thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর ইন্টারনেটে প্রকাশ, আদালতে মামলা

২০১৭ আগস্ট ২১ ১৩:৪৯:২৭
স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর ইন্টারনেটে প্রকাশ, আদালতে মামলা

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার সুজানগরে দুই স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ইন্টারনেটে ভিডিও প্রকাশ করায় ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ঘটনার ১৯ দিন পর রবিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রী বাদি হয়ে পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৬ জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করে।

আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. ইমরান হোসেন চৌধুরী মামলাটি গ্রহণ করেন। শুনানি করে পরবর্তীতে আদেশ দেবেন তিনি।

এছাড়া ধর্ষকরা সুজানগর পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওহাবের কর্মী সমর্থক হওয়ায় থানায় মামলা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

আদালত সূত্র জানায়, সুজানগর পৌর এলাকার চর ভবানীপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দুই ছাত্রী গত ১ আগস্ট বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে চর ভবনীপুর মাস্টারপাড়ার হযরত আলী, আল আমিন, শাহিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানা নামে ৬ বখাটে যুবক অস্ত্রের মুখে ওই দুই ছাত্রীকে ধরে পার্শ্ববর্তী নিকিরী পাড়ার একটি বাঁশ বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে। ঘটনাটি কাউকে জানানো হলে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিলে ওই দুই ছাত্রী বিষয়টি গোপন রাখে।

ঘটনার কয়েকদিন পর ভিডিও চিত্র দেখিয়ে পুনরায় তাদের সঙ্গে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা তা প্রত্যাখান করে। এরপর বখাটেরা ওই ভিডিও চিত্রটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা থানায় বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের কাছে ওই দুই ছাত্রীর দরিদ্র বাবা-মা বিচারের দাবি করলেও তিনি কৌশলে সালিশি বৈঠকের মাধম্যে সময়ক্ষেপন করেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ঘটনার ১৯ দিন পর রবিবার (২০ আগস্ট) তারা আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

বাদি পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট রাজিউল্লাহ রঞ্জু দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রকাশ্য দিবালোকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। এটা একটা দু:খজনক ঘটনা। তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় বিচার চাইবে। দেরিতে হলেও ধর্ষণের শিকার ছাত্রীদের পরিবার আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার পাবেন।

ঘটনার স্বীকার দুই ছাত্রী বলেন, ‘এই ঘটনার পর থেকে বখাটেদের হুমকির মুখে আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না এবং কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। সুষ্ঠু বিচার না পেলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।’

সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘বখাটেরা পৌর মেয়রের ক্যাডার হওয়ার কারণে থানা মামলাটি গ্রহণ করে নাই। আমরা কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি তাদের। এই ঘটনার পর থেকেই ওই দুই ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি আমরা।’

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, ‘এ ধরনের কোন অভিযোগ কেউ আমাদের কাছে নিয়ে আসে নাই। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম।’

সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র আব্দুল ওয়াহাব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ভুক্তভোগীর অভিভাবকরা আমার কাছে এসেছিল। এটা নিয়ে কয়েক দফা সালিশি বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি।

বখাটেরা তার কর্মী সমর্থকের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, ‘তারা সাবেক মেয়র তোফাজ্জাল হোসেন তোফার ভোটার। এ ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/আগস্ট ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর