thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

চলে গেলেন পশ্চিম বাংলার লেখক সোহারাব হোসেন

২০১৮ মার্চ ০৪ ০৩:৩২:০৯
চলে গেলেন পশ্চিম বাংলার লেখক সোহারাব হোসেন

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ, দ্য রিপোর্ট:

পশ্চিম বাংলার লেখক সোহারাব হোসেনের গল্প‌ ‘মিথ্যে আখ্যানের কুশীলব:দুই’। শুরু হয়েছে এভাবে-‘আমার বন্ধু সেলিম আত্মকথা লিখেছে। পাঠক আজ সে শোনাতে চাই আমি। শোনো দিয়া মন:গত স্বপ্নে ছিল তেতাল্লিশ, আজ কমে দাঁড়িয়েছে বিয়াল্লিশে।…এই গল্পটার শেষ কটি বাক্য হচ্ছে-পাঠক, সেলিমের আত্মকথা এখানে শেষ! তারপর আর লেখা হয়নি!কারণ, সেই দৌড় থামিয়ে আর কোনওদিন ঘরে ফেরেনি! কোথায় যে গেল সে ঋকবেদের যুগে, না মধ্য এশিয়ায়, না তার দাদুর ভিটেয়;জানিনে।’ তার এই গল্পের নায়কের মতই সোহারাব হোসেন চলে গেলেন অসময়েই।

বসির হাটের বেঙ্গল রিপোর্ট জানাচ্ছে, মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার রাত ৭টা ৪৯মিনিটে মৃত্যু বরণ করলেন “হায়েনা মানুষ” ,”বদলি বসত”, “শরম আলীর ভুবন”, “সহবাস পরবাস” একাধিক গ্রন্থের জন্মদাতা সোহরাব হোসেন। কলকাতা সি টি কলেজের প্রফেসর এই মানুষটি মাদরাসা বোর্ডের প্রেসিডেন্টও ছিলেন এককালে। বসিরহাটের মাটিয়া গ্রামে জন্ম মানুষটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে কর্মসূত্রে কিছুদিন ধান্যাকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি কলকাতা সি টি কলেজের প্রফেসর হন। অসংখ্য পত্র পত্রিকায় তাঁর একাধিক গল্প ,প্রবন্ধ, কবিতা প্রকাশিত হয়।তিনি একাধিক শিক্ষকের জন্মদাতাও। অনেক ছাত্রকে তিনি সম্পূর্ণ ফ্রীতে পড়িয়েছেন,শিক্ষা দিয়েছেন।তাঁর তৈরি ছাত্র ছাত্রীরা আজ একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রূপে কর্মরত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল একান্ন বছর।

দ্য বেঙ্গল মিরর লিখেছে, ১৯৬৬ সালের ২৫ সে নভেম্বর তাঁর জন্ম। উত্তর ২৪ পরগনার এই কৃতি সন্তান ছাত্র জীবনেও অত্যন্ত সফল একটি নাম। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে রেকর্ড করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেটও করেন তিনি। কর্ম জীবনে প্রথমে শিক্ষকতা পরে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি কলকাতার সিটি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই লেখালেখিতে পটু মানুষটি গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ থেকে উপন্যাস সবেতেই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। গ্রাম বাংলার চলমান জীবনের কথা স্থান পেয়েছে তার লেখায়। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস 'মাঠ জাদু জানে', 'সহবাস পরবাস', 'রাজার অসুখ' প্রভৃতি। অন্যদিকে 'আয়লা যুদ্ধ', 'সুখ সন্ধানে যাও' তার বিখ্যাত গল্প সংকলন। শিশু রচনায় উল্লেখযোগ্য 'রূপকথার পুতুল', 'ভূত পিসের ডাক' অত্যন্ত সমাদৃত পুস্তক।

সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৮ সালে নতুন গতি পত্রিকার ' নতুন গতি পুরস্কার' এ সম্মানিত হন। তাছাড়াও নানা সামাজিক সংগঠনের তরফে সম্মাননা ও সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। তার মৃত্যুর খবরে সাহিত্যাকাশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন মানুষজন তার বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছেন।

ঔপন্যাসিক অমর মিত্র ফেবুতে লিখেছেন,প্রতিভাবান লেখক, অনুজ প্রতিম বন্ধু সোহারাব হোসেন চলে গেল। আজ কৃষ্ণপক্ষের শুরু।

এভাবেই অসংখ্য কবি-সাহিত্যিক তার মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছেন। কোলকাতার সাহিত্যিক সমাজ ভীষণভাবে শোকাহত।

তিনি মানুষ হিসেবে অসাধারণ ছিলেন। অত্যান্ত মেধাবী এই মানুষটি যেখানে গেছে আর কোনদিন ফিরে আসবেন না। তবে তার সৃষ্টির মাঝে তাকে আমরা খুঁজে পাব। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক-কামনা একটাই।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর