thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

বাগেরহাটে এসব কী হচ্ছে

উমেদার মান্নানের আমানত সংগ্রহের কৌশল

২০১৮ অক্টোবর ০৪ ০০:০৫:৪১
উমেদার মান্নানের আমানত সংগ্রহের কৌশল

বিশেষ প্রতিনিধি, বাগেরহাট থেকে ফিরে : নানাভাবে দুই সপ্তাহ ধরে চেষ্টার পর সাক্ষাত মেলে দুহাজার কোটি টাকার মালিক উমেদার মান্নানের। মিঠাপুকুর তীরে প্রি ক্যাডেট মাদরাসা সংলগ্ন তিনতলা ভবনই তার অফিস ও বাস ভবন। এলাকাটি যথেষ্ট সুরক্ষিত । তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আপ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তার প্রতিষ্ঠানের কাগজ পত্র দেখতে চাইলে কোন দালিলিক প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেন নি।তবে তিনি জানান, ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতেন। তার লভাংশ্য সকলকে প্রদান করতেন। যখন চাকরি করতেন তখনও তার এই ব্যবসা অব্যাহত ছিল। তিনি আরো জানান, ডিসি অফিসের এমএমএলএস পদে চাকরি করলেও সকল কাজই তিনি করতেন। অফিসের কাজে তিনি তখন ১৫-১৬ ঘন্টা সময় দিতেন। আর ভূমি অফিসসহ সকল কাজ বুঝতেন। সেকারণে সব স্যারই তাকে খুব স্নেহ করতেন।

মান্নান তালুকদার স্বীকার করেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সার্টিফিকেট নেই। তবে বাগেরহাটে তার মালিকানায় একটি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। খুলনা মহানগর থেকে প্রকাশিত একটি আঞ্চলিক দৈনিকের সম্পাদক মণ্ডলির সভাপতি হিসাবে মান্নান তালুকদারের নাম পত্রিকাটিতে ছাপা হয়। অথচ সরকারি নিয়ম রয়েছে সম্পাদক হতে হলে নূন্যতম ডিগ্রি পাশ হতে হবে।

বিভিন্ন মিডিয়াকে ম্যানেজ করার জন্য মান্নানের একটি গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপটি তার বিরুদ্ধে যাতে কোনো সংবাদ প্রকাশ না হয় সে বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

ডিসি অফিসে কাজ করার সুবাদে নদী দখল করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নিউ বসুন্ধাধারা রিয়েল এস্টেট লি.

নাম শুনলে মনে হবে এটি কোন আবাসিক এলাকা তৈরির প্রকল্প। প্রতিষ্ঠানটির বয়স আট বছর পার হয়ে গেলেও এই নামে কোনো আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠেনি । আবার এর প্রতিটি সাইন বোর্ড আর কাগজপত্রে দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখা রয়েছে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত। (গভ: রেজি. নম্বর সি ৮৯১১৪/২০১০)।

সত্যতা যাচাই করতে খুলনা অফিসে ৪-৫দিন গিয়ে বিভিন্ন তথ্য নেবার চেষ্টা করেও কোন তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি। পরে নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের সদস্য হব এবং ৫০ লাখ টাকা জমা রাখব এমন প্রস্তাব নিয়ে গেলে চিত্র বদলে যায়। খুলনা বয়রাস্থ নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের খুলনা শাখার ম্যানেজার যশোরের চৌগাছার বাসিন্দা মো. মহিউছুন্না বুলবুল। আপ্যায়নের পরে জানতে চান টাকা আনতে গাড়ি দিতে হবে কি না? এখন টাকা দেব না, খোঁজ খবর নিতে এসেছি বলে তাকে আশ্বস্ত করি।

এক পর্যায়ে তিনি জানান, তাদের সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার সাধারণ শেয়ারহোল্ডার রয়েছে। তাদের কেউ এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জামানত রেখেছেন।

বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের সাধারণ শেয়ারহোল্ডার হওয়ার শর্তাবলীতে রয়েছে-বাংলাদেশের সকল নাগরিক এই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার প্রাপ্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আবেদনকারীকে ১০০শ’ টাকা প্রদান করে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে এবং সর্বনিম্ন বিনিয়োগ ৫ হাজার টাকা করতে হবে। মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে বিনিয়োগ উত্তোলন করা যাবে না। আর সব থেকে লোভনীয় অফারটি হলো- মেয়াদপূর্তির আগে বিনিয়োগ উত্তোলন করলে নিম্নবর্ণিত হারে লভ্যংশ প্রদান করা হবে।

ক. এক বছর বিনিয়োগের পর উত্তোলন করলে ব্যবসার ৩০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ গ্রাহক পাবেন।

খ. দুই বছর পর বিনিয়োগ উত্তোলন করলে ব্যবসার ৩৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ গ্রাহক পাবেন।

গ. তিন বছর পর বিনিয়োগ উত্তোলন করলে ব্যবসার ৪০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ গ্রাহক পাবেন।

ঘ. চার বছর মেয়াদে লাভ ৫০ শতাংশ গ্রাহক এবং ৫০ শতাংশ কোম্পানি বহন করবে।

অর্থাৎ যে কেউ দশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে চার বছরে তাকে বিশ লাখ টাকা দেয়া হবে। আর এক লাখ টাকা জামনত রাখতে মাসে লভ্যাংশ দেওয়া হবে ২৪ শতাংশ এবং বছরে ২৮ হাজার ৯০০ টাকা। বাংলাদেশের সকল সরকারি বেসরকারি ব্যাংকে যখন আমানতের উপর সুদ প্রদান কমাচ্ছে, আর সেখানে এই নিউ বসুন্ধধারা চড়া হারে সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে।

এইসময় খুলনা শাখার ম্যানেজার মহিবুল্লাহ বুলবুল খুলনার মো: ফেরদৌস আলম চান ফারাজীর সাথে তাদের প্রতিষ্ঠানে একটি চুক্তিপত্র (যা নোটারী পাবলিকের কার্যালয় থেকে এফিডেভিট করা)সরবরাহ করেন। তিনি এক কালিন ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এখানে শর্ত সমূহের তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে ১ম পক্ষের বিনিয়োগকৃত টাকা ২য় পক্ষ ইসলামী শরীয়তের মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যবসা করার জন্য গ্রহণ করেছেন। এখানে শর্ত দেয়া রয়েছে চার বছরে ২৫ লাখ টাকা ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত হবে। তবে কোন অবস্থাতেই এক বছর পূর্ণ হবার আগে বিনিয়োগ উত্তোলন করা যাবে না। লোভনীয় প্রস্তাব শুনিয়ে ম্যানেজার জানতে চান টাকা আনতে হলে গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি এই টাকা জমা বা লেন দেন করার জন্য ব্যাংকের মত পাশ বইও দেখান। যে পাশ বইতে বছরের মাসওয়ারী লাভ লোকসানের হিসাব দেখানো হয়।

এ ব্যাপারে ফোরদৌস আলম চান ফারাজীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ২৫ লাখ টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এক বছর পার হয়নি তার লভাংশ পাচ্ছেন না। তার চার বছরে টাকা দ্বিগুন করার কথা রয়েছে। খুলনা টু মংলা যে রেললাইন হচ্ছে এবং এই রেল লাইনের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের পাওয়া সব টাকাই তার কাছে আমানত হিসাবে জমা পড়েছে।

তিনি আরও জানান, লকপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়ির মানুষ এই মান্নান তালুকদারের কাছে আমানত জমা রেখেছেন। এলাকার লোকদের দেখা দেখি আমিও তার কাছে আমানত রেখেছি।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসার নামে আমানত সংগ্রহের বিষয়ে খুলনা শাখার ম্যানেজারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, তাদের আমনাত গচ্ছিত আছে ২ হাজার কোটি টাকা। তাদের জমি কেনা আছে ২০-২৫ গুন বেশি অর্থাৎ ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

যুবক আর ডেসটেনির রাস্তা ধরেই আমানত সংগ্রহ করছেন-এমন কথার জবাবে বলেন, সরকার যদি তাদের দুই বছর সময় দেন তাহলে তারা গ্রহকের টাকা ফেরত দিতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, খুলনা শহরে তাদের এই আমনত সংগ্রহ কাজে ৮০-৯০ জন ফিল্ড অফিসার রয়েছেন। এসব ফিল্ড অফিসার বেতন ভুক্ত কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিল্ড অফিসাররা কমিশন ভিত্তিক। তারা আমানত সংগ্রহের ওপর কয়েক দফা মিলিয়ে ৫ শতাংশ টাকা পেয়ে থাকেন। তবে লক্ষণীয় যে আমানত সংগ্রহকারীদের বড় অংশই চরমোনাই পীরের সমর্থক এবং বয়স্ক ব্যক্তি।

টাকা জমা দিয়ে সদস্য হয়েছেন এমন কয়েকজন গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, টাকা জমা দেবার আগে তাদের পক্ষ থেকে বড় বড় কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এক বছর পর লভ্যাংশ নিতে গেলে ৬-৭ বার ঘুরতে হয়েছে। আবার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে বলা হয়, এ বিষয়ে মিডিয়াতে কোনো অভিযোগ করলে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তাদের কোন অর্থই ফেরত পাওয়া যাবে না।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/অক্টোবর ০৪,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর