thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

আইপিও’র রোড শো অনুষ্ঠিত

বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ড হতে চায় ওয়ালটন

২০১৯ জানুয়ারি ১৬ ১১:৩৪:০১
বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ড হতে চায় ওয়ালটন

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের সেরা ৫টি ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের একটি হতে চায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি বাড়াতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠিানটি।

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত ওয়ালটনের করপোরেট অফিসের সম্মেলন কক্ষে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আয়োজিত রোড শো অনুষ্ঠানে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আশরাফুল আলম এসব কথা বলেন।

রোড শোতে এলিজিবল ইনভেস্টর তথা ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির পরিচিতি, আর্থিকচিত্র ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। রোড শোতে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

আশরাফুল আলম বলেন, শুধু টাকার জন্য শেয়ারবাজারে আসছি না। আমাদের জার্নিটার লক্ষ্য সূদুরপ্রসারী। বিশ্বের শীর্ষ ব্রান্ডগুলোর একটি হতে চায় ওয়ালটন। আর এ কারণে বাজারে আসছি। আমাদের জার্মানিতে আপনাদেরকে প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগে যখন ওয়ালটন দেশে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন শুরু করে তখন হয়তো কেউ কল্পনা-ই করেনি সে সময়কার বাঘা বাঘা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকতে পারবে। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন ছিল, বিশ্বাস ছিল। ছিল নিরন্তর চেষ্টা। দেশী ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে টপকে ওয়ালটন এখন মার্কেট লিডার। ফ্রিজের বাজারের ৭০ শতাংশের বেশি ওয়ালটনের দখলে। অন্যান্য সেগমেন্টেও ওয়ালটনের অবস্থান সুদৃঢ়।

ওয়ালটন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা ওয়ালটনকে বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করতে চাই। এটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এটি খুবই সম্ভব। স্থানীয় বাজারে অন্যান্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শীর্ষে উঠে আসা যতটুকু কষ্টকর ছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে শুক্ত অবস্থান তৈরি করা তারচেয়ে কম কষ্টকর হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি একটা জটিল প্রক্রিয়া। এখানে সবাই ভয় দেখাচ্ছে। কথা সাবধানে বলতে হবে, এছাড়া নানা ভীতির কথা শুনছি। তবে আমি বলবো, পুঁজিবাজার বা শেয়ার নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনার সময় নেই। আমরা আমাদের পন্য উৎপাদন এবং বিক্রি বাড়ার কথা চিন্তা করছি, করবো। ভবিষ্যতে কিভাবে বিশ্বের সেরা ৫ টি ব্রান্ডের মধ্যে স্থান পাওয়া যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য ও ভাবনা।

আশরাফুল আলম বলেন, যারা আমাদের শেয়ার কিনবেন আশা করি তারা বঞ্চিত হবেন না। আমরা প্রতিবছরই সেরা ভ্যাট দাতা নির্বাচিত হই। ভ্যাট কখনও ইচ্ছে করে বেশি বা কম দেই না। বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও মুনাফা কম বেশি করা হবে না নিশ্চিত থাকুন।

ওয়ালটনের ২০১৯ সালের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বছর আমরা ২ মিলিয়ন পন্য উৎপাদন এবং বিক্রি করবো। আর তা থেকে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা হবে। আপনারা তা লিখে রাখতে পারেন। তা অর্জন করতে না পারলে পরবর্তী বার্ষিক সাধারন সভায় (এজিএম) তা আমাকে জিজ্ঞাস করবেন। আশা করি আমি যা বলেছি তা অর্জন সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ওয়ালটন দেশের বাজারে বড় ধরনের প্লাটফর্ম তৈরী করতে পারে। দেশে যেসব কোম্পানি ৬০-৭০ বছর ব্যবসা করছে ওয়ালটন তাদের পেছনে ফেলে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গ্লোবাল মার্কেটের স্ট্যান্ডার্ড ফলো করছে। বিশ্বের সেরা কোম্পানির মধ্যে ওয়ালটনের নাম আসবে বলে আশা করছি।

ওয়ালটনের জন্ম সম্পর্কে তিনি বলেন, ওয়ালটনের জন্ম ফ্যামিলি পরিসরে। আপনাদের হাত ধরে বিশাল বড় কোম্পানি হবে ওয়ালটন। আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবো। ফ্যামিলি প্রতিষ্ঠান একটা নির্দিষ্ট বৃত্তে থাকে। কিন্তু পাবলিক প্রতিষ্ঠান পরিবার তথা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বে সেরা হিসেবে গড়ে উঠে। যখন শুরু করি তখন অন্যান্য কোম্পানিকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবো সেটা ছিল স্বপ্ন। আর এখন তা বাস্তবায়নের পথে। তাই আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ব সেরা হতে চাই। সেটা যাতে টেকসই হয় তাই আমরা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে চাই। আর এতে দীর্ঘ মেয়াদী টিকে থাকা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

২০১৭ সালে মুনাফা কিছু কমে যাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের বেশির ভাগ সময়ই বিনিয়োগ হয়েছে। আর এ কারণে প্রফিট সামান্য কমেছে। আলোচিত সময়ে বেশির ভাগ পন্যের জন্ম। ওই সময় বিনিয়োগ করার কারণে গত বছর থেকে ফল ভোগ করা শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে কোম্পানির মুনাফা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আপনারা বুঝতে পারবেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের শেষ দিকে ওয়ালটন কমপেশার উৎপাদন শুরু করে। উৎপাদনের চেয়ে পন্যটির চাহিদা বেশি দেখতে পেয়েছি।

ওয়ালটনের রিস্ক ফ্যাক্টর সম্পর্কে তিনি বলেন, ওয়ালটন এসি, রেফ্রিজারেটর তৈরী করে। এ কারণে এসব পন্যে রিস্ক রয়েছে। আর তা হলে শীত। শীত আমাদের পন্যের জন্য বড় সমস্যা। এসি এবং রেফ্রিজারেটর শীতে কাহিল হওয়ার পন্য। সুতরাং এ সময় পন্য বিক্রি কিছুটা কম হয়। আর এটাই ওয়ালটনের রিস্ক ফ্যাক্টর।

তিনি আরও বলেন, রিস্ক ফ্যাক্টর আছে বলেই ওয়ালটন প্রায় ৩০টি পন্য নিয়ে কাজ করছে। এসি, ফ্রিজ শীতকালে বিক্রি কম হলেও অন্যান্য পন্যের বিক্রি স্বাভাবিক থাকবে। যা মুনাফা অর্জনে ভূমিকা রাখছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ৬০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের কোম্পানি ওয়ালটনের পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। উত্তোলিত এ অর্থ ওয়ালটনের কারখানার সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন, গবেষণা ও মানউন্নয়ন, ব্যাংক লোনের আংশিক দায় পরিশোধ এবং আইপিও খরচ মেটাতে খাতে ব্যয় করা হবে।

চলতি হিসাববছরের (২০১৮-১৯) প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৮) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১০ টাকা ৫৯ পয়সা এবং শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২০৮ টাকা। কোম্পানির পুঞ্জিভূত মুনাফা ২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা এবং শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ১৭ টাকা ২০ পয়সা।

এএএ ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে এবং প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে রেজিস্টার টু দ্য ইস্যু হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

রোড শোতে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম নূরুল আলম রেজভী, পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম, ইনডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর এম ফরহাদ হোসেইন, এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান খাজা আরিফ উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপেোর্ট/এনটি/জানুয়ারি ১৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর