thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

ডাকসু নির্বাচনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাই মূল ফ্যাক্টর

২০১৯ মার্চ ১০ ১০:২৩:৩৫
ডাকসু নির্বাচনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাই মূল ফ্যাক্টর

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে সোমবার। এ নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ অনেক। বিশেষ করে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাই মূল ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে এ নির্বাচনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ সব দলের প্রার্থীরাই মনে করে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাই মূল ফ্যাক্টর। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে সেটা করতে পারেনি ক্ষমতাসীন সংগঠনটি।

জানা গেছে, মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেকই থাকেন হলের বাইরে। প্রায় বিশ হাজারের অধিক অনাবাসিক ভোটার এবার ডাকসুর ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। হলগুলোতে ছাত্রলীগ প্রভাব তৈরি করতে পারলেও অনাবাসিক ভোট নিয়ে সব দলের শঙ্কা রয়েছে।

প্রার্থীরা বলছেন, ১৮টি হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় নির্বাচনে কাজ করবে তা হলো অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতি। এর বাইরে টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরাও ভোটের ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া প্যানেলের পাশাপাশি প্রার্থীর আচার-আচরণ ও কর্মতৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। যদিও প্যানেল তৈরির ক্ষেত্রে সংগঠনগুলো এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে।

গেল কয়েকদিন শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন শীর্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। ছাত্রদের জন্য এবং শিক্ষার পরিবেশ আরও উন্নত করতে প্রতিশ্রুতির বুলি শুনিয়ে যাচ্ছেন তারা। রাত ১২টা পর্যন্ত ছেলেদের হলগুলোতে প্রচার চলে। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের নির্বাচন না হলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিপিবি নেতৃত্বাধীন বামজোটসহ সব রাজনৈতিক দলের নজর এখন ডাকসুর দিকে। আগামীতে দেশ ও প্রজন্ম কোন ধরনের নেতৃত্ব পছন্দ করে তারই চিত্র উঠে আসবে এই নির্বাচনের ফল থেকে।

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, ডাকসু ও হল সংসদের মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ আবাসিক ও ৪০ ভাগ অনাবাসিক। পাঁচটি ছাত্রী হলে
আবাসিক-অনাবাসিক মিলিয়ে আছেন প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী। হলে থাকেন ৯ হাজারের মতো, বাকি ৬ হাজার থাকেন হলের বাইরে।

একইভাবে ১৩টি ছাত্র হলে আবাসিক-অনাবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ২৯ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ১৫ হাজার ছাত্র হলে থাকেন, বাইরে থাকেন ১৪ হাজার। অনাবাসিক ছাত্রদের মধ্যে বড়জোর এক হাজার ছাত্র দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাকি ১৫ হাজার দলীয় রাজনীতির বাইরে। সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ছাত্রছাত্রীই প্রত্যক্ষভাবে কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়।

প্রার্থীরা বলছেন, তারাই হবেন মূল ফ্যাক্টর।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রার্থী রয়েছেন ৭৩৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫ পদের বিপরীতে ২২৯ জন এবং হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪ পদের বিপরীতে প্রার্থী ৫০৯ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ২১ জনের মধ্য থেকে একজন, জিএস পদে ১৪ জনের মধ্য থেকে একজন এবং এজিএস পদে ১৩ জন থেকে একজনকে প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন শিক্ষার্থীরা।

এর বাইরে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯, কমনরুম ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন থেকে একজন করে এবং সদস্য পদে ৮৬ জন থেকে ১৩ জনকে বেছে নেবেন ভোটাররা।

১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪টি পদ রয়েছে। আর এই পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন ৫০৯ জন। গড়ে প্রায় ২৯ প্রার্থী রয়েছেন একেকটি হলে। অর্থাৎ হল সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ২৯ জনের মধ্য থেকে ১৩ জনকে বেছে নিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা আনজুম অর্ণি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের তুলনায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইংরেজী বিভাগের তাহমিদুর রহমান বলেন, অনাবাসিক বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। যারা হলে থাকেন, তারাই মূলত রাজনীতিতে জড়িত। ফলে এই ভোটারদের ভোট কারা পাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করছে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়।

শিক্ষার্থীরা কেন আপনাদের ভোট দেবে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনগুলোতে আমাদের সক্রিয় সমর্থন ছিল। আমাদের ভোটার মূলত অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাই। কারণ, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হলে থাকতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের আবাসন সংকট, গবেষণায় টাকা বৃদ্ধি, বহিরাগত মুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য কাজ করব। এজন্য শিক্ষার্থীরা আমাদের ভোট দেবে।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসাইন বলেন, আবাসিক-অনাবাসিক কোনও বিষয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবরকম শিক্ষার্থীই আমাদের পরিবারের সদস্য। তাদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে ছাত্রলীগ ভূমিকা রেখেছে। প্রশ্নফাঁস আন্দোলনে আমাদের দাবির মুখে আবার পরীক্ষা নিয়েছে। সুতরাং শিক্ষার্থীরা আমাদের ভোট দেবে।

বামজোট থেকে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, এই ডাকসু নির্বাচনের জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। অনাবাসিক সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানে, আমরা তাদের জন্য কাজ করবো। তাই তারা আমাদের ভোট দেবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মার্চ ১০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর

শিক্ষা - এর সব খবর