thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

তিমিরে তারানা ও দীপনপুরের মহিমাগাথা

২০১৭ নভেম্বর ১৭ ১৫:২৫:৫৮
তিমিরে তারানা ও দীপনপুরের মহিমাগাথা

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ :

শেষ পর্যন্ত বলা যায় দীপনপুর মহিমান্বিত হলো। সোহেল হাসান গালিবের ‘তিমিরে তারানা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের মধ্যদিয়ে, গুণী মানুষের পদধুলিতে স্থানটি ইতিহাসে সোনার অক্ষরে খোচিত হলো।

কদিন ধরে একটা বিতর্ক চলছিল। বাদমাগরিব শব্দটি ব্যবহার করা ঠিক হয়েছে কিনা? কদিন আগে ১৫ নভেম্বর বাদ মাগরিব এলিফ্যান্ট রোডের দীপনপুরে সোহেল হাসান গালিবের ৫ম বই প্রকাশ উপলক্ষে এক আড্ডার আয়োজনের খবর প্রচার হয়। কেউ কেউ শব্দটার ব্যবহার নিয়ে তর্ক জুড়ে দেন। সময় ক্ষেপণ না করে তখনই সাচ্চা জবাব দিয়েছিলেন কবি স্বয়ং। তিনি লেখেন-‘দুঃখজনক হইলেও সত্য, আজও বাংলার অর্ধ-শিক্ষিত সেকুলার, বলা ভালো সিউডো-সেকুলার, এই মর্মে জ্ঞান দিতে চায়, কিভাবে আপনি সর্বজনীন লেখক হইবেন।

তাদের দাবি হইলো, আপনার লেখায় কোনো ধর্মীয় অনুষঙ্গময় ধর্মীয় কোনো শব্দ থাকতে পারবে না। তাইলে আপনি গোষ্ঠীলেখক বা সাম্প্রদায়িক লেখক হয়ে যাবেন। ভাষাকে ধর্মীয় শব্দের 'আছর' থেকে মুক্ত করাই আপনার লেখকজীবনের, এমনকি জাতীয় জীবনের একমাত্র সংগ্রাম।এদের সঙ্গে তর্ক করতেও লজ্জা লাগে।এরা মূলত বাংলাদেশের হীনম্মন্য উঠতি লেখক। খবর নিলে জানবেন, হয়তো এদের মধ্যে কেউ কেউ পাশ করেছে মাদ্রাসা থেকে। ইসলাম নিয়ে তাদের মনে আছে আন্তরিক লজ্জা ও ভীতি। আধুনিক হতে না পারার ব্যথা ও বেদনা। তাই কারো লেখায় আরবি-ফারসিশব্দ বা ধর্মীয়অনুষঙ্গ দেখলেই এরা ধার্মিকতার বাইরে আর কোনো অর্থ উৎপাদন করতে পারে না। আল্লা তাদের দিলে এমন মোহর মাইরা দিছে, সেই সক্ষমতা এরা কোনোদিন অর্জন করতে পারবে বইলাও মনে হয় না।’ এ জবাব যথার্থই বৈকি!‌‘তিমিরে তারানা’ দিয়ে সে প্রশ্নের প্রত্যুত্তর দিতে সামিল হয়েছিলেন দীপনপুরে অনেকগুলি নক্ষত্র। তারা যে যার দুনিয়ায় আলোক ছড়িয়ে যাচ্ছেন।

এ দিনটি আরো একদিক দিয়ে তাৎপর্যময়—কবি সোহেল হাসান গালিবের ৩৯ তম জন্মদিনও। জীবনের উনচল্লিশটি বসন্তে এপর্যন্ত ৫টি কবিতার বই বেরিয়েছে তার। এগুলি— চৌষট্টি ডানার উড্ডয়ন, দ্বৈপায়ন বেদনার থেকে, রক্তমেমোরেন্ডাম , অনঙ্গ রূপের দেশে। সর্বশেষ যুক্ত হলো-‘তিমিরে তারানা’।

ওইদিনের বাদমাগরিব আড্ডাটার ঘটনাক্রম ছিল মোটামুটি এরকম-প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অগ্রদূত অ্যান্ড কোম্পানি’র চেয়ারম্যান রনি মহালদার প্রথমে স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন কবিপুত্র রাহিব হাসান ব্রত ও কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক কুমার চক্রবর্তী। তারপর স্বকন্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি সোহেল হাসান গালিব। জন্মদিনের কেক কাটেন প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও কথাশিল্পী পাপড়ি রহমান। কবি ও কবিতাগ্রন্থের জন্মদিনে বক্তব্য রাখেন কবি মজিদ মাহমুদ, গদ্যকার ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন, সমালোচক ও শিক্ষক মোহাম্মদ আজম, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি শোয়াইব জিবরান।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি শামসেত তাবরেজী, গল্পকার মনিকা চক্রবর্তী, কবি অনিকেত শামীম, কবি জাকির জাফরান, রাশেদুজ্জামান, সেজুঁতি জাহান, তারিক টুকু, তুষার কবির, রুদ্র অনির্বাণ, মেঘ অদিতি, সুমী সিকান্দার, ফারুক সুমন, রেজা রাজা, প্রাবন্ধিক ফজলুল কাবিরী, পলিয়ার ওয়াহিদ, আহমদ জসীম, সামতান রহমান, হাসান রোবায়েত, হানিফ রাশেদীন, শামশাম তাজিল, অনিরুদ্ধ দিলওয়ার, বাদল ধারা, হিজল জোবায়ের, আল ইমরান সিদ্দিকী, আল মোমেন, ফরহাদ নাইয়া, রাজু, সোহাগ, দীপংকরসহ আরো প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি উপস্থপনা করেন কবি সঞ্জীব পুরোহিত।

সত্যিই কবির কারণে কী এক সখিতায় তিমিরে তারানা, দীপনপুর আর বাদমাগরিব দ্যোতনাময় হয়ে উঠল। যেমনটি একবার কবি আলোক সরকারের কবিতায় বারান্দার টবের তিনটি গোলাপ তিন সহোদরায় পরিণত হয়েছিল। গালিবের কাছে আমরা প্রত্যাশায় থাকলাম-আরো আরো উজ্জ্বল পঙত্তির। দীর্ঘজীবী হোন কবি। আপনার সৃজনমত্ততায় যুক্ত হোক নতুন নতুন তারানা।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর