thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

তীরে ডুবলো তরী

২০১৮ মার্চ ১৮ ২২:১৪:২৪
তীরে ডুবলো তরী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: এক বলে ৫ রান দরকার। সেই বলে কার্তিকের এক ছক্কা। শেষ হয়ে গেল স্বপ্ন ! ৮ বলে ২৯ রানের এক ইনিংসে বাংলাদেশের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।

অমন ডেলিভারী না দিলেই কী হতো না ? রুবেল কেন ১৯তম ওভারে ২২ রান দিলেন? কিংবা এতগুলো রান আউটের একটা সুযোগও কাজে লাগাতে পারলো না বাংলাদেশ? কিংবা ব্যাটিংয়ে কেন সাকিব রান আউট হয়ে গেলেন। কেন সাব্বিরের ভুলে মাহমুদ উল্লাহ রান আউট। আহ জিতেই তো গিয়েছিলো বাংলাদেশ। এরকম অনেক আফসোস আর ইস ওশ শব্দে টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে আসতে হলো বাংলাদেশী দর্শকদের । এমন আফসোস আরো কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে বাংলাদেশকে। জয় পরাজয়ের এমন দ্বৈরথ তো কম দেখেনি ক্রিকেট দুনিয়া। তাই বলে বার বার ভারতের কাছে প্রায় একই ভাবে?

২০০৯ সালের জানুয়ারির সেই বিপন্ন বিকেল। কিংবা ৯ বছর পর এই জানুয়ারির হতাশার রাত। ২০১২ ও ২০১৬ সালে দুটি এশিয়া কাপের ফাইনালে হারের ক্ষত। ফাইনালে একটির পর একটি হারের হতাশার স্মৃতিতে যোগ হলো নতুন অধ্যায়। আবার কাছে গিয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণায় পুড়ল বাংলাদেশ। তীরে ডুবলো তরী। শেষ বলে ছক্কায় ভারতকে ফাইনাল জেতালেন দিনেশ কার্তিক।

রবিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের দেয়া ১৬৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে জয় তুলে নিলো ভারত।

ফাইনাল ম্যাচ হলে এমনই হতে হয়! একটি ম্যাচ জমাতে যা দরকার হয়, সবই যেন ছিল। ১৬৭ রানের লক্ষ্য, ফাইনালের মতো চাপের ম্যাচে যেন আদর্শ। ১৮০ কিংবা ২০০ হলে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকত, আবার ২০ রান কম হলে ভারত। উত্তেজনা জিইয়ে রাখতেই যেন বাংলাদেশ ঠিক মাপে মাপেই রানটা করেছিল!

ভারতের রান তাড়ার প্রতিটি পদক্ষেপও যেন ঠিক সেই মাপেই হলো। ঝোড়ো শুরুতে মাত্র ১৫ বলেই ৩২ রান ভারতের। বাংলাদেশের কাঁধগুলো মাত্র ঝুলতে শুরু করেছিল, এমন অবস্থায় আউট ধাওয়ান! রানটা নড়ার আগেই সুরেশ রায়না আউট। ৩২ রানে ২ উইকেট হারাল ভারত। বাংলাদেশই তো এগিয়ে গেল, তাই না?
ভুল, রোহিত শর্মা যে উইকেটে ছিলেন। চার-ছক্কা মারতে লাগলেন নিজের ইচ্ছা মতো, অন্য প্রান্তে তাঁকে অনুসরণ করলেন লোকেশ রাহুল। ১০ম ওভারেই তাই লক্ষ্যের অর্ধেক তুলে ফেলল ভারত। ২ উইকেটে ৮৩ রান, পরিষ্কার এগিয়ে ভারত। এমন অবস্থায় ওভারের তৃতীয় বলে রুবেলের বাউন্সার। হুক করতে গিয়ে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়লেন রাহুল। জমে উঠল ম্যাচটা।
ম্যাচটা তবু জমছিল না। ওই যে রোহিত যে আউটই হচ্ছিলেন না। ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি পেয়ে গেছেন, ইনিংসের ১০ ওভারও পেরিয়ে গেছে। ইনিংসের দ্বিতীয় ভাগেই যে বেশি ভয়ংকর এই ওপেনার। ১৪তম ওভারে তাই ম্যাচটা জমালেন নাজমুল ইসলাম। তাঁর সৃষ্ট নাগিন নাচটা বিখ্যাত হয়ে গেলেও পুরো টুর্নামেন্টে নাজমুলের উদ্‌যাপন দেখা যাচ্ছিল না। আগের চার ম্যাচে যে একটা উইকেটও পাননি! ফাইনালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা তাঁর ভাগ্যে ছিল বলেই হয়তো। লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহর কাছে ধরা পড়লেন রোহিত। ভারত তখন জয় থেকে ৬৯ রান দূরে, হাতে ৪০ বল।
এভাবেই চলল ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত। এক মুহূর্তে মনে হচ্ছে ভারতই জিতবে, পরের মুহূর্তেই বাংলাদেশ! সেটা বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন মোস্তাফিজ। ৩ ওভারে ৩৫ রান দরকার ছিল ভারতের। মোস্তাফিজ এলেন, প্রথম ৪ বলই ডট! পরের বলে ১ রান। শেষ বলে আউট মনিষ পান্ডে। ম্যাচ তো বাংলাদেশের!
কিন্তু রুবেলের ৩ বলেই আবারও ভারত ফেবারিট! প্রথম বলেই ছক্কা, পরের বলে চার, আবার ছক্কা! ১২ বলে ৩৪ রান থেকে ৯ বলে ১৮ রানের দূরত্বে ভারত। রুবেলের ওভারে এল ২২ রান। শেষ ওভারে মাত্র ১২ রান লাগবে ভারতের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ঠিক ১২ রানই দরকার ছিল। সমস্যা একটাই, বাংলাদেশের মূল বোলারদের আর কারও ওভার বাকি নেই!
সৌমের প্রথম বলটা ওয়াইড। ৬ বলে ১১ রান। ডট, ১। ৪ বলে ১০ রান! আবারও ১, ৩ বলে ৯ রান। চতুর্থ বলে দুর্ভাগ্যক্রমে ৪, ২ বলে ৫ রান। পরের বল, উড়িয়ে মারলেন শংকর। দুই ফিল্ডার ধাক্কা খেলেন, তবে বল হাতছাড়া হলো না। আউট!
১ বলে ৫ রান দরকার ভারতের। বাংলাদেশের দরকার ৪-এর নিচে যে কোনো কিছু! এমন চাপ নিয়ে কখনো কি বল করেছেন সৌম্য? বাংলাদেশের কোনো বোলার?!

১৬৭ রান তাড়ায় ভারতকে এগিয়ে নিয়েছিল অধিনায়ক রোহিত শর্মার ৫৬ রানের ইনিংস। মাঝে মনিশ পান্ডে, লোকেশ রাহুলরা চেষ্টা করেছেন ঝড় তোলার। কিন্তু প্রতিবারই ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। শেষটায় পেরে উঠল না কেবল কার্তিকের কাছেই।

ম্যাচের শুরুটায় বাংলাদেশের ইনিংস আলাদা করা যায় দুটি ধাপে। পাওয়ার প্লের প্রথম ৩ ওভারে সম্ভাবনার আলো, পরের তিন ওভারে হতাশার আঁধার।

তামিম ইকবাল ও লিটন দাস প্রথম ৩ ওভারে তোলেন ২৬ রান। কিন্তু পরের ৩ ওভারে ১৪ রান আসে ৩টি উইকেট হারিয়ে।

ওয়াশিংটন সুন্দরের জবাব এদিনও পাননি লিটন। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে ফেরেন ১১ রানে। পরের ওভারে আক্রমণে যুজবেন্দ্র চেহেল, প্রথম ওভারেই জোড়া ধাক্কা।

লেগ স্পিনারকে শুরুতেই চাপে ফেলতে গিয়ে তামিম উল্টো চাপে ফেলেন দলকে। আকাশছোঁয়া বলটি সীমানায় দারুণভাবে হাতে জমান শার্দুল ঠাকুর। ওভারের শেষ বলে বাজে শটে শেষ সৌম্য সরকার।

টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে নতুন করে চেনানোর সিরিজের শেষটায় নিপুন তুলির আঁচড় দিতে পারেননি মুশফিক। বিভ্রান্ত হয়েছেন চেহেলের চাতুর্যে। মুশফিককে বেরিয়ে আসতে দেখে অনেকটা বাইরে পিচ করিয়ে গুগলি করেন চেহেল। ১২ বলে ৯ রানে ফেরেন মুশফিক।

আরেক পাশে সাব্বির তখন অনেকটাই থিতু। শুরুতে অনেক বেশি শট খেলতে গিয়ে টাইমিং পাননি ঠিকমত। পরে খুঁজে পান ছন্দ। আগের ম্যাচের নায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে দেখা গেল একই স্ফুলিঙ্গ। বাংলাদেশের ইনিংসটি একটু গতি পায় এই জুটিতে।

আশা জাগানিয়া জুটির সমাপ্তি দৃষ্টিকটু রান আউটে। এক প্রান্তে পরস্পরকে দেখে হতভম্ব দুজন। ১৬ বলে ২১ করে ত্যাগ স্বীকার করে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।

এরপর আরেকটি ছোট জুটি। এবারও সম্ভাবনার অপমৃত্যু রান আউটের হতাশায়। সাকিব আল হাসানের বিদায় ৭ রানে।

সাব্বির অবশ্য নিজের কাজটা করছিলেন দারুণভাবে। সাকিব আউট হওয়ার আগে দুটি ছক্কা মারেন বিজয় শঙ্করকে। ছক্কায় ওড়ান দারুণ কিপটে সুন্দরকেও। ৩৭ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ।

টি-টোয়েন্টিতে এটি তার চতুর্থ ফিফটি। প্রথম ১৬ ইনিংসে করেছিলেন তিন ফিফটি। মাঝে ২১ ইনিংস বিরতির পর আবার পেলেন পঞ্চাশের দেখা।
প্রয়োজন ছিল ফিফটির চেয়ে আরও বেশি কিছু। সাব্বিরও ছুটছিলেন সেই পথেই। তবে শেষ করে আসতে পারেননি। শেষের আগের ওভারে আউট জয়দেব উনাদকাটের স্লোয়ারে। ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৭।
বিবর্ণ ওই ওভারের পর শেষের আলোর ছটা মিরাজের ব্যাটে। শার্দুল ঠাকুরের করা শেষ ওভারে দুই চারের মাঝে মারেন বিশাল এক ছক্কা। ওই ওভারের ১৮ রান বাংলাদেশকে দেয় লড়ার টনিক।

লড়াই হয়েছে ঠিকই। কিন্তু লড়াইটুকু মনে রাখে কজন! শেষটা যে আবারও তেতো।

শুক্রবার এই মাঠেই স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে ঘরের দলকে বিদায় করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এদিন ম্যাচ জুড়েই প্রায় ২৫ হাজার দর্শক গগন বিদারী চিৎকারে সমর্থন দিয়ে গেল ভারতকে। মনেই হয়নি ফাইনালে নেই স্বাগতিক দল। ভারতীয় দলও সেটির কৃতজ্ঞতা জানাল জয়ের পর মাঠ প্রদক্ষিণ করে।

বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম তখন ডুবে হতাশার আঁধারে। সবুজ পোশাকের মানুষগুলো যেন নীল হয়ে আছে পঞ্চম ফাইনাল হারের যন্ত্রণায়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৬/৮ (তামিম ১৫, লিটন ১১, সাব্বির ৭৭, সৌম্য ১, মুশফিক ৯, মাহমুদউল্লাহ ২১, সাকিব ৭, মিরাজ ১৯*, রুবেল ০, মুস্তাফিজ ০*; উনাদকাট ২/৩৩, সুন্দর ১/২০, চেহেল ৩/১৮, শার্দুল ০/৪৫, শঙ্কর ০/৪৮)

ভারত: ২০ ওভারে ১৬৮/৬ (রোহিত ৫৬, ধাওয়ান ১০, রায়না ০, রাহুল ২৪, মনিশ ২৮, শঙ্কর ১৭, কার্তিক ২৯*, সুন্দর ০*; সাকিব ১/২৮, মিরাজ ০/৩১, রুবেল ২/৩৫, নাজমুল অপু ১/৩২, মুস্তাফিজ ১/২১, সৌম্য ১/৩৩)

ফল: ভারত ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: দিনেশ কার্তিক

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মার্চ ১৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর