thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

নাটোরের গণভবনে শতবর্ষী গাছ লোপাটের মহোৎসব

২০১৭ অক্টোবর ১৭ ১২:০৩:০৫
নাটোরের গণভবনে শতবর্ষী গাছ লোপাটের মহোৎসব

নাজমুল হাসান, নাটোর : নাটোরের উত্তরা গণভবনের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গাছ লোপাটের মহোৎসবে মেতেছে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।

ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া মরা গাছ ও ডালপালা কাটার নামে মাত্র ১৮ হাজার ৪’শত টাকার টেন্ডারের বিপরীতে কেটে ফেলা হয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা সমমূল্যের অন্তত ১৫টি তাজা গাছ।

ঐতিহ্যবাহী গাছ বিনষ্টকারীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বাসভবন নাটোরের উত্তরা গণভবনের চারপাশের লেকের ধারে রয়েছে শতবছরের অন্তত তিন’শ প্রজাতির আম গাছ। এছাড়াও মেহগনি, নারিকেল, কাঠ বাদাম সহ আরো পাঁচ শতাধিক গাছ রয়েছে। সম্প্রতি ঝড়ে উপড়ে পড়া দুটি আম ও একটি মেহগনিসহ বেশকিছু গাছের ডালপালা কাটার দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগ। বনবিভাগের কর্মকর্তা এবিএম আব্দুল্লাহ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ওই কয়েকটি গাছ এবং ডালপালার মূল্য নির্ধারণ করেন মাত্র ১৮ হাজার ৪’শ টাকা। পরে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্ধারিত মুল্যে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী সোহেল ফয়সাল গাছগুলো কিনে নেন। কিন্তু মরা গাছের আড়ালে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা, গণভবনের তত্ত্বাবধায়ক, বনবিভাগসহ সরকারি দফতরের বেশ কজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে কেটে ফেলা হয় ঐহিত্যবাহি প্রায় ১৫টি তাজা গাছ। লাখ টাকা বাজার মূল্য ছাড়াও এই গাছগুলোর রয়েছে ঐতিহাসিক মূল্য।

সরেজমিনে গণভবনের ভিতরে লেকের পশ্চিম দিকে গিয়ে দেখা যায়, জনমানব শূন্য গহিন জঙ্গলের ভেতরে দেদারসে কাটা হয়েছে শতবছরের বেশ কয়েকটি আম গাছ। বর্তমানে সেখানে পড়ে রয়েছে বড় বড় গাছের গুড়ি। সম্প্রতি গাছ কাটা শেষে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ভ্যানে করে বেশ কিছু গাছ ভবনের বাইরে নিয়ে গেছে। যেটা গণভবনের সিসি টিভি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে।

গণভবনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের কর্মচারী সুজন পাল বলেন, গণপুর্ত বিভাগ শুধু উত্তরা গণভবনের বিল্ডিংগুলোর দায়িত্বে থাকলেও তারা অন্যায় ভাবে গাছগুলো লীজ দিয়েছে। তাছাড়া মরা এবং ঝরে পড়ার নামে গাছগুলো লীজ দিলেও ঠিকাদার শত বছরের তাজা সব গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫টি তাজা গাছ কাটা হয়েছে। পরে নেজারত ডেপুটি কালেকক্টরের অনিন্দ মন্ডল সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে বাকি গাছের গুড়িগুলো নিয়ে যেতে বাধা দিয়েছেন।

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঝরে পড়া এবং মরা গাছের নামে কাটা হয়েছে লাখ টাকার ১২ থেকে ১৫টি তাজা গাছ। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা ও গণভবনের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেম, আব্দুস সবুর তালকুদার, বনবিভাগ কর্মকর্তা এবিএম আব্দুল্লাহসহ সরকারি দফতরের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা।

অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের।

সদর উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তার এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, গণপূর্ত বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর সরেজমিনে পরিদর্শন করে গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সোহেল ফয়সালের দাবী ইজারার কার্যাদেশ অনুযায়ী গাছ কাটা হয়েছে। কোন তাজা বা ইজারার বাইরে গাছ কাটা হয়নি।

উত্তরা গণভবনের কেয়ারটেকার আবুল কাশেম বলেন, ঝরে বা মরে যাওয়া গাছের সংখ্যা উল্লেখ করে আমরা আমাদের বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিই। পরে সেখান থেকে কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখে গাছের মূল্য নির্ধারণ করে লীজ দিয়ে থাকে। আর কার্যাদেশের কপির আদেশ হাতে পাওয়ার পর আমরা ঠিকাদারকে গাছ কেটে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছি।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান আকন্দ বলেন, স্থানীয় বনবিভাগের কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠিয়ে গণভবনের ভিতরে ঝরে এবং মরে যাওয়া গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য বলা হয়। পরে বনকর্মকর্তা গাছের মূল্য নির্ধারণের পর আমরা গাছ কর্তনের লীজ দিয়েছি। যদি দামের বিষয়ে কোন অনিয়ম হয়, তাহলে বনকর্মকর্তা করেছে। এই কাজে গণপূর্ত বিভাগ কোনভাবেই দায়ী নয়।

অপর এক প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, ঝরে পড়া এবং মরা গাছ লীজ দেওয়ার বাহিরে যদি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাজা গাছ কেটে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আমার অফিসের কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়ে কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

উত্তরা গণভবন ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। তবে গাছ কাটার বিষয়টি তাকে জানায়নি গণপূর্ত বিভাগ, এমন দাবী করে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, পদাধিকার বলে আমি উত্তরা গণভবন ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি। কিন্তু গণভবনের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী জায়গার গাছ কাটার টেন্ডার দেওয়ার বিষয়ে গণপূর্তর নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে অবগত করেনি। ঐতিহ্যবাহি তাজা গাছ কাটার খবর পেয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট পাঠিয়ে গাছকাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত করে মরা গাছ কাটার নামে তাজা গাছ কেছে ঐতিহ্য বিনষ্টকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/অক্টোবর ১৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর