thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

১০ মিনিটেই ক্যান্সার শনাক্তের প্রযুক্তি আবিস্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর

২০১৮ ডিসেম্বর ১৫ ১০:১৫:৪৩
১০ মিনিটেই ক্যান্সার শনাক্তের প্রযুক্তি আবিস্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সহজ এবং সাশ্রয়ী পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে সব ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হবে। যুগান্তকারী এ প্রযুক্তি আবিস্কার করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক ড. আবু সিনা। সফল এই গবেষণায় তার সঙ্গে নেতৃত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ড. লরা কারাসকোসা এবং অধ্যাপক ম্যাট ট্রাউ। ক্যান্সার শনাক্তে নতুন এবং কার্যকরী এ পদ্ধতি উদ্ভাবকরা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক।

সম্প্রতি তাদের ক্যান্সারবিষয়ক গবেষণা বিখ্যাত নেচার সাময়িকীর নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের এ গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে সিএনএন, ফোর্বস, নিউইয়র্ক পোস্ট, ইউএসএ টুডে, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফসহ বিশ্বের শীর্ষ সব গণমাধ্যমেও।

গবেষণাকর্মটি নিয়ে বিজ্ঞানী ড. আবু সিনা গণমাধ্যকে জানান, তাদের উদ্ভাবিত ক্যান্সার শনাক্তে নতুন ও কার্যকরী এ পদ্ধতিকে তারা বলছেন 'ইউনিভার্সেল ক্যান্সার বায়োমার্কার'। তারা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ডিএনএর এমন একটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে পেরেছেন, যেটি সব ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান। এ জন্য তাদের উদ্ভাবিত ক্যান্সার শনাক্তের পদ্ধতিকে 'ইউনিভার্সেল বায়োমার্কার' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

ড. সিনা বলেন, 'তাদের গবেষণার বিশেষত্ব হচ্ছে- এর আগে এভাবে সব ধরনের ক্যান্সার শনাক্তে একই বৈশিষ্ট্যের ডিএনএ সম্পর্কে কারও ধারণা ছিল না। মূলত এখনও ক্যান্সার একটি জটিল রোগ, যা শরীরের যে কোনো অংশে (অঙ্গ) শুরু হতে পারে। একেক অঙ্গের ক্যান্সার একেক রকম। এ জন্য বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন ক্যান্সারের ভিন্ন ভিন্ন টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য

বিজ্ঞানীরা এতদিন এমন একটি ইউনিভার্সেল বায়োমার্কারের সন্ধান করছিলেন, যেটি সব ক্যান্সারের কমন (সাধারণ) বৈশিষ্ট্য বহন করবে এবং যেটি বডি ফ্লুইড যেমন- রক্ত, মূত্র কিংবা মুখের লালাতে পাওয়া যাবে।'

এই তিন গবেষক এরই মধ্যে রক্তে ডিএনএভিত্তিক এই বায়োমার্কারের উপস্থিতি নিশ্চিত হতে পেরেছেন। ড. আবু সিনা জানান, মূত্র এবং মুখের লালার মাধ্যমেও সব ধরনের ক্যান্সার শনাক্তে তারা চেষ্টা করছেন। দ্রুত এ ক্ষেত্রেও সফল হতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গবেষণার দুটি সফল দিক রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশি এ বিজ্ঞানী বলেন, 'একই সঙ্গে সব ধরনের ক্যান্সারের উপস্থিতি বুঝতে ডিএনএর বৈশিষ্ট্য চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে টেস্ট সম্পন্ন করার পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছি আমরা।'

এ বিজ্ঞানী বলেন, 'টেস্টটি খুবই সহজ, যা মাত্র ১০ মিনিটে সম্পন্ন করা সম্ভব। মানুষের শরীর থেকে রক্ত কিংবা টিস্যুর স্যাম্পল নিয়ে ডিএনএটা আলাদা করতে হবে। এরপর ওই ডিএনএর অতি ক্ষুদ্র কণা গোল্ড ন্যানো পার্টিকেলের সঙ্গে মেশাতে হবে। মানুষটির শরীরে যদি ক্যান্সারের জীবাণু থাকে, তবে এটার রঙ পরিবর্তন হবে না। আর ক্যান্সার না থাকলে এটা নীল রঙে পরিবর্তিত হবে। এক ধরনের ছোট ও বিশেষ যন্ত্রের গোল্ড আছে এমন জায়গাতেও ডিএনএ দিয়ে সেখান থেকে কারেন্ট সিগন্যাল মেপেও ক্যান্সারের এই পরীক্ষা করা সম্ভব।'

গবেষক দলটি আশা করছে, ভবিষ্যতে যন্ত্রটি খুদে আকারে তৈরি করা গেলে সেলফোনের সঙ্গে যুক্ত করে আরও সহজে ক্যান্সার নির্ণয় করা যাবে।

গবেষণা কর্মটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়ার কারণ সম্পর্কে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ড. আবু সিনা বলেন, 'আবিস্কারটি বিশ্বে সাড়া ফেলার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং সহজ ব্যবহার পদ্ধতি। বর্তমানে একেক ক্যান্সার নির্ণয়ে একেক রকম টেস্ট করতে হয়। আর বেশিরভাগ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে আগে বোঝা যাবে, এমন কোনো টেস্ট নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর ক্যান্সার ধরা পড়ে এমন পর্যায়ে, যখন তার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু নতুন উদ্ভাবিত এ টেস্টটির মাধ্যমে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে যে কোনো ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করা যাবে। এতে করে ক্যান্সারের হাত থেকে লাখো মানুষকে বাঁচানো যাবে।'

তবে তাদের উদ্ভাবনটি সফলভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে হলে অনেক মানুষের টেস্ট করাতে হবে। এ জন্য গবেষণাটি সফলভাবে প্রয়োগে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলে জানালেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি এবং মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক। মূলত উচ্চতর গবেষণা ও পিএইচডি করতে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হন তিনি। এখানে ন্যানো টেকনোলোজি থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করে রিসার্চ ফেলো হিসেবে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করছেন। স্ত্রী সাবিহা সুলতানা এবং একমাত্র সন্তান জাবির ইবনে হাইয়্যানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতেই আছেন। আগামী দিনের লক্ষ্য সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এই বিজ্ঞানী বলেন, 'বাবা মো. শহীদুলল্গাহ এবং মা সুরাইয়া আক্তার দুইজনই শিক্ষক ছিলেন। তারা সারাজীবন মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। আমিও চাই আমার সামর্থ্যের মধ্যে মানুষের জন্য কাজ করতে। আর সেটি করতে পারলেই গবেষণা সার্থক হবে আমার।'

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর