thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ৯ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

কিছু হলে সব উত্তর পাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে:  প্রধানমন্ত্রী

২০১৮ সেপ্টেম্বর ০২ ২১:০১:০৭
কিছু হলে সব উত্তর পাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে:  প্রধানমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কোনো আপোষ মীমাংসার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচন করা না করা বিএনপির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এছাড়াও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ও সরকার ভেঙ্গে দেওয়ার দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিবিসির

তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার যা হবে তা আইনি প্রক্রিয়াতেই হবে, এবং নির্বাচন হবে সংবিধানের ধারা অনুযায়ী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

নেপালে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে ঢাকায় ফিরে রবিবার বিকেলে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন।

শনিবার ঢাকায় এক সমাবেশে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয় যে নির্বাচনের আগে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, ভেঙে দিতে হবে বর্তমান সংসদ এবং সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তার একদিন পরেই শেখ হাসিনার এই সংবাদ সম্মেলন।

সেখানে গিয়েছিলেন বিবিসির সংবাদদাতা কাদির কল্লোল। তিনি জানান, শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্যে সরকারের কিছুই করার নেই। দলটির নির্বাচনে আসা না আসা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

একটা সরকার থেকে আরেকটা সরকারের যে ট্রানজিট পিরিয়ড সেসময় যাতে কোন ফাঁক না থাকে সেজন্যেই নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।আর খালেদা জিয়াকে তো আমি গ্রেফতার করিনি। তাদের নেত্রী বন্দী হয়ে আছে তাহলে তারা আন্দোলন করুক। তারা আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে, হুঙ্কার দিচ্ছে খুব ভালো কথা। এখন বলছে নির্বাচন করবে না। তারা কী করবে না করবে এটা তাদের সিদ্ধান্ত।

কে নির্বাচন করবে কে করবে না... এখানে বাধা দেয়ার কিছু নেই বা দাওয়াত দেয়ারও কিছু নেই, বলেন তিনি।

তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি গেলাম, আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে ঢুকতে দিল না। আমি সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওদের সাথে আর আলোচনা নয়। আমি অন্তত ওদের সাথে বসবো না। আর কোনো আলোচনা হবে না। প্রশ্নই ওঠে না। আপনারা যে যাই বলেন। ক্ষমতায় থাকি বা না থাকি। আমার কিছুই আসে যায় না।’

জাতীয় নির্বাচনের একেবারে কাছাকাছি এসে নির্বাচন কমিশন যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সে প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই যন্ত্র ব্যবহারের পক্ষে তিনি। তবে এটা তাড়াহুড়ো করে করা ঠিক হবে না।

বিরোধী দল বিএনপি এই ইভিএম যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছে। তাদের অভিযোগ নির্বাচনে কারচুপি করার ষড়যন্ত্র হিসেবেই এই পরিকল্পনা।

শেখ হাসিনাও একই ধরনের কথা বলেছেন বিএনপির আপত্তির ব্যাপারে। তিনি বলেন, ‘ইভিএমের বিরুদ্ধে বিএনপির সোচ্চার হওয়ার কারণ হলো এরকম হলে তারা সিল মেরে ব্যালট বক্স ভরতে পারবে না।’

ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন পৃথিবীর বহু দেশেই হয়। আমি এখনও তার পক্ষে আছি। তবে হ্যাঁ এটা ঠিক যে তাড়াহুড়ো করে এটাকে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। পরীক্ষামূলকভাবে এটা ব্যবহার করে দেখতে হবে, বলেন তিনি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক জোট গঠন নিয়েও কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রধান বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি জোট গঠন করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, এই জোট বিকল্প হিসেবে নির্বাচনে আসতে পারে।

তবে নির্বাচন হবে কিনা এই প্রশ্নে যে অনিশ্চয়তা বা আলোচনা আছে সেটা তিনি বাতিল করে দিয়েছেন।

অন্ততপক্ষে একটা ভাল জোট হোক, আমরা নির্বাচনটা কনটেস্ট করি। আমি আশা করি যে ওনারা নির্বাচন বন্ধ না করে একটা জোট করে নির্বাচনে আসুক।

তবে এই জোটের নেতাদের অতীত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনেক সমালোচনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আদৌ নির্বাচন হবে কিনা যারা বলেন তারা হয়তো বসে আছেন...কোন কিছু হলে সব উত্তর পাড়ার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। এটাই তো বাস্তবতা। যেমন আমার বাবাকে হত্যা করেছে। যিনি এই দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেলেন তাকে যারা খুন করতে পারে তো সেদেশে কীনা হতে পারে!’

বিএনপির বক্তব্য

শেখ হাসিনার এই সংবাদ সম্মেলনের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি তার প্রাপ্য।

কারণ ইতোমধ্যে হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগ তাকে জামিন দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন রকমের কৌশলের সেই জামিনকে বিলম্বিত করা হচ্ছে। এই মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা।

তিনি বলেন, ‘উনারা ওনাদের আট হাজার মামলা মাফ করে দিয়েছেন। উনার নিজের ১৫টি মামলা খারিজ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারা খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।’

বিএনপির দাবি নাকচ করে দেওয়া প্রসঙ্গে মি. আলমগীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো সবকিছুই নাকচ করে দিয়েছেন। অতীতেও নাকচ করেছেন আবার কথাও বলেছেন। রাজনীতিতে তো শেষ কথা বলে কিছু নেই। এখন কী করবো সেটার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে মি. আলমগীর বলেন, সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের আচরণের উপরে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আসল ব্যাপার হচ্ছে আপনি সমস্যা সমাধান করতে চান কিনা, আপনি বাংলাদেশকে কিভাবে দেখতে চান, এটাকে কি একটি একদলীয় রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান, নাকি দেখতে চান কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে। সেটা হচ্ছে মূল কথা।’

‘সংবিধান তো আর কোন বাইবেল বা কোরান নয়। সংবিধান হচ্ছে মানুষের দ্বারা প্রণীত মানুষের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার একটি বিধান। সেটাকে পরিবর্তন করা, সংশোধন করা তো সবসময়ই সম্ভব,’ বলেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর