thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

লেবাননের দার্শনিক আরব কবি খলীল জিবরান

২০১৪ মার্চ ০২ ০২:০৪:১৪
লেবাননের দার্শনিক আরব কবি খলীল জিবরান

সৈয়দা কানিজ সুলতানা

কেউ বলে কাহলীল জিবরান, কেউ বলে খলীল জিবরান। প্রকৃত পক্ষে খলীলই সঠিক। কেননা এটি আরবী উচ্চারণ। ইংরেজী থেকে অনেকে তাঁর লেখা অনুবাদ করেন বলে ভুলক্রমে কাহলীলই লিখেন। ‘দ্য প্রফেট’ (আন-নাবী) গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি সারা পৃথিবীর কবিতা পাঠকের কাছে পরিচিত। প্রফেট প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে। তার কবিতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ভৌগোলিক বিচরণের ক্ষেত্রে সময়হীনতা এবং মরমী দার্শনিকের এক অবাস্তব জগৎ।

জিবরান তার বহু রচনায় বিভিন্ন ধারণা ব্যাখ্যা করতে ছোট ছোট বর্ণনামূলক আখ্যান ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এ সব ছিল মূলত নীতিকথামূলক আখ্যানের প্রতিস্থাপন। শিক্ষামূলক রচনা, প্রবচন, প্রতীকাশ্রয়ী কাহিনী ও শ্লেষসমৃদ্ধ গদ্য— কৌতুক এ সবই হচ্ছে জিবরানের রচনার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক। তবে আরবী ও ইংরেজী উভয় রচনাতেই তার অদ্ভুত শৈলী তার রচনাকে দিয়েছে মনোমুগ্ধকর চমৎকারিত্ব। জিবরান ভালোবাসা সম্পর্কে এক জায়গায় বলেন, ভালোবাসা ব্যাখ্যা করার জন্য কোনো শব্দের দরকার হয় না, কারণ ভালোবাসা হল একটা অচঞ্চল প্রার্থনা সংগীত, যা রাতের নীরবতার ভেতরে শোনা যায় এবং সেখানে ধোঁয়াশা ও সব কিছুর জন্য রয়েছে নির্যাস। এবার আসা যাক মূল আলোচনায়।

খলীল জিবরান বিশ্বসাহিত্যাকাশের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তিনি একাধারে কবি, দার্শনিক, ছোট গল্পকার, চিত্রশিল্পী এবং নাট্যকার। জীবন ও জগতের প্রগাঢ় উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ তার রচনাকে অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য দান করেছে। স্বচ্ছ-সাবলীল গতিময়তা ও গীতময় লালিত্যের অবয়বে তাঁর রচনাশৈলী জিব্রানিজম নামে আখ্যা লাভ করেছে। পাশ্চাত্যের প্রসিদ্ধ মনীষী C.F. Bragelon অন্তর্দৃষ্টি, অতীন্দ্রীয় অনুভুতি চেতনা ও প্রজ্ঞার জন্য খলীল জিবরানকে লেবাননের আধুনিক কবি নামে অবিহিত করেছেন।

জিবরানের পিতার নাম খলীল, মাতার নাম কামিলে রাহমী। জিবরানের পিতা তাঁর মাতার দ্বিতীয় স্বামী। কামিলে রাহমী তার প্রথম স্বামী ও পুত্র পিটারসহ অনেকদিন দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে বসবাস করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি দেশে ফিরে এসে পিতা স্টিফের রাহমীর সাথে বসবাস করতে থাকেন। একদিন তিনি পিতার বাগানে গুন গুন করে গান গাচ্ছিলেন। সদা হাস্যময় প্রাণোচ্ছ্বল খলীল তাঁর মধুর কণ্ঠের গানে মুগ্ধ হলেন। উভয় উভয়কে ভালোবাসলেন। পরিণতিতে পরিণয়। তাদের প্রথম সন্তান জিবরান। সুলতানা ও মেরীয়ানা নামে জিবরানের আপন দু’টি বোন ছিল। জিবরানের ধমণীতে প্রবাহিত ছিল পূর্বপুরুষ দুঃসাহসী ফিনিসীয় বণিকদের রক্ত।

জিবরান লেবাননের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ওয়াদী কাদিশা উপত্যকা অঞ্চলের বিশারী নামক গ্রামে ১৮৮৩ সালের ১০ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামী বিশ্বকোষে তাঁর জন্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৬ই জানুয়ারী ১৮৮৩ সাল অথবা ৬ই ডিসেম্বর বিশারীতে জন্মগ্রহণ করেন। বিশারী গ্রামেই জিবরানের শৈশবকাল অতিবাহিত হয়। শিশু জিবরান অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকতেন কাদিশা নদীর বেগবতী স্রোতধারার দিকে। প্রত্যক্ষ করতেন চল-চঞ্চলা রমণীর অবাধ পদচারণা। বিশারী গ্রামের উত্তর পার্শ্বেই সিডার পাহাড়। এটি সমুদ্র সমতল থেকে ছ’ হাজার ফিট উপরে অবস্থিত। শিশু জিবরান তাঁর পিতা খলীলের সাথে ঘুরে বেড়াতেন এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। বিশ্রাম নিতেন ফলন্ত আখরোট, পিচ বা জিজিফা বৃক্ষের নীচে। তৃষ্ণায় তটিনীর ষ্ফটিক স্বচ্ছ পানি পান করতেন। বিশারী গ্রামে সারি সারি সিডার গাছ দেখতে পাওয়া যায়। খ্রীষ্টান ধর্মের অনুসারীদের কাছে এ গাছ অতীব পবিত্র। বাইবেলে আছে— ঈশ্বর স্বর্গোদ্যানে নিজ হাতে এ গাছ বপন করেছেন। লেবানিজরা এ গাছকে বলেন— আরজে রব বা মহা প্রভুর গাছ। কথিত আছে হযরত সোলাইমান সিডার গাছ নিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ নির্মাণ করেন। মিশরীয় বণিকরা নিয়ে যেতেন এই গাছ সে দেশের রাজকীয় প্রাসাদ নির্মাণ কাজের জন্য।

জিবরানের জন্মভূমি বিশারী গ্রাম নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা থাকলেও পার্থিব ঐশ্বর্যে এটি কোনো ক্রমেই সম্মৃদ্ধ ছিল না। তাই অধিবাসীরা খুব স্বচ্ছল জীবনযাপন করত না। খলীল পরিবারও তেমনি আর্থিক অস্বচ্ছলতায় পীড়িত ছিল। দারিদ্র্যের তাড়না থেকে মুক্তি পাওয়ার অভিলাষে ১৮৯৫ ঈসায়ী সনে খলীল পরিবার সাত-সাগর পাড়ি দিয়ে সুদূর আমেরিকায় পাড়ি জমান। জিবরানের বয়স তখন বার বছর। বোষ্টনের এক দরিদ্র এলাকা Chinatown-এ পরিবারটি বসবাস করে। এখানেই জিবরান প্রাথমিক স্কুলে অধ্যায়ন করেন।

১৮৯৮ সালে ৩ আগস্ট তিনি বৈরুত প্রত্যাবর্তন করেন। সেই সময় আরবী ভাষায় তাঁর জ্ঞান ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের। বৈরুতের College de la Sagesse— তিনি যে তিন বছর কাটান তা তাঁর আরবী ভাষার জ্ঞানের অভাব আংশিকভাবে পূরণ করে। ১৯০২ সালে তিনি লেবানন ত্যাগ করে প্যারিস গমন করেন এবং সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে নিউইয়র্ক যান। ১৯০৩ সালের জানুয়ারী মাসে জিবরান যখন বোষ্টনে অবস্থান করছিলেন সেই সময় একটি দুর্ঘটনায় তাঁর বোন মেরীয়ানা ব্যতীত পরিবারের সবাই মৃত্যুবরণ করে।

১৯০৪ সালে জিবরানের বয়স যখন ২১ বছর তখন তিনি ২০ টিরও বেশী চিত্রকর্ম আঁকেন এবং সেগুলো প্রদর্শনীর ইচ্ছায় ২০ ডলার ধার করেন। কিন্তু কোথাও সুবিধা মতো কোনো ষ্টুডিও পেলেন না। অবশেষে বোষ্টনের এক ভাবুক ও স্বাধীনচেতা আলোকচিত্রশিল্পী খলীল জিবরানের চিত্র প্রদর্শনীর জন্য তার ষ্টুডিও উন্মুক্ত করে দিলেন। প্রদর্শনীতে বেশ লোকের সমাগম হল। কেউ প্রশংসা করল, কেউ সমালোচনা করল, আবার কেউ বা হাসল। কিন্তু কেউই কোনো ছবির দাম জিজ্ঞেস করল না, বা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করল না। অথচ দরিদ্র পীড়িত সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আনতে বা ধার শোধ করতে যুবক চিত্রশিল্পীর জন্য এটা অত্যাবশ্যক ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। কয়েকদিনের মধ্যে প্রদর্শনীর ষ্টুডিওতে আগুন লেগে সব ছাই হয়ে গেল। আর সাথে সাথে জিবরানের সমস্ত শিল্পকর্মও।

প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দরিদ্র শিল্পীকে দরিদ্রতর পর্যায়ে নিয়ে যায়। আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান না হলেও এই উপলক্ষ্যে তিনি এমন কিছু পেয়েছিলেন যা তাঁর আত্মিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের পথ প্রশস্ততর করেছিল এবং তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আশা নিরাশার দোলায় দোদুল্যমান ষ্টুডিওর এক কোণে বসে থাকা সংকুচিত শিল্পী লক্ষ্য করলেন— এক সুন্দরী মহিলা গভীর মনোনিবেশ সহকারে ছবিগুলো দেখছেন। জিবরান এগিয়ে গেলেন— ছবিগুলির উপমা, প্রতীক এবং প্রতিপাদ্য বোঝাতে চেষ্টা করলেন। উভয় উভয়ের ভালো লাগল। তাঁদের এ পরিচয় অনন্যসাধারণ বন্ধুত্বে পূর্ণতা লাভ করল। ইনিই মেরী এলিজাবেথ হাসকেল। জনৈক জীবনীকার লিখেছেন— “Her self contained soul proved to be a spiritual and moral refuge and anchor for Gibran. আমেরিকার মহিলা কবি বারবারা ইয়ং ১৯২৫ সাল পর্যন্ত জিবরানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে ছিলেন। তিনি বলেছেন— যে-কোনো লেখা জিবরান মেরী এলিজাবেথ হ্যাসকেলকে না দেখিয়ে প্রেসে দিতেন না।

চিত্র প্রদর্শনীতে ব্যর্থ হয়ে জিবরান আরবী পত্রিকার আল-মুহাজিরের সাথে পত্র-যোগাযোগ শুরু করেন। পত্রিকাটি তখন নিউইয়র্কে আল-গুরায়্যিব সম্পাদনা করতেন। এ সময় জিবরান মেরী এলিজাবেথ হ্যাসকেল-এর মানব সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত হন। এর আগে জিবরান আরবীতে কবিতা গল্প লিখতেন। মেরীর উৎসাহে তিনি ইংরেজী ভাষায় সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। মেরী খলীল জিবরানকে চিত্র শিল্পে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাঁকে নিজ খরচে প্যারিসে পাঠালেন। জিবরান ১৯০৮ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ তিন বৎসর Academic Jullian এ প্রখ্যাত শিল্পাচার্য ও ভাস্কর অগাস্ত রঁদার তত্ত্বাবধানে চিত্রশিল্পে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ইসলামী বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, তিনি রডিন-এর ছাত্র ছিলেন। প্যারিসে থাকা কালে তাঁর হৃদয়ে বিচিত্রতর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার উন্মেষ ঘটেছিল। বস্তুত জিবরানের চিত্রশিল্পের গতিময় বিকাশ প্যারিসেই স্বতঃস্ফূর্ত পরিপূর্তি পেয়েছিল। তাঁর বিদ্রোহী বিবেকের বিকাশ ও প্রকাশে চিত্রশিল্প ছিল তাঁর অন্যতম মাধ্যম। সমালোচক যথার্থই বলেছেন— তুলি ছিল তাঁর বল্লম, কলম ছিল তাঁর তরবারী। Song of Innocence এর কবি ও Spiritual drawings-এর শিল্পী উইলিয়াম ব্লেকের প্রতিভার সাথে তাঁর সাজুয্য ও সমতা লক্ষ্য করে ফরাসী মনীষী আঁরিদ্য বোফর্ত জিবরানকে বিশ শতাব্দীর উইলিয়াম ব্লেক নামে আখ্যায়িত করেছেন।

প্যারিসে আরব রাজনৈতিক সম্মেলনের পর তিনি বোষ্টনে ফিরে আসেন এবং আল-হালাকা আঞ্চয-যাহবিয়্যাঃ নামে একটি সংস্থা গঠন করেন। পরে তিনি নিউইয়র্ক থেকে যান এবং Aria-এর সাথে আস-সাঞ্চইহ এর স্থলাভিষিক্ত আল-ফুনুন নামক আরবী সাময়িকীর সম্পদনা করেন। তখন তিনি আমেরিকায় সাহিত্যের মাধ্যমে নিজের জন্য পথ তৈরীর চেষ্টায় অবতীর্ণ হন। Seven Arts সাময়িকীতে এর সূচনা। একই সময় তিনি তিনটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন, তাঁর দর্শনমূলক আরবী কবিতা আল মাওয়াকিব এবং তাঁর প্রথম ইংরেজী সাহিত্যকর্ম ‘ঝবন’ (Madman) প্রকাশ করেন। এই সময়ের পরবর্তী তাঁর আরবী রচনাসমূহ আল-আওয়াসিফ এবং আল-বাদাই ওয়াত-তারাইফ গ্রন্থদ্বয়ে সংগৃহীত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত আর-রাবিতাতে আল-কালামিয়্যাঃ (Pen club) নামক সাহিত্য সংঘ ১৯২০ সনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই সাহিত্য সংঘ সমসাময়িক আরবী সাহিত্যের উপর নিশ্চিত প্রভাব বিস্তার করে। এরপর থেকে জিবরানের আরবী রচনাবলীর সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে এবং তিনি ইংরেজীতে The Fore runner, The Prophet, Sand and Foam, Jesus, Son of Man, The Earth gods প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে দু’টি বই— The Wanderer এবং Garden of The Prophet । খলীল জিবরানের আরবী শ্রেষ্ঠ রচনাগুলো হল— আরায়েশ আলমুরুজ (উপত্যকার মৎসকন্যা), দামাহওয়া ইবতিসামাহ (হাসি ও অশ্রু), আল আরওয়াহ আল মুতামারিদা (বিদ্রোহী বিবেক), আল-আজনিহা আল মুতাকাছিরাহ (ভাঙ্গা পাখা), আল-আওসিফ (ঝড়), আল-মাওয়াকিব (মিছিল) ইত্যাদি।

কাজের খাতিরে জিবরান জীবনের দুই তৃতীয়াংশ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন। কিন্তু ছেলেবেলায় স্বপ্ন দেখার দিনগুলি ভুলতে পারেন নি। শেষ দশকের পত্রাবলীতে স্বদেশ প্রত্যবর্তনের জন্য তাঁর গভীর আকুলতা এবং তিনি যা বর্ণনা করতে পারেন নি সেই “winged words”-এর জন্য অবর্ণিত আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। ইংরেজীতে লিখা জীবনের শেষ চিঠিতে জিবরান তাঁর আকুল বাসনা এভাবে ব্যক্ত করেছেন— I want to go to the Middle East, to Lebanon, to Bcherri to Mar Sarkis, that hermitages carved in the rock and overlooking the most astonishing sight that eye could ever see of the whole Valley তিনি আরও লিখেছেন— আমার অতৃপ্ত অন্বেষা হচ্ছে new life in the heart of nature among the golden fields of whets the green meadows, the flocks of sheep being led to pasture, roaring falls and the rising mist reflecting in the rays of the sun.

সুদূর আমেরিকাতে প্রবাস জীবনযাপন করলেও কবি তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিকে ভুলতে পারেন নি। ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট গ্রাম বিশারীতে তাঁর সমগ্র উপলব্ধিতে চিরজাগরুক ছিল। দেশের জন্য তাঁর মন কেঁদে ফিরত। তাই তিনি দেশে ফিরলেন মহাপ্রয়াণের পর। যে বৈরুতের সমাজ শাসকেরা তাঁর বই পুড়িয়ে দিয়েছিল, অনুপস্থিতিতেই তাঁকে সমাজচ্যুত করেছিল, তাঁর মরদেহ বহণকারী জাহাজ বন্দরে ভিড়লে, সারা লেবাননের লোক যেন বন্দরে ভেঙ্গে পড়ল। মালায় মালায় সয়লাব হয়ে গেল। আবাল-বৃদ্ধ বণিতা হৃদয়ের উচ্ছ্বাস ও উষ্ণতা দিয়ে তাঁকে বরণ করল। লেবানন তার প্রিয় পুত্রকে বীরোচিত সংবর্ধনা জ্ঞাপন করল। ছোট বোন মেরিয়ানা বিশারী গ্রামের মার সারকিস গীর্জাটি কিনে নিলেন। কবির অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী জিবরানকে সেখানে সমাহিত করা হল। সেখানে তিনি অনন্ত নিদ্রায় শায়িত।

জিবরান সাহিত্য শিল্পের চর্চায় সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। অসহনীয় দুঃখ দৈন্য তাঁকে দমাতে পারে নি। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি, বিশ্ব-সাহিত্যে জিব্রানিজম নামে এক অনন্য রচনাশৈলীর উদ্ভব। তাঁর সাহিত্য বৈভব যুগে যুগে মানুষকে সম্মৃদ্ধতর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখিকা : প্রাবন্ধিক

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর