thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

চীনের মুসলিম বন্দী শিবিরগুলো এখন 'বৈধ'

২০১৮ অক্টোবর ১১ ০৯:১৩:১৩
চীনের মুসলিম বন্দী শিবিরগুলো এখন 'বৈধ'

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : লাখ লাখ উইগর মুসলিমের লাপাত্তা হয়ে যাওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মুখে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের কর্তৃপক্ষ বন্দী শিবিরগুলোকে আইন করে বৈধতা দিয়েছে। চীনের কর্তৃপক্ষ এতদিনে স্বীকার করলো বহু উইগর মুসলিমকে বন্দী শিবিরে নিয়ে রাখা হয়েছে।

বলা হচ্ছে - ইসলামি কট্টরবাদ মোকাবেলার অংশ হিসাবে আটক উইগরদের আদর্শ শেখানো, তাদের চিন্তা-চেতনায় বদল আনা হচ্ছে। খবর- বিবিসির।

মানবাধিকারের ওপর সম্প্রতি এক বৈঠকে উপস্থিত চীনা কর্মকর্তারা বলছেন "ধর্মীয় উগ্রবাদের কবলে পড়া" উইগরদের নতুন করে "শিক্ষা এবং পুনর্বাসনের" ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তবে কীভাবে তা করা হচ্ছে তা চীনা কর্মকর্তারা ভেঙ্গে বলছেন না।

কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো দাবি করছে, এসব শিবিরে প্রেসিডেন্ট শি জিন-পিংয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে উইগরদের শপথ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। একইসাথে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে আত্মসমালোচনা করানো হচ্ছে।

শিনজিয়াং এ গত কয়েকবছর ধরে অব্যাহত সহিংসতা চলছে। চীন তার জন্য "বিচ্ছিন্নতাবাদী ইসলামি সন্ত্রাসীদের" দায়ী করে।

চীন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে তারা বিপুল সংখ্যক উইগর মুসলিমকে কতোগুলো বন্দী শিবিরের ভেতরে আটকে রেখেছে।

গত অগাস্ট মাসে জাতিসংঘের একটি কমিটি জানতে পেরেছে যে ১০ লাখের মতো উইগর মুসলিমকে পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং অঞ্চলে কয়েকটি শিবিরে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

চীনা আইনে কি বলা হয়েছে?

চীন শিনজিয়াংয়ে কি করছে নতুন এই আইনের মাধ্যমে এই প্রথম তার একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

আইনে বলা হয়েছে - যে সব আচরণের কারণে বন্দী শিবিরে আটক করা হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে - খাবার ছাড়া অন্য হালাল পণ্য ব্যবহার, রাষ্ট্রীয় টিভি দেখতে অস্বীকার করা, রাষ্ট্রীয় রেডিও শুনতে অস্বীকার করা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বাচ্চাদের দুরে রাখা।

চীন বলছে, এসব বন্দী শিবিরে চীনা ভাষা শেখানো হবে, চীনের আইন শেখানো হবে এবং বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

হালাল পণ্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা

শিনজিয়াংয়ে বিভিন্ন ইসলামি রীতি এবং আচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচারণা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য ছাড়া বিভিন্ন হালাল পণ্য ব্যবহারের প্রবণতার বিরোধিতা করা হচ্ছে।

স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে - টুথপেষ্টের মত পণ্যে হালাল জড়িয়ে মানুষকে ধর্মীয় উগ্রবাদের পথে নেওয়া হচ্ছে।

সোমবার প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির এক সভায় নেতারা 'হালাল পণ্য ব্যবহারের' প্রবণতা রোখার অঙ্গীকার করেন।

নতুন আইনে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, মুসলিম নারীদের জন্য মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের এবং কর্মকর্তাদের স্থানীয় ভাষা ব্যবহারের পরিবর্তে চীনা ম্যান্ডারিন ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিবিরগুলো কেমন?

এই সব বন্দী শিবিরে আটকে ছিলেন এমন লোকজন বিবিসির কাছে সেখানে 'শারীরিক এবং মানসিক' নির্যাতনের কথা বলেছেন।

সাবেক বন্দীদের উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে - বন্দীদের জোর করে কমিউনিস্ট পার্টির বন্দনা করে গান গাওয়ানো হয়। গানের কথা ভুলে গেলে সকালের নাশতা দেওয়া হয়না।

তবে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইংরেজি পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস লিখেছে , কড়া নিরাপত্তার কারণে এই অঞ্চলটিকে 'চীনের সিরিয়া' বা 'চীনের লিবিয়া' হওয়া থেকে থামানো গেছে।

উইগর মুসলিমরা শিনিজিয়াংয়ের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ। জাতিগত-ভাবে তারা নিজেদেরকে মধ্য এশিয়ান মনে করে। তাদের ভাষা অনেকটা তুর্কি ভাষার মতো।

গত কয়েক দশকে হান চীনারা (চীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠী) শিনজিয়াংয়ে গিয়ে বসতি গেড়েছে যেটা উইগররা একেবারেই পছন্দ করেনি।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/অক্টোবর ১১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর