thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

নির্বাচন বর্জন করব না মরে গেলেও : ড. কামাল

২০১৮ ডিসেম্বর ১৭ ২২:৪৭:০৫
নির্বাচন বর্জন করব না মরে গেলেও : ড. কামাল

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সারাদেশে প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতার বন্ধে দু'দিনের মধ্যে অ্যাকশন (পদক্ষেপ) নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সময় দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, সরকার যদি মনে করে এরকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি তারা করবে, যাতে নির্বাচন বর্জন করি। কিন্তু এটা তারা পারবে না। মরে গেলেও নির্বাচন বর্জন করব না। আমার লাশ নিয়ে নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন।

নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। বৈঠকে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে সারাদেশে তাদের প্রার্থীদের গ্রেফতার, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও আক্রমণ নিয়ে বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ করা হয়।

এ সময় অভিযোগ করে ড. কামাল বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে তাদের জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেছে। এই আট দিনে ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে ৯৫টি মামলা হয়েছে। দুই হাজার ২৪১ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এমন ১৪ জনও রয়েছেন।

বৈঠকে ড. কামাল হোসেন ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, জগলুল হায়দার প্রমুখ অংশ নেন। এ ছাড়া চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সারাদেশে অব্যাহত হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও গুলিবর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট চাই। দুই দিনের মধ্যে দেখতে চাই কিছু অ্যাকশন হচ্ছে। এ জন্য আমরা কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখনকার যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে তাতে একদিনের মধ্যে এগুলো সম্ভব। তা না হলে প্রত্যেক দিনবসে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি বলেন, কমিশন বলেছে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিছু বিষয়ে বিব্রত বোধ করেছে। আমরা বলেছি, শুধু বিব্রতবোধ করলে হবে না। কিছু পদক্ষেপ নেন যাতে মানুষ বুঝতে পারবে যে, ইসি এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে সমাজ ও দেশকে মুক্ত করতে চায়। নির্বাচনের নূ্যনতম একটি পরিবেশ আমরা পাই।

ড. কামাল বলেন, সরকার যদি মনে করে এরকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, যাতে আমরা নির্বাচন বর্জন করি। কিন্তু এটা তারা পারবে না। মরে গেলেও নির্বাচন বর্জন করব না। আমার লাশ নিয়ে নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন। আমার আঙুল থাকবে, সেটা দিয়ে টিপ দিয়ে আপনারা ভোট দেবেন। নির্বাচন হতে হবে। তারা এসব জঘন্য আক্রমণ করলেও আমরা বর্জনেরকথা বলবনা।

এত অভিযোগ দেওয়ার পরও ইসি সক্ষমতা দেখাতে পারছে না কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ইসির ক্ষমতা আছে। কিন্তু তারা সে ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না কেন এটা তাদের জিজ্ঞেস করা উচিত।

ড. কামাল বলেন, আমি ৫৫ বছর রাজনীতি করছি। নির্বাচনের সঙ্গেও আছি বহু বছর। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম। তবে এবারের মতো নির্বাচন দেখিনি। ঢাকায় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থীর পোস্টার দেখতে পাবেন না।

সেনা মোতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে আ স ম রব বলেন, আজ থেকে সেনাবাহিনী নিয়োগের জন্য বলেছি। সেনা মোতায়েন করলে সবাই রাস্তা থেকে পালিয়ে যাবে।

বৈঠকে মামলা ও গ্রেফতারের সংখ্যা উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটি তালিকা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেওয়া হয়। তালিকায় উল্লেখ করা হয়, ১০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর ৯৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে ১২ হাজার ১৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে আরও ৯ হাজার ৭৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৪১ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।

ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ইসিকে জানানো হয়, প্রতীক বরাদ্দের পর তাদের ২৪ নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতিত হয়েছেন এবং চারজন মারা গেছেন।বৈঠকে ইসিকে জানানো হয়, ১১ নভেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৫৮টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে ২৩ হাজার ৫৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২৪ হাজার ১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের ছয় হাজার ২৯১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের ১৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ৩ জন মারা গেছেন।

কারাবন্দি ১৪ প্রার্থী: ইসিতে দেওয়া তালিকায় রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলায় ঐক্যফ্রন্টের ও ২০ দলীয় জোটের কারাবন্দি প্রার্থীরা হলেন- ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মাওলানা আবদুল হাকিম, রাজশাহী-৬ আবু সাঈদ চাঁদ, মাগুরা-১ মনোয়ার হোসেন, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-২ সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, গাজীপুর-৫ এ কে এম ফজলুল হক মিলন, নরসিংদী-১ খায়রুল কবীর খোকন, গোপালগঞ্জ-৩ এস এম জিলানী, কুমিল্লা-১০ মনিরুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কপবাজার-২ এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।

হামলার অভিযোগে ইসিতে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অমি: ঢাকা-২ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমির ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। সোমবার সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালানোর সময় তার ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। নির্বাচন ভবনে এসে সিইসি কে এম নূরুল হুদার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন অমি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ১৭,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর