thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

৩ দিনের মধ্যে হোসনে আরার লাশ দাফনের নির্দেশ

২০১৮ এপ্রিল ১৬ ২০:২২:২০
৩ দিনের মধ্যে হোসনে আরার লাশ দাফনের নির্দেশ

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আইনি জটিলতায় চার বছরের বেশি সময় ধরে মর্গে থাকা হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ ইসলামী রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।রায়ে তিন দিনে মধ্যে হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ দাফন করতে বলা হয়েছে।

সোমবার (১৬ এপ্রিল) রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরের পর ১৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ ইসলামী রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রায়ের কপি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে দাফন করতে বলা হয়েছে।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে দাফন সম্পন্ন করতে হবে। দাফনের আগে হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) লাশ তার বাবার পরিবারকে দেখার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে হোসনে আরার (নিপা রানী) বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সমীর মজুমদার, শ্বশুরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা।

মামলার বিবরণে জানা যায়, আইনি দ্বন্দ্বে চার বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালের মর্গে আছে হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ। এতদিনেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ থেকে মরদেহটি হাসপাতালের মর্গে আছে। ভালোবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার কারণে মরদেহ নিয়ে এমন আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে ছেলে ও মেয়ের পরিবার। মামলাটি বিচারিক আদালত ঘুরে হাইকোর্টে আসে।

রংপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারেনি।

জানা যায়, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বমুনিয়া গ্রামের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে নিপা রানী রায়ের (২০) সঙ্গে একই উপজেলার পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন ফরিদ লাইজুর (২৩) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে যান। এরপর নিপা রানী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ও মোছা. হোসনে আরা লাইজু নাম নেন। নীলফামারী নোটারি পাবলিক ক্লাবের মাধ্যমে অ্যাফিডেভিটে ২ লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমায়ুন ফরিদ লাইজুকে বিয়ে করেন তিনি।

অক্ষয় কুমার রায় ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ের সকল কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি দেন হোসনে আরা (নিপা রানী)। পরে আদালত সার্বিক বিবেচনায় অপহরণ মামলাটি খারিজ করে দেন।

মেয়ের বাবা মামলার খারিজ আপিলে তার মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিষ্কবিকৃত (পাগল) দাবি করে আদালতে কাগজপত্র দাখিল করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

পরে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি হুমায়ূন ফরিদ ওরফে লাইজু বিষ পান করে আত্মহত্যা করেন। এরপর লাইজুর আত্মহত্যার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে মেয়ের বাবা মেয়েকে (নিপা রানী ওরফে হোসনে আরা লাইজু) নিজ জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে বাবা তার বাড়িতে নিজ জিম্মায় রাখেন। তবে মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিস্কবিকৃত (পাগল) দাবি করে আদালতে আগে যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল সেটি চলমান থেকে যায়।

২০১৪ সালের ১০ মার্চ কীটনাশক পান করেন নিপা রানী। পরে তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান। ডোমার থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে মেয়েটির মরদেহ রাতেই উদ্ধার করে। পরদিন (১১ মার্চ) মর্গে মেয়েটির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়।

এরপর হোসনে আরা লাইজুকে (নীপা রানী) পুত্রবধূ দাবি করে তার শ্বশুর জহুরুল ইসলাম ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক দাফন এবং বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মেয়ের সৎকারের জন্য নীলফামারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন।

আদালতে উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে হোসনে আরার (নিপা রানী) মরদেহ তার শ্বশুরের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। ফলে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের হিমঘরেই থেকে যায়।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এপ্রিল ১৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর