thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে

২০১৮ জুলাই ১৭ ১৮:৫৭:৪৭
শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে

ঢাবি প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সামিনা লুৎফা এসব কথা বলেন।

শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাবির নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে সামিনা লুৎফা বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী করেছে। কিন্তু যখন তারা ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হলো, তখন শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর যখন হামলা হয়েছে, তখন আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমরাও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। আমাদের বিভিন্ন ব্লেম দেওয়া হয়েছে, গালাগাল দেওয়া হয়েছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরাই শুধু নয়, আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী প্রমুখ।

পরে সংবাদ সম্মেলনে সামিনা লুৎফা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে নিপীড়নবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কর্মসূচিগুলো হলো- আগামী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ; ২৩ জুলাই কলাভবনের সামনের বটতলায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছে শিক্ষক লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অবিলম্বে পত্র প্রেরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা রক্ষা, অ্যাকাডেমিক মান সমুন্নত রাখা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের উদ্যোগে যথা শিগগিরই স্মারকলিপি প্রদান।

গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সামিনা লুৎফা বলেন, ‘ছাত্রলীগ কর্তৃক শহীদ মিনারে লাঞ্ছনার শিকার আমরা পাঁচজন শিক্ষক আজকেই শিক্ষকদের লাঞ্ছনা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে অবহিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দেব।’

শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের হামলা চালানো প্রসঙ্গে অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, ‘শহীদ মিনারে সমাবেশের পরে হামলার বিষয়ে আমরা যখন প্রক্টরের সাথে যোগাযোগ করি, তখন আমাদেরকে বলা হলো আমরা কেন সমাবেশ করার আগে অনুমতি নিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩-এর অধ্যাদেশের কোথাও ক্যাম্পাসে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নিতে হবে, এমনটা বলা আছে বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরা সমাবেশ শুরু করার আগে আরো একটি গ্রুপ সেখানে সমাবেশ করে। তাদের সমাবেশ করার জন্য কোনো অনুমতি ছিল বলে মনে হয় না।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের আগে আমরা প্রক্টরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হামলা ও লাঞ্ছনার পরে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।’

শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনে শিক্ষকদের কোনো ইন্ধন নেই উল্লেখ করে তানজীমউদ্দিন খান আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্বাধীন। তাই যার ইচ্ছা হবে সে ক্লাস করবে, যার ইচ্ছা হবে না, সে করবে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। তাদের ক্লাস বর্জনে আমরা কোনো সমর্থন বা ইন্ধন দিচ্ছি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিকে অভিযুক্ত করে সংবাদ সম্মেলনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘ছাত্রলীগ কর্তৃক লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আমাদের খোঁজ নেয়নি। উল্টো প্রক্টর আমাদের বিভিন্ন ব্লেম দিচ্ছেন। যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, তারা ছাত্রলীগের গুণ্ডা বাহিনী। তারা কোথায় পড়াশোনা করেছে তা জানি না। তাদের ভাষা খুবই খারাপ। ছাত্রলীগ তাদের ঐতিহ্য জানে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে ছাত্রলীগ এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যদি এখনই কিছু করা না যায়, তবে ছাত্রলীগের এমন গুণ্ডামি থামানো যাবে না।’

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/জুলাই ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর