thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার আজ, থাকছে চমক

২০১৮ ডিসেম্বর ১৭ ১১:১২:৪১
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার আজ, থাকছে চমক

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে চমক থাকছে। তরুণ প্রজন্ম ও তাদের কর্মসংস্থান, জনগণের চাহিদা এবং একটি ইনক্লুসিভ সমাজ গঠনের জন্য নিজেদের পরিকল্পনা ও ভাবনার আলোকে ইশতেহার চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টায় রাজধানীর হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।

জেলে যাওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন ২০৩০-এর আলোকেই তৈরি করা হয়েছে এ ইশতেহার। এই ইশতেহারে বেশ কিছু চমক থাকছে বলে জানিয়েছেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা।

কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে সরকার, সংসদ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, পররাষ্ট্রনীতিসহ সরকারের প্রতিটি সেক্টরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আলাদা আলাদা পরিকল্পনা ও ভাবনাগুলো সুচিন্তিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

সুশাসন, স্বচ্ছতা ও স্বঅবস্থান-এ তিন অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে নবধারার রাজনীতি ও সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি থাকছে ইশতেহারে। থাকছে নতুন নতুন চমক ও অঙ্গীকার।

তরুণ ভোটারদের পক্ষে টানার বিষয়টি মাথায় রেখে ইশতেহার করা হয়েছে।ইশতেহারে গুরুত্ব পাবে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি।

শিক্ষিত যুবকদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান ও শিক্ষাবঞ্চিতদের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা দিয়ে দক্ষতা বাড়িয়ে চাকরির জন্য তৈরি করা হবে বলে ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি থাকছে।

প্রান্তিক কৃষকদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকছে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে। সাপ্লাই চেইনে যেন মধ্যস্বত্বভোগী না থাকে সেই ব্যবস্থা করার কথা বলা হবে।

ইশতেহারে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী স্লোগানও যুক্ত হচ্ছে। ‘দেশের মালিক জনগণ, ধানের শীষে ভোট দিন’; ‘দেশ বাঁচাতে মানুষ বাঁচাতে, আনবে পারিবর্তন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’সহ তিনটি স্লোগানের খসড়া তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম স্লোগানটিই সম্ভবত থাকছে ইশতেহারে।

জানা গেছে, এছাড়া শান্তি ও কল্যাণকর সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরির জন্য জাতির উদ্দেশে ৫ প্রতিশ্রুতি ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারের থাকছে। যা ইশতেহার প্রণয়ন কমিটিতে যুক্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দিয়েছেন।

প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, বেকারত্ব নিরসন, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, কৃষিতে ভর্তুকি, দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ ও শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ।

জানা গেছে, রাজনীতিতে অতীতমুখিতা বা প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে নতুন ধারার সৃষ্টি, ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি থাকবে ইশতেহারে।

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনার প্রত্যয় থাকবে ইশতেহারে। সুশাসন, সুনীতি ও সু-সরকারের (থ্রি-জি) সমন্বয় ও বৃহত্তর জনগণের সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ার অঙ্গীকার থাকবে এতে।

প্রশাসন ও বিচার বিভাগে দলীয়করণের অবসান ঘটিয়ে মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকবে।

শিক্ষা ও কৃষি খাতে যুগোপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা, বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, ক্রীড়াক্ষেত্রে শুধু স্থাপনা নির্মাণ নয়, গুরুত্ব দেয়া হবে নিয়মিত টানা অনুশীলনের দিকে, খেলায় শতভাগ মনোযোগ দেয়ার লক্ষ্যে খেলোয়াড়দের আর্থিক বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার প্রতিশ্রুতি থাকবে।

তরুণদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ ইশতেহার তৈরি করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫; এর সঙ্গে মিল রেখে অবসরের বয়স বাড়ানো, কোটার যৌক্তিকীকরণ হবে।

মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা বাস্তবতা অনুযায়ী যৌক্তিক হারে পুনর্বহাল, চাকরিতে মেধাই একমাত্র মানদণ্ড, চাকরিতে আবেদনের ফি বা পে অর্ডার থাকবে না, যানবাহনে বা গণপরিবহনে স্টুডেন্ট হাফভাড়া কার্যকর, সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট, তরুণদের সৃজনশীল করে গড়ে তুলতে প্রত্যেক উপজেলায় সমৃদ্ধ পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন ইত্যাদি ইশতেহারে থাকছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সব সরকারি করা হবে। বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের চাকরি পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে।

শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ মেধা অনুসরণ, শুধু দাওরায়ে হাদিসের স্বীকৃতিতে কওমি শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরি মিলবে না। কেননা বেশিরভাগ চাকরিতে স্নাতক ডিগ্রি চাওয়া হয়। তাই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের চাকরিতে যোগ্য করতে দাওরায়ে হাদিসের নিচের তিন স্তরকে সমমানের স্বীকৃতি দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য, কৃষি, পররাষ্ট্রনীতিসহ সরকারের প্রতিটি সেক্টর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ইশতেহারে। ‘স্মার্ট শহর’ নামে একটি অঙ্গীকার থাকবে ইশতেহারে। স্মার্ট শহরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা, যাতে করে মানুষ আরও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন।

‘জনগণ এ রাষ্ট্রের মালিক’-এ ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত করার নির্দেশনাসংবলিত ইশতেহারে নানা মত ও পথ নিয়ে বাংলাদেশকে একটি রেইনবো ন্যাশন বা রংধনু জাতিতে পরিণত করার বিস্তারিত ঘোষণা থাকবে।

১১ মে ২০১৭ সালে খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০’র ঘোষণা কল্পিত রেইনবো নেশনের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘শরতের আকাশে সাতটি রঙের বিচিত্র প্রভা নিয়ে রংধনু যেভাবে মনোরম সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ ঘটায়, আমরা চাই সব মত ও পথকে নিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন ও পরিপুষ্ট করতে যে সংস্কৃতি বাংলাদেশকে একটি রেইনবো নেশনে (রংধনু জাতিতে) পরিণত করবে।’

উল্লেখ্য, এই ‘রংধনু জাতি’র তত্ত্ব নিয়ে এসেছিলেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেলসন ম্যান্ডেলা। এই তত্ত্বের আলোকেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দীর্ঘসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বর্ণবাদ দূর করেছিলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও এমন একটি রূপরেখা আজ জাতির সামনে তুলে ধরবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রণয়নে যে কমিটি করা হয়েছে, তাতে বিএনপি থেকে সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, গণফোরামের আওম শফিকউল্লাহ, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইকবাল সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহেদ উর রহমান রয়েছেন। আর এ কমিটির মূল দায়িত্বে ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আগামী দিনে দেশ ও জনগণের জন্য আমরা কী কী করতে চাই, তা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০-এ তা উল্লেখ করেছেন। ইতিমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও ১১টি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সব সমন্বয় করে ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর