thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

সাতছড়ির পাম বাগানে রাতের অন্ধকারে ফল পাচার

২০১৭ নভেম্বর ০৮ ০৮:০৬:১২
সাতছড়ির পাম বাগানে রাতের অন্ধকারে ফল পাচার

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে থাকা পাম বাগানটি অযত্ন ও অবহেলায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ৩শ’ ১০ একর ভূমিতে প্রায় অর্ধলক্ষাধীক পাম গাছ শুধু জাতীয় উদ্যানের ঐতিহ্য হয়ে দাড়িয়ে আছে। অযত্ন ও অবহেলায় কারণে কোন কাজে লাগছে না এই গাছগুলো।

কিন্তু এই পাম বাগান আসলেই কি ঐতিহ্য হারাতে বসেছে অযত্ন ও অবহেলায়, না অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে এর পেছনে। নাকি সেখানে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলছে অন্য কোন খেলা। এমন হাজারও প্রশ্ন মনের মধ্যে নিয়ে শুরু হয় অনুসন্ধান।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত টিপরা পল্লীর বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও বন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেল ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। কারও তথ্যের সাথে কারও মিল নেই।

কেউ বলছেন ফল আসে না, কেউ বলছেন ফল আসে কিন্তু কোথায় যায় বা কি হয় জানা নেই, আবার কেউ বলছেন রাতের অন্ধকারে অন্যত্র পাচার হচ্ছে এই ফলগুলো।

তবে কর্তৃপক্ষের বাদী এখানের গাছগুলোতে ফল আসে না। আর যা আসে তা বন্যপ্রাণীর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তবে প্রথমেই এ বিষয়ে জানতে যাওয়া হলো উদ্যানের ভেতরে টিটপা পল্লীতে। সেখানে স্থানীয়দের সাথে কথা হয় পাম ফল নিয়ে। তবে খোলা-মেলাভাবে কেউই কিছু বলতে রাজি নন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন টিপরা বাসিন্দা জানান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সামনে অনেকগুলো পাম গাছ আছে। ওই গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এগুলোতে কখনও ফল আসতে দেখা যায়নি। কিন্তু গহীন জঙ্গলের ভেতরে থাকা কয়েক হাজার গাছে গরমের সময় (গ্রীষ্মকালে) প্রচুর পরিমাণে ফল আসে। তখন এই ফলগুলো বাগানের কয়েকজন নির্দিষ্ট শ্রমিক সংগ্রহ করেন। তবে তারা এই ফলগুলো সংগ্রহ করা পর কোথায় নেন বা কার কাছে নেন তা তাদের জানা নেই।

জাতীয় উদ্যানের সামনে পর্যটকদের জন্য রয়েছে খাবারের হোটেলসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয় এ বিষয়ে। তবে তিনিও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।

ব্যবসায়ী মো. ফজলুর রহমান বলেন, আমরা সব সময় ব্যবসা নিয়ে বস্ত থাকি। জঙ্গলের ভেতরে খুব একটা যাই না। তবে মাঝে মধ্যে দূর দূরান্ত থেকে পরিচিত লোকজন আসলে তাদেরকে নিয়ে অনেক সময় গহীন জঙ্গলে যাওয়া হয়। অনেক সময় দেখা গেছে কিছু লোক গহীন জঙ্গলের ভেতরে থাকা পাম গাছগুলো থেকে ফল সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কোনো দিন তাদেরকে এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করিনি।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এমন হবে জানলে তাদেরকে জিজ্ঞেস করতাম। কে বা কারা এই ফল সংগ্রহ করাচ্ছে বা প্রতি বছর কি পরিমাণ ফল সংগ্রহ করা হয়, কোথায় যায় ফলগুলো ইত্যাদি।

এ সময় কথা হয় আরও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে। সবার উত্তর একটাই। কোথায় যায় ফল তা জানি না। তবে মাঝে মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে দেখা যায়। কিন্তু ফলগুলো কখনও প্রকাশ্যে আসে না।

তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর আবারও গন্তব্য সাতছড়ির ভেতরে। সেখানে গিয়ে শ্রমীকদের খোঁজ করলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। আবারও গহীন জঙ্গল থেকে উদ্যানের সামনে ফিরে আসা। এ সময় স্বেচ্ছায় সামনে আসেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি জানালেন পাম ফল যেভাবে এখান থেকে রাতের আধারে অন্যত্র পাচার হয়।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি জানান, গরমের সময় উদ্যানের কয়েক হাজার গাছে ফল আসে। সে ফলগুলো প্রতিদিনই কয়েজন শ্রমীক সংগ্রক করেন। পরে রাতের বেলা ট্রাক ভরে সেগুলো এখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক দিয়ে ডাকাতির ভয়ে রাতের বেলায় কোন যানবাহান চলাচল করে না। সন্ধ্যা নামার পর থেকে এই রাস্তাটি দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরাও সন্ধ্যার আগেই ওই রাস্তা থেকে চলে যান। এখানকার ব্যবসায়ীরাও তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন, কেউবা বাড়িতে চলে যান। সেই জন্য এখানে রাতে কি হয় তা কেউই প্রত্যক্ষ করতে পারেননি।

তিনি কি করে বিষয়টি দেখেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকায় আমি রাতে এখানেই অবস্থান করি। মাঝে মধ্যে রাতে দোকান থেকে বাহিরে বের হই। তখন এ দৃশ্য দেখা যায়। প্রতিরাতেই ট্রাক ভর্তি করে এখান থেকে পাম ফল নেওয়া হয়। তবে কে সেগুলো নেন বা কোথায় নেয় তার নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না।

তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর গন্তব্য এবার বন কর্তৃপক্ষের কাছে। বন বিট কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথা মিথ্যে দাবি করে জানান, এখানে তেমন কোন শ্রমিকই নেই। এখানে কর্মকর্তা কর্মচারী মিলিয়ে লোক আছে মাত্র ৭ জন। তাছাড়া উদ্যানের গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু গাছের আবার ফল দেয়ার বয়সও অতিক্রম হয়ে গেছে। কিছু গাছে ফল আসে না। কারণ এখানের আবহাওয়া পাম চাষের জন্য উপযোগী নয়। আর হাতে গুণা কয়েকটি গাছে পল আসলে এগুলো বন্য জীবজন্তু খেয়ে ফেলে।

তিনি বলেন, এখান থেকে যদি কোন ফল সংগ্রহ করতে দেখাও যায় তাহলে সে বিষয়ে আমি অবগত নই।

বনের কর্মকর্তা হিসেবে বিষয়টিতে নজর দেয়া আপনার দায়িত্ব। তাহলে কেন আপনি ফল সংগ্রহ হচ্ছে এ বিষয়ে অবগত নন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত তীক্ষ্ন নজর রাখছি। কিন্তু আমার চোখে এমন কোন দৃশ্য ধরা পড়েনি।

এক পর্যায়ে তিনি এ ব্যাপারে রেঞ্জ অফিসার মো. মাহবুব হোসেনের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন। তবে রেঞ্জ অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবি বলেন, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাম গাছের বিষয়টি রহস্য মনে হচ্ছে। তবে আমি নতুন যোগদান করা এখন পর্যন্ত সেখানে যাইনি। শিঘ্রীই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করব।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর