thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

এরদোগান বিজয়ের পথে

২০১৮ জুন ২৫ ০১:০২:৫২
এরদোগান বিজয়ের পথে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশাল বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তুরস্কের ডেইলি আল সাবাহ পত্রিকা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। তাতে দেখা গেছে এরদোগান পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুহারেম ইঞ্চ পেয়েছেন ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। অন্য চার প্রার্থীর সবার প্রাপ্ত ভোট ৮ শতাংশের নিচে।

তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিড্টে নির্বাচনে প্রার্থীদের কেউ নূন্যতম পঞ্চাশ শতাংশ ভোট না পেলে, নির্বাচন গড়াবে দ্বিতীয় দফায়। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন দ্বিতীয় দফায়। প্রথম দফা নির্বাচনের পনের দিন পর অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফা নির্বাচন। যদিও ইতোমধ্যেই পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে গেছেন দেশটির তুমুল জনপ্রিয় নেতা এরদোগান। তাই দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।

এদিকে একই সাথে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনেও বড় ব্যবধানে জয় পেতে যাচ্ছে এরদোগানের দল জাস্টিস এন্ড ডেভলপমেন্ট (একে) পার্টি। পার্লামন্টে নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্রান্ত ফলাফলে একে পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস এলায়েন্স অর্ধেকের বেশি আসনে(৩৪৭) জয়লাভ করেছে। এর মধ্যে এরদোগানের দল একে পার্টি এককভাবেই পেয়েছে ২৯১টি আসন। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স পেয়েছে ১৮৭টি আসন।

এই প্রথমবারের মতো তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন একসাথে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ৮টায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর চলছে গণনা। প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্ট মিলিয়ে গড়ে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ। তুরস্কের রাস্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র (টিআরটি)’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পরেছে ৮৬.৮২ শতাংশ আর পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৭ শতাংশ।

রোববার তুরস্কের ৮১ টি প্রদেশে একযোগে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এরআগে গত ৭ জুলাই থেকে বিদেশে অবস্থানরত এবং প্রতিবন্দীদের জন্য বিশেষ ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

ভোট দেয়ার পর এরদোগান
তুরস্কে একযোগে চলছে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। রোববার সকালে ইস্তাম্বুলের একটি কেন্দ্রে ভাট দিয়েছে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। এসময় তার সাথে ভোট দিতে আসেন ফার্স্টলেডি আমিনা এরদোগান। ইস্তাম্বুলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এরদোগানের। জাতীয় রাজনীতিতে আসার আগে এই নগরীর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক দিন। এখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের জন্য তার বসবাস রাজধানী আঙ্কারায় হলেও, ইস্তাম্বুলেরই ভোটার তিনি। ভোট দেয়ার সময় পরিবারের আরো কয়েকজন সদস্যও তার সাথে ছিলেন।

শনিবার সকালে ইস্তাম্বুলের উসকুদার এলাকার সাফেত সেবি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডি।ভোট দেয়া পর এরদোগান সাংবাদিকদের জানান, সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পড়বে বলে তিনি আশাবাদী। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ভোটারদের কেন্দ্রে আসার এই হার বলে দিচ্ছে তুরস্কের গণতন্ত্র কতটা অগ্রসর হয়েছে এবং এখানকার গণতন্ত্র কতটা পরিপক্ক হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক বিপ্লব উপভোগ করছে তুরস্ক।’

এরপর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, এই নির্বাচনের পর নতুন যে সরকার পদ্ধতি চালু হবে তার মাধ্যমে সমসাময়িক সভ্যতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছতে সক্ষম হবে তার দেশ।
নির্বাচনের পর আরো কয়েক ঘণ্টা ইস্তাম্বুলে অবস্থান করার পর তার রাজধানী আঙ্কারায় ফিরে যাওয়ার কথা।তুরস্কের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকাল পাঁচটা (বাংলাদেশ সময় রাত আটটা) পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়।

নির্বাচিত হলে যে ক্ষমতা পাবেন

প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন এরদোগান। তবে এবার সময় একটু অন্যরকম। ভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত প্রেসিডেন্টের জন্য বেশ কিছু নতুন ক্ষমতা বলবৎ হবে। এ নির্বাচনে এরদোগানের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। পুনর্বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যে ক্ষমতা পাবেন এরদোগান-

১. মন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্টসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা ২. দেশের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা ৩. জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করতে পারবেন তিনি।

নির্বাচনে ছয়জন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রয়েছেন। কেউ যদি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পান, তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন। তবে কেউই যদি ৫০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে না পারেন, ৮ জুলাই দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের তুরস্কের নির্বাচন মূলত দুটি জোটে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি পিপলস অ্যালায়েন্স। এখানে আছে এরদোগানের একে পার্টি, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ও গ্রেট ইউনিটি পার্টি। অপরটি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স। এছাড়া চারটি দল আছে- শক্তিশালী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি, ফ্যালিসিটি পার্টি, আই পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। নির্বাচনে একটি বড় সুবিধা হল, এরদোগান পিপলস অ্যালায়েন্সের একক প্রার্থী। অন্যরা নিজ নিজ পার্টি থেকে দাঁড়িয়েছেন। রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রার্থী মুহাররেম ইন্সে এরদোগানের জন্য হুমকি হতে পারেন।

এই মুহূর্তে এরদোগানের পক্ষে-বিপক্ষে ৫৫-৪৫ শতাংশ। গত নির্বাচনেও তিনি সামান্য ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাই সঙ্গত কারণেই এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে, এরদোগান ও তার আন্তর্জাতিক পলিসি থাকবে, না নুতনভাবে অন্য কিছু হবে। অনেক জেনারেল, পুলিশ অফিসার, সিভিল সার্ভিসের লোকজন ও সাধারণ সরকারি কর্মচারী দেশ ছেড়েছেন। তাদের শক্তি কতটুকু তাও পরিস্ফুট হবে এই নির্বাচনে, মানুষ ইসলাম না সেকুলারিজম চায় তাও নির্ধারিত হবে এবার।

দেশের মানুষ কি সত্যিই পরিবর্তন চায়, তার ভোট হবে এবার। এরদোগান ও তার দল আবার নির্বাচিত হলে তুরস্কে নতুন সিস্টেম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। দেশে ইসলামিকায়ন অভিযান জোরদার হবে। এরদোগান চান, তার রাজনৈতিক কর্মসূচি সঠিক কিনা, তা জনগণ চূড়ান্তভাবে নিরূপণ করুক। অবশ্য জনগণ এপ্রিল ২০১৭ সালে রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তার প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন।

এরদোগান ভিশন ২০২৩-এর রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের সেরা ১০টি আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের মধ্যে স্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে যোগাযোগ, কৃষি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে ইতিমধ্যে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। আর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিশ্র“ত উন্নয়ন কর্মসূচি শেষ করতে চান। বিরোধী দল এরূপ বিস্তারিত কোনো উন্নয়ন কর্মসূচি দিতে পারেনি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন২৫.২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর