জাতীয় শোক দিবসেও উত্তাল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কুবি প্রতিনিধি : জাতীয় শোক দিবসেও নানা ঘটনায় উত্তাল ছিলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। শোকের এই দিনে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদকে জাতির জনকের ভাস্কর্যে ফুল দিতে না দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। আর প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শোক দিবসেও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছেন এক শিক্ষক।

জানা যায়, সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আলী আশরাফ। এর পরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসে শোক র‌্যালি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আলোচনা সভা চলছিল প্রশাসনিক ভবনের ৪১১ নং কক্ষে। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ জানতে পারেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি মাহবুবুল হক ভুইঁয়া ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস নিচ্ছেন। তখন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তখন ঐ ক্লাসে যান।

পরে তারা গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের সভাপতির বহিস্কার দাবি করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে প্রশাসনিক ভবনের তালা লাগিয়ে দেয়। শোক দিবসে ক্লাস নিয়ে শোক দিবসকে অবমাননার অভিযোগ করে ওই শিক্ষকের বহিস্কার দাবি করে ২৪ ঘন্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়ে উপাচার্যকে একটি স্মারকলিপি দেয় শাখা ছাত্রলীগ।

তবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ‘এটা ক্লাস ছিল না। আমাদের সেমিস্টার পরীক্ষা চলমান এবং অনেক আগেই পরীক্ষার জন্য সেমিস্টারের ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। আগামী কালকের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমরা স্যারের সাথে কথা বলছিলাম। এসময় আমরা ৪৮ জনের মধ্যে মাত্র ১৪ জন উপস্থিত ছিলাম।’

এ বিষয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূইঁয়া বলেন, ‘আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম না। পরীক্ষার জন্য ওই ব্যাচের ক্লাস বহু আগেই বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষা চলমান থাকলে কিভাবে ক্লাস হতে পারে। আমি ক্যাম্পাসে অন্যায়-অবিচার নিয়ে কথা বলায় আমার বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষককে ক্লাসে পেয়েছি। তিনি শোক দিবসে ক্লাস নিয়ে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আমার তার বহিস্কার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘আমি একটা অভিযোগ পেয়েছি। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ দিকে মঙ্গলবারও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান তৃতীয় দিনের মত দুর্নীতি বিরোধী প্লাকার্ড নিয়ে অবস্থান করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে নিজ ফেইসবুক প্রোফাইলে দেওয়া স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চিঠি দেওয়ায় গত বৃস্পতিবার থেকে অবস্থান করে আসছেন তিনি। তাঁর ঐ অবস্থান কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ।

অবস্থানকালে আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার অবস্থান অব্যহত থাকবে। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। ভাস্কর্য নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। আমি সেই প্রেক্ষিতেই স্ট্যাটাস দিয়েছি। আমাকে হয়রানী করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ এ অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ঐ শিক্ষক।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/আগস্ট ১৫, ২০১৭)