thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

বাগেরহাটে এসব কী হচ্ছে

উমেদার মান্নান দুহাজার কোটি টাকার মালিক!

২০১৮ অক্টোবর ০৩ ০০:২৬:৩০
উমেদার মান্নান দুহাজার কোটি টাকার মালিক!

বিশেষ প্রতিনিধি, বাগেরহাট থেকে ফিরে : অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। বাগেরহাট ডিসি অফিসের স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া এমএলএসএস (উমেদার) মান্নান তালুকদার এখন দুই হাজার কোটি টাকার মালিক! মাত্র আট বছরেই এই অগাধ বিত্তবৈভব অর্জন করেছেন । কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।

তার তেমন কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। আঙুল ফুলে কলাগাছ বলতে যা বোঝায়-তাই এখন এই মান্নান হাওলাদার।

বিলাসী জীবন যাপনে এনেছেন ব্যাপক পরিবর্তন। ব্যবহার করেন অ্যাপেলের ল্যাপটপ। বিলাসবহুল গাড়ি আছে আটটি। হেলিকপ্টারে চড়ে পরিদর্শন করেন নিজের কেনা জুট মিল।

ঘোষণা দিয়ে চার বছরেই অর্থ দ্বিগুণ করে দেবার প্রলোভন দেখিয়ে তিনি সংগ্রহ করেছেন এই বিপুল আমনত ।

তার যে ভিজিটিং কার্ড আছে সেখানে লেখা-এম এম এ মান্নান তালুকদার, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সাবিল গ্রুপ। যার কর্পোরেট অফিস ঢাকা দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, বিসিআইসি ভবনের ১৬ তলায়। রেজিস্ট্রাড অফিস খুলনার বয়রা বাজারে। আর প্রধান কার্যালয় বাগেরহাটের মিঠা পুকুরে। শাখা অফিস-সাতক্ষীরা, নড়াইল, পিরোজপুর ও যশোরে।

এছাড়া ওই কার্ডে এ্যাজাক্স জুট মিলস, সাবিল পেপার মিলস, সাবিল লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সাবিল অটোমেটিক ব্রিক লিমিটেড, বাগেরহাট টেডিং লিমিটেড, জাকারিয়া এন্টারপ্রাইজ ও নিউ বসুন্ধধারা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এই সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।

তবে মান্নান তালুকদার স্বীকার করেছেন এ্যাজাক্স জুট মিল এখনো চালু হয়নি। সাবিল পেপার মিল এর লেদার ইন্ডাস্ট্রি প্রস্তাবিত রয়েছে। এছাড়া সাবিল আটোমেটিক ব্রিক লিমিটেড তৈরির প্রস্তুতি চলছে। আর নিউ বসুন্ধাধারা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অফিস থাকলেও বাস্তবে কিছুই নেই শুধু জমি ছাড়া। আর বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানও তথৈবচ।

তাছাড়া প্রস্তাবিত সাবিল টুইন টাওয়ার, সাবিল ড্রেজিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, প্রস্তাবিত তিনতলা মার্কেটসহ বহুতলা ভবন, সাবিল জেনারেল হাসপাতাল, সাবিল বৃদ্ধাশ্রম, সাবিল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, সাবিল ডিজিটাল প্রিন্টার্স প্রকল্প নকশা প্রণয়ন করে প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি রয়েছে।

এদিকে এ্যাজাক্স জুট মিল লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাওসার জামান বাবলা মুঠোফোনে জানান, মান্নান তালুকদারের কাছে তিনি মিল বিক্রি করেছেন এমন কোন প্রমাণ নেই। মান্নান ২০ কোটি টাকার চেক দিয়েছিলেন, যা ক্যাশ হয়নি। ফলে তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

কাওসার আরও জানান, টাকা পরিশোধ তো করেননি, এমনকি মিলও চালু করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি অন্য শেয়ারহোল্ডরদেরও কোন টাকা পরিশোধ না করেই মিলের মালিকানা দাবি করছেন। মান্নান একজন ঠগ, প্রতারক।

তিনি জানান, কিছু শ্রমিক নেতাকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে প্রতারণার ফাদঁ তৈরি করে আমানত সংগ্রহ করতে মিলকে ব্যবহার করছেন। মিল কেনার চুক্তি করে মান্নান তালুকদার ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে মিলে আসেন। তারপর মিল শ্রমিকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন, দ্রুত মিল চালু করা হবে। সকল বকেয়া পরিশোধ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেড় বছর পার হয়ে গেলেও মিল চালু হয়নি। শেয়ারহোল্ডারদের কোন টাকাই দেননি। হেলিকপ্টারে এসে মিল কেনার খবর প্রচারের পর তিনি মূলত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছেন।

কে এই মান্নান তলুকদার

বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরের কে আলী রোড়ের মৃত হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার ও ছালেহা বেগমের ছেলে মান্নান তলুকদার। মাদরাসা লাইনে পড়াশুনা করলেও তার কোন সার্টিফিকেট নেই বলে স্বীকার করেন। মান্নান তিন সন্তানের জনক । ১৯৮৪ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উমেদার (এমএলএসএস) পদে নিয়োগ নিয়ে চাকরি করেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। ২৬ বছর চাকরির পর স্বেচ্ছাঅবসর নেন। তিনি লোকজনদের মধ্যে প্রচার করেন, অবসরের পর তার অবসরকালীন ভাতা একটি মাদরাসায় দান করে দিয়েছেন। আবার কাউকে বলেন ওই টাকা সুদ হয়েছে, তাই গ্রহণ না করে সরকারি ফান্ডেই রেখে এসেছেন।

এভাবেই নানা কৌশলে মানুষের কাছে সাধু সেজে প্রকারন্তরে ঠকিয়ে চলেছেন । যুবক, হুন্ডি কাজল, ডেসটিনির রাস্তা ধরে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন উমেদার মান্নান।

(আগামী কাল পড়ুন উমেদার মান্নানের আমানত সংগ্রহের কৌশল)

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/অক্টোবর ০৩,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর