thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে রায়!‌

২০১৮ ডিসেম্বর ১৫ ০৩:০৪:২০
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে রায়!‌

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দেশভাগের সময়েই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা উচিত ছিল!‌ হইচই পড়েছে মেঘালয় হাইকোর্টের বাঙালি বিচারপতির এমন মন্তব্যে৷

এমন ঘটনা ভারতে নজিরবিহীন৷ দেশের এক হাইকোর্টের বিচারপতি মামলার রায় দিতে গিয়ে যা মন্তব্য করলেন, তা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে বসল!‌ বিচারপতি সুদীপ রঞ্জন সেন মেঘালয় হাইকোর্টের বিচারপতি৷খবর ডয়চে ভেলের।

এর আগে গুয়াহাটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ছিল মেঘালয়ে, যা ২০১৩ সালে হাইকোর্টে রূপান্তরিত হয়৷ সেখানে নাগরিক তালিকা পুনর্বিবেচনার একটি রিট পিটিশনের রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সেন মন্তব্য করেন, প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হিসেবে যাঁরা ভারতে এসেছেন, বিনা প্রশ্নে এবং বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া উচিত৷ এরপর সম্প্রদায় ধরে ধরে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি, খ্রিষ্টান এবং তার পাশাপাশি গারো, খাসি, জৈন্তিয়ার মতো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উল্লেখ করেছেন তিনি, যে তালিকায় মুসলিমদের কোনো উল্লেখ নেই৷ এবং সেই সূত্রেই বিষ্ফোরক ওই মন্তব্য করেছেন বিচারপতি সেন৷ তাঁর মতে, দেশভাগের পরই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা উচিত ছিল৷ বিচারপতির যুক্তি, ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের জন্য পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল, তেমনই ভারতের হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া উচিত৷

একইসঙ্গে নিজের উদ্বেগের কথাও আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন বিচারপতি৷ তিনি বলেন, এই দেশকে যেন ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করার অপচেষ্টা কেউ না করেন, তা হলে সারা দেশ এবং বিশ্বের ‘‌সর্বনাশ'‌ হয়ে যাবে৷ নিজের এই দুশ্চিন্তার কথা কেন্দ্র সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর এই রায়ের কপি দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর জন্য মেঘালয়ের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এ পালকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সেন৷

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে৷ এছাড়া দেশের প্রতিটি মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে একসঙ্গে কাজ করলে অসাম্প্রদায়িক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব৷ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে৷ আরেকটি বিষয় হলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সকল ধর্মের সবাই মিলে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে৷

বলেছেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে মোদীজির সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে৷ জাতীয় স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এতে সমর্থন জানাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ একই সঙ্গে দেশের মাননীয় সাংসদদের প্রতি তাঁর আবেদন, প্রয়োজনে এর জন্য নতুন আইন করা হোক৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিচারপতি সেনের দেওয়া ৩৭ পাতার এই রায়ের একাংশ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়ের লেখা ‘‌আপরুটেড বেঙ্গলি'‌ বই থেকে সরাসরি উদ্ধৃত৷ এবং যে ভাষায় বিচারপতি সেন নিজের মতামত জানিয়েছেন, তা-ও ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়৷ যেমন, ভারতে সবার জন্য অভিন্ন আইন চালু করা দরকার৷ যারা সেই আইন মানবে না, তাদের দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করাই উচিত নয়৷ তবে যে মুসলিম ভাই-বোনেরা কয়েক পুরুষ ধরে এদেশে আছে এবং দেশের সংবিধান ও আইন মেনে চলে, তারা শান্তিতে থাকুক৷

স্বাভাবিকভাবেই এই রায়ের তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হয়েছে সারা দেশজুড়েই৷ এবং আইনজীবী ও বিচারকরা এই বিচারবিভাগীয় বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও প্রত্যেকেই এক কথায় বলেছেন, একজন বিচারপতি এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না, যা দেশের সংবিধানে স্বীকৃত আদর্শের প্রকারান্তরে বিরোধিতা করে৷ সেই এক্তিয়ার কোনো বিচারপতির নেই৷ যদিও নানা সময়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে বিভিন্ন আইনের রদবদল এবং নতুন আইন তৈরির সুপারিশ করে থাকে৷ বিচারপতি সেন সেই সুযোগটাই নিলেন কিনা, সেটা নির্ণয়ের ভার আপাতত বিচারবিভাগেরই হাতে৷

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ১৫,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর