thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

পুলিশের নৃশংসতায় চোখ হারানো শাহজালালের ওপর হামলা

২০১৭ অক্টোবর ১৯ ০০:২২:২৫
পুলিশের নৃশংসতায় চোখ হারানো শাহজালালের ওপর হামলা

খুলনা ব্যুরো, দ্য রিপোর্ট : পুলিশের নৃশংসতায় দু’চোখ হারানো যুবক শাহজালালের শ্বশুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার স্ত্রী ও মাকে আহত করেছে মহিলা আওয়ামী লীগের এক নেত্রী। যে ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে খুলনার পুলিশ দরিদ্র যুবক শাহজালালের চোখ তুলে নিয়েছিল, সেই ছিনতাইকৃত মাল খোঁজার অজুহাতে হামলা করা হয় শাহজালালের শ্বশুর বাড়িতে। এ সময় অন্ধ শাহজালাল মা ও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। হামলায় তারা আহত হন।

বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনীতে হামলা করে খালিশপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা আক্তার লিমার নেতৃত্বে ১০/১২ জন নারী-পুরুষের একটি দল। এসময় শাহজালালের শ্বশুর বাড়ি ভাঙচুর হয়।শাহজালালের স্ত্রীসহ পরিবারের ৫/৬জন সদস্য আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

শাহজালালের বাবা জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, তার বিয়াইয়ের বাড়িতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শাহজালাল সন্ধ্যার একটু পর বসে টেলিভিশন দেখছিলো। এ সময় হঠাৎ খালিশপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা আক্তার লিমার নেতৃত্বে ১০/১২ জন নারী-পুরুষের একটি দল ঘরে প্রবেশ করে। তারা তার ছেলে শাহজালালের নাম ধরে ডাকতে থাকে আর বলে ‘আমাদের ছিনতাই করা টাকা এবং সোনার চেইন কই।’ এ সময় তার পুত্রবধূ রাহেলা বেগম বিষয়টি জানতে চাইলে তারা এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। হামলায় পুত্রবধূ রাহেলা বেগম, তার মা রাণি বেগম, স্ত্রী রেনু বেগমসহ পরিবারের ৫/৬জন সদস্য আহত হয়। হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে তারা আঘাত করে। এ সময় তাদের চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এলে তারা পালানোর চেষ্টা করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেশিরা মহিলা নেত্রী তাসলিমা আক্তার লিমা ও স্থানীয় নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতি ওরফে মরিয়ম নামে দু’ জনকে আটক করে রাখে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার নাম বলে রিপনসহ কয়েকজন এসে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

হামলার বিষয়টি শুনেছেন উল্লেখ করে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, পুরোনো একটি দেনা-পাওনার বিষয় নিয়ে কয়েকজন মহিলা শাহজালালদের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে এসআই রফিককে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছেন।

এদিকে বিষয়টি জানতে মহিলা নেত্রী তাসলিমা আক্তার লিমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। পরে একাধিক চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে খালিশপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শারমীন রহমান শিখা সাধারণ সম্পাদক লিমার উদ্ধৃতি দিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ৫ এপ্রিল লিমার মেয়ে নগরীর কাস্টমস মোড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। পরবর্তীতে ছিনতাই হওয়া মোবাইল শাহজালালের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বুধবার বঙ্গোবাসী স্কুলে একটি অনুষ্ঠানে বসে লিমা জানতে পারেন শাহজালাল তার বাড়িতে অবস্থান করছে। এ খবর পেয়ে তিনি লোকজন নিয়ে বাকি মালামাল আনতে যায়। তখন শাহজালালের বাড়ির লোকেরাই তাদের ওপর হামলা করে এবং আটকে রাখে। পুলিশের সহায়তা না নিয়ে নিজেরা কেন মালামাল উদ্ধারে যাওয়া হয়- এ প্রশ্ন করলে তিনি লিমাকে একটু বোকা বলে মন্তব্য করেন। এমনকি এ বিষয়ে নিউজ না করার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই মো. শাহ জালাল রাত ৮টায় তার শিশু কন্যার দুধ কেনার জন্য বাসার পাশ্ববর্তী দোকানে গেলে খালিশপুর থানা পুলিশ তাকে আটক করে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ শাহজালালকে বিশ্ব রোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-পা চেপে ধরে এবং মুখে গামছা ঢুকিয়ে স্ক্রু ডাইভ্রার দিয়ে দু’টি চোখ উপড়ে ফেলে- মর্মে অভিযোগ এনে তার মা রেনু বেগম গত ৭ সেপ্টেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম খান, এসআই রাসেল, এসআই তাপষ রায়, এসআই মোরসেলিম মোল্লা, এসআই মিজান, এসআই মামুন, এসআই নূর ইসলাম ও এএসআই সৈয়দ সাহেব আলী, আনসার সদস্য (সিপাই) আফসার আলী, আনসার ল্যান্স নায়েক আবুল হোসেন, আনসার নায়েক রেজাউল এবং অপর দু’জন খালিশপুর পুরাতন যশোর রোড এলাকার সুমা আক্তার ও শিরোমনি বাদামতলা এলাকার লুৎফুর হাওলাদারের ছেলে রাসেলকে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই তদন্ত করছে।

এদিকে শাহজালালের শ্বশুর বাড়িতে হামলার সময় নয়াবাটি এলাকায় খালিশপুর থানার একটি পুলিশ দাড়িয়ে ছিল বলে এলাকাবাসী জানায় । তবে এ ব্যাপারে কেএমপি ডিসি উত্তর জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

এর আগে বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাব মিলানয়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন শাহ জালালের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা দায়ের করা সুমি আক্তার । তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনগন শাহজালালের চোখ তুলে দিয়েছে। কিন্তু তিনি খুশি হতেন শাহজালালকে হত্যা করা হলে ।’

(দ্য রিপোর্ট/তৌইমি/জেডটি/অক্টোবর ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর