূর্গতদের জন্য মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। আকষ্মিক এই বন্য পরিস্থি মোকাবেলায় আমরা সরকারের প্রতিটি দপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’

(দ্য রিপোর্ট/এজে/আগস্ট ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর