thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৭ শাওয়াল 1445

কেউ ডিম পেলেন, কেউ খেলেন পিটুনি

২০১৭ অক্টোবর ১৩ ১৫:৫৪:৪৪
কেউ ডিম পেলেন, কেউ খেলেন পিটুনি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিশ্ব ডিম দিবস; শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) তাই ৩ টাকায় প্রতি পিস ডিম বিক্রির আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। কিন্তু সেই আয়োজনে আনন্দ ভেস্তে গেছে তাদের। যারা ৩ টাকায় ডিম পাওয়ার আনন্দে খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জড়ো হিয়েছিলেন, তারাও বাড়ি ফিরলেন দুঃখিত মনে। কেউ সঙ্গে কিছু ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন, কেউ আবার বাড়ি ফিরেছেন পুলিশের পিটুনি খেয়ে।

শুক্রবার রাজধানী খামারবাড়ি এলাকায় বিশ্ব ডিম দিবসে ডিম নিয়ে রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ডই ঘটে গেল।

বাজারে ডিমের মূল্য প্রতি পিস ৮ টাকা। সেখানে শুক্রবার প্রতি পিস ডিম ৩ টাকায় বিক্রির এই আয়োজনের কথা মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছিল। বিভিন্ন স্তরের-বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেই খবর জেনে এদিন ভোরের আলো ফুটবার আগে থেকেই কৃষিবিদ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু বিধিবাম! মানুষের ভিড়ের চাপে শুরুর খানিক পরেই ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেন আয়োজকরা। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ক্রেতাদের ওপর লাঠিচার্জও করেছে। এভারে হয়রানির শিকার হয়ে বিক্ষোভ করেছেন ক্রেতারা। বিষয়টিকে ‘প্রতারণা’ বলেও অভিযোগ করেছেন ক্রেতাদের কেউ কেউ। যদিও আয়োজকরা বলছেন, তারা ব্যর্থ নন। বিপুল সংখ্যক মানুষের এমন সাড়া পাওয়ায় তাদের স্টক শেষ হয়ে গিয়েছিল। আগামীতে ফের কম দামে ডিম বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে।

সকাল ১০টায় বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও মানুষের ভিড় দেখে ৯টার দিকেই ডিম বিক্রি শুরু হয়ে যায়।

আয়োজকদের মুখপাত্র বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সদস্য বিশ্বজিৎ রায় মিডিয়াকে জানিয়েছেন, ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য এক লাখ ডিম এনেছিলেন তারা। কিন্তু এত মানুষের চাপে আধা ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে ১০টা বাজার আগেই ডিম বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

তার মতে, ‘মানুষ এত অভূতপূর্ব সাড়া দেবে, তা আমরা ভাবতে পারিনি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমরা দুঃখিত। তবে ব্যর্থ হয়েছি তা বলব না।’

এক লাখ ডিম আনার কথা বলা হলেও অল্প কিছু মানুষকেই ডিম পেতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত ক্রেতারা। মানুষের ভিড়ের চাপে অস্থায়ী মঞ্চ ভেঙে যাওয়ায় বেশ কিছু ডিম ভেঙে নষ্ট হয়েছে। বাকি ডিমগুলো কোথায় গেল? এ প্রশ্ন রেখেছেন ক্ষীপ্ত ক্রেতারা।

সর্বোচ্চ ৯০টি করে ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও মানুষের চাপ দেখে আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্যাকেট করা হয় ২০টি করে। হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে ডিম দেওয়া মিনিট দু-একের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। মানুষের হুড়োহুড়িতে আয়োজকেরা প্যান্ডেল থেকে ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেন। ধাক্কাধাক্কিতে একপর্যায়ে ডিম বিতরণের জন্য তৈরি অস্থায়ী মঞ্চ ভেঙে পড়ে। বেশ কয়েক খাঁচি ডিম ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে ডিমের ওপরে গিয়ে পড়েন। রোদে দাঁড়িয়ে আর ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

হুড়োহুড়ির মাঝে দু-একজনকে ডিম পেতে দেখা যায়। তবে অধিকাংশই ডিম পাননি।

মানুষের ভিড়ের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির ফায়দা নিয়েছেন ক্রেতাদের কেউ কেউ। তেমনি এক ব্যক্তি তিনটি ডিম হাতে করে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসেন।কিভাবে ডিম পেলেন? জিজ্ঞেস করলে অকপট স্বীকারোক্তিতে জানালেন, ‘ভাই আমি পাঁচটায় এসেছি, ডিম পাইনি কৌশলে চুরি করে নিছি।’

ডিম না পাওয়ায় উপস্থিত ক্রেতাদের অনেকেই সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ‘আর কোনো দাবি নাই, ডিম চাই বিচার চাই’, ‘ভুয়া ভুয়া, ‘ডিম চোর, ডিম চোর, ‘ডিম চাই ডিম চাই’-এমন সব স্লোগান দিতে শুরু করেন।

উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে তেজগাঁর থানা পুলিশ বেশ কয়েকবার লাঠিচার্জ করে। কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। এজন্য অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন ক্রেতারা। ডিম কিনতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা। এতে ক্রেতাদের ক্ষীপ্ততা-আক্ষেপ আরো বেড়ে যায়।

রাজধানীর জিগাতলা থেকে এসেছেন মাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে এসেছিলাম। কিন্তু ডিম কিনতে পারিনি। বরং ভিড়ের মধ্যে পুলিশের পিটুনি খেয়েছি। আয়োজকরা কি মানুষজনকে পেটাতে এই আয়োজন করেছে? প্রশাসন তাদের কিছু না বলে পুলিশ দিয়ে মার খাওয়ালো কেন? ডিম তো পেলামই না, উল্টো মার খেলাম।’

মহাখালী থেকে ডিম কিনতে এসেছিলেন নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘সকালেই এসেছিলাম। কিন্তু ডিম পাইনি। ভিড়ের মধ্যে মোবাইলটি হারিয়েছি। এমন ব্যর্থ আয়োজনের জন্য আয়োজকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

পুরানা পল্টন থেকে ডিম কিনতে আসা একজন গৃহবধূ জানান, ফেইসবুক, জাতীয় পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক প্রচারণা দেখে তিনি ডিম কিনতে এসেছিলেন। তার পরিচিত একজন এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। কিন্তু ডিম বিক্রির আয়োজন দেখে তার মনে হয়েছে, মানুষের সঙ্গে ‘তামাশা’ করা হচ্ছে।

তার ভাষায়, ‘কাউকে ডিম কিনে নিয়ে যেতে দেখলাম না। তাহলে এত ডিম গেলে কোথায়? পুরো ব্যাপারটা একটা ধোঁকাবাজি। তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)সভাপতি মসিউর রহমান ফেইসবুকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ডিম দিবস উপলক্ষে আমরা সাধারণ মানুষকে একটি বার্তাই দিতে চেয়েছি- তা হল ডিম একটি পুষ্টিকর খাদ্য এবং সকলেরই ডিম খাওয়া দরকার। আমরা চেয়েছিলাম সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষরা যেন কম দামে পরিবারের জন্য এক মাসের ডিম কিনে নিয়ে যেতে পারেন। আগামীতে আলোচনা সাপেক্ষে আবারও কম দামে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর