thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

বীরপ্রতীক কাকন বিবি আর নেই

২০১৮ মার্চ ২২ ০৯:৩৬:০৩
বীরপ্রতীক কাকন বিবি আর নেই

সিলেট প্রতিনিধি : একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের দুর্ধর্ষ গুপ্তচর, পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে একাধিকবার বন্দি ও নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা কাকন বিবি বীরপ্রতীক না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

বুধবার (২১ মার্চ) রাত ১১টা ৫ মিনিটে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. দেবব্রত রায় বলেন, হাসপাতালে তিনি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল ইসলামের অধীনে ভর্তি হন এবং আইসিইউতে ডা. সব্যসাচী রায়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বীরপ্রতীক কাকন বিবিকে গত সোমবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।

বুধবার তার চিকিৎসার জন্য ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। তবে রাতেই তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।

শতবর্ষী কাকন বিবি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। নতুন করে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে চিকিৎসকরা জানান।
মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায়। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হবে।

গত বছরের ২১ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছিলেন কাকন বিবি। কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
কাকন বিবি ১৯৭১ সালে তিন দিনের কন্যা সন্তান সখিনাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান।

মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি রাজাকারদের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হন। তিনি কেবল মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেননি, সেই সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নেন।

১৯৭১ এর জুনে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন কাঁকন বিবি। তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন অমানুষিকভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাঁকে। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখনই কাঁকন বিবি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন। জুলাই মাসে তার সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের।

মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন। তার ওপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড়ের।
কাকন বিবি শুরু করেন পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করার। তার সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে সফল হন।

গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন তিনি। এবার একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারেরা তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে মৃত ভেবে অজ্ঞান কাকন বিবিকে পাকি বাহিনী ফেলে রেখে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে বালাট সাব-সেক্টরে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় ফিরে যান বাংলাবাজারে। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নেন।

মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর তাকে প্রশিক্ষণ দেন। এর পরবর্তীকালে তিনি সম্মুখযুদ্ধ আর গুপ্তচর উভয় কাজই শুরু করেন। কাকন বিবি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/মার্চ ২২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর