thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

বড়পুকুরিয়া খনি থেকে ২২৭ কোটি টাকার কয়লা ‘গায়েব’

২০১৮ জুলাই ২১ ২১:৩২:৫০
বড়পুকুরিয়া খনি থেকে ২২৭ কোটি টাকার কয়লা ‘গায়েব’

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনির ইয়ার্ড থেকে প্রায় ২২৭ কোটি টাকা বাজারমূল্যের একলাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দুই জনকে প্রত্যাহার এবং আরও দুই জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই জন হলেন–বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলাম। একইসঙ্গে খনির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে সিরাজগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে বদলি করা হয়েছে। পাশপাশি খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। আর তার এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে কয়লা খনি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) কামরুজ্জামানকে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সূত্র জানায়, ইয়ার্ডে বর্তমানে কয়লা থাকার কথা প্রায় দেড় লাখ টন। কিন্তু মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টন কয়লা আছে। অর্থাৎ একলাখ ৪২ হাজার টন কয়লার কোনও হদিস নেই।

এ সূত্র আরও জানায়, কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পথে। এ বিষয়টি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পেট্রোবাংলাকে জানালে কয়লা উধাও হওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসে।

অন্য এক সূত্র জানায়, খনির ১২১০ নম্বর ফেসে মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১৫ জুলাই থেকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে খনির ১৩১৪ নম্বর ফেসে নতুন করে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কয়লা উত্তোলনের কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রম শেষে আগামী আগস্ট মাস থেকে কয়লার উত্তোলন শুরুর আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

এ সূত্র জানায়, ১৫ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার পিডিবিকে জানিয়েছে, কয়লার পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। অর্থাৎ কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু হঠাৎ গত ৩-৪ দিন আগে খনি কর্তৃপক্ষ পিডিবিকে জানায়, খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুদ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে ৩টি ইউনিটের ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮শ’ থেকে একহাজার মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩টি ইউনিটের মধ্যে একটি ওভার হোল্ডিংয়ের জন্য বন্ধ রয়েছে এবং আরও একটি বন্ধ করা হয়েছে কয়লা সংকটের কারণে। বর্তমানে চালু থাকা ৩নম্বর ইউনিটে উৎপাদন হচ্ছে ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২০ জুন বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ একলাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লার মজুদ দেখিয়েছিল। সেটা মাথায় রেখে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কিভাবে চালু রাখা যাবে, তার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইয়ার্ডে কয়লার মজুদ প্রায় শেষের দিকে এবং বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে নব-নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদ জানান, ২০০৫ সাল থেকে এপর্যন্ত এককোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। খোলা আকাশের নিচে কয়লা রাখা হয়। এতে সিস্টেম লস অর্থাৎ রোদে শুকিয়ে, পানিতে ধুয়ে, বাতাসে উড়ে, মাটিতে মিশে অনেক কয়লা নষ্ট হয়েছে। এটা বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বোর্ড কাজ করছে। তার দাবি, ‘যে অভিযোগ উঠেছে, তা কোনোভাবেই প্রমাণ করা যাবে না। তদন্তে সিস্টেম লোকসানের বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুলাই ২১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর