thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

ইউরোপীয় সাংসদদের হুঁশিয়ারি, পরোয়া করে না আওয়ামী লীগ

২০১৮ নভেম্বর ১৭ ০১:০১:০০
ইউরোপীয় সাংসদদের হুঁশিয়ারি, পরোয়া করে না আওয়ামী লীগ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা৷ তবে তাঁদের উদ্বেগ এবং হুঁশিয়ারিকে পরোয়া করে না বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ৷ খবর ডয়চে ভেলে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অস্ট্রিয়ার রাজনীতিক জোসেফ ভাইদেনহোলজার বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ৷ এই নির্বাচনই শেষ সুযোগ, যেখানে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ও আইনের শাসন অব্যাহত থাকবে, নাকি পরিস্থিতি অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হবে৷’’

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে শুল্ক ও বানিজ্য সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হবে– ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কোনো কোনো সদস্যের বক্তব্যে এমন হুঁশিয়ারি ছিল বলেও জানা গেছে৷

এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন,‘‘এসব হুমকিতে আমরা ভয় পাই না৷ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তারা কথা বলেন, অথচ মিয়ানমার এত রোহিঙ্গাকে নির্যাতন করল, আমরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তা দেখেছি, সেটা নিয়ে তারা কোনো হুমকি দিচ্ছে না৷ তারা মনে করলে আমাদের যে বাণিজ্য-সুবিধা দেয়, সেটা বন্ধ করে দিক৷ অ্যামেরিকা তো জিএসপি বন্ধ করে দিয়েছে, তাতে কী হয়েছে? বরং আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর আরো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে৷ আসলে তারা আমাদের যে সুবিধা দেয়, সেটা তাদের স্বার্থেই দেয়৷ কারণ, আমাদের চেয়ে কম দামে আর কোনো দেশ তাদের পোশাক দিতে পারে না৷ বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ৷ এখন বিদেশিদের হুমকি-ধামকি বা চোখ রাঙানির দিন হয়তোবা শেষ৷’’

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘প্রয়োজন হলে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাক৷ তাই বলে এখনই নির্বাচন নিয়ে কিছু বলার মতো সময় আসেনি৷ সব দলই তো নির্বাচনে আছে৷ সুন্দরভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে৷ তাহলে এই সময় তাদের এই হুমকির মানে কী? নির্বাচন শেষেও তারা বলতে পারত৷ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, দেশে গণতন্ত্র বজায় থাকবে৷ আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে একটা ভালো নির্বাচনই হবে৷’’



বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখতে চাইলে বাংলাদেশকে অবশ্যই মানবাধিকার ও অন্যান্য ইস্যুতে তার অঙ্গীকারগুলো পূরণ করতে হবে৷ শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদও দিয়েছেন তারা৷ বলেছেন, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যে ধরনের সহিংসতা হয়েছিল, তা তারা আর দেখতে চান না৷ প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের বন্দিদশা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তাদের৷

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘বিদেশিরা না বললেও আমরা যারা দেশে থাকি, তারা বুঝতে পারি, মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না, বরং খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের সরকার মনে করে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে মানবাধিকার পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে৷ আসলে এই ভাবনা ঠিক নয়৷ অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর মানবাধিকার এক জিনিস নয়৷ দুটোকে একইভাবে সামনের দিকে না নিতে পারলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না৷ আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যে কথা তারা বলেছে, সেটা তো দেশের মানুষের দাবি৷ সবাই চান অংশগ্রহণমূলক নির্বাচক হোক৷ এখন পর্যন্ত আমরা যা দেখছি তাতে সব দলের অংশগ্রহণ এবার আছে৷ সেটা আরো ভালোভাবে নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সবার জন্য সমান একটা অবস্থান তৈরি করতে হবে৷’’

বর্তমানে বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানির সুযোগ পায়৷ আলোচনা পর্বে পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) সাজ্জাদ করিম বলেন, ‘‘ইইউ অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো ফল আসছে না৷ ইউরোপে বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করার বিষয়ে কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে কাজ শুরু হয়েছে৷ এ তালিকায় পরবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম আসতে পারে৷’’ বিতর্কে অংশ নিয়ে অষ্ট্রিয়ার রাজনীতিক জোসেফ ভাইডেনহোলজার বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনে হয়ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন না৷ বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷’’ পার্লামেন্টে তুমুল বিতর্ক শেষে ভোটাভুটির মাধ্যমে এ সব বিষয়ে একটা খসড়া প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে৷

আলোচনায় অংশ নেওয়া এমপিদের প্রায় সবাই আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের বন্দি দশা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারার অপব্যবহার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকবাধীনতা সংকোচনসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন৷ তাঁরা পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাণিজ্য সুবিধা কাটছাঁটের প্রস্তাব করেছেন৷ অনেকে আবার পোশাকশিল্পে নজরদারিতে অ্যাকর্ডকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ রোহিঙ্গাদের এখনই ফেরত পাঠিয়ে তাঁদের বিপদের মুখে ঠেলে না দিতেও বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই এমপিরা৷

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের এই হুঁশিয়ারিকে বাংলাদেশের কিভাবে দেখা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও টিআইবির বোর্ড অব ট্রাষ্টি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘‘দেখেন, এটা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট না, এটা আমাদেরও কনসার্ন৷ এখানে নিরপক্ষে ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে কিনা সেটা আমরা চিন্তা করছি৷ সরকারের উচিত হবে এই হুঁশিয়ারিকে আমলে নিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে একটা ভালো নির্বাচন করা৷ তা না হলে কিন্তু সমস্যা হতে পারে৷ শুধু বিদেশিদের বিষয় না, দেশের মধ্যেও অনেক রকম সমস্যা হতে পারে৷ দেখেন, এখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷’’

বৃহস্পতিবারের আলোচনা শেষে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ১৫ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷ ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশকে ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন, মারুফ জামান ও মীর আহমেদ বিন কাশেমসহ অন্য ব্যক্তিদের গুম হওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি ও তাঁর নামে মামলা প্রত্যাহারেরও জোরালো তাগিদ রয়েছে প্রস্তাবে৷ উল্লেখ্য, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় শহীদুল আলম বৃহস্পতিবারই জামিন পেয়েছেন৷

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ১৭,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর