thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলার নেপথ্যে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত?

২০১৯ এপ্রিল ২২ ১৯:০৭:৫০
শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলার নেপথ্যে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও চারটি হোটেলে আটটি সিরিজ বোমা হামলা কারা চালিয়েছে সেই বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আল-আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেল টুইটারে জামাত আল-তাওহিদ ওয়াতানিয়া নামের ইসলামি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সংবাদমাধ্যমটি।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ হামলায় ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতের সংশ্লিষ্টতাকে কেন্দ্রে রেখে তদন্ত শুরু করেছে। আর দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রজিথা সেনারত্ন আশঙ্কা করেছেন সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় আন্তর্জাতিক যোগসূত্র থাকতে পারে। পরে তিনি হামলাটির নেপথ্যে স্থানীয় ইসলামি উগ্রবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

রবিবার (২১ এপ্রিল) খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও তার আশেপাশের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে বিস্ফোরণ চালানো হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০জন বিদেশিসহ ২৯০ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ।

শ্রীলঙ্কা পুলিশের দাবি, তারা ১০ দিন আগেই ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতের হুমকির ব্যাপারে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি’র হাতে পাওয়া নথি অনুযায়ী, গির্জায় হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিল 'একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা'। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়াসুনদারা দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা সতর্কতা পাঠান। এতে বলা হয়, 'একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) প্রখ্যাত চার্চ এবং কলম্বোয় ভারতীয় হাইকমিশন লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।'

এই সতর্কতা নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রজিথা সেনারত্ন। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগেই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছিল। এতে হামলাকারীদের নামও উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে ওই সতর্কতা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পর্যন্ত পৌঁছায়নি।

শ্রীলঙ্কায় প্রতিরক্ষা দফতরের দায়িত্ব দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার হাতে। বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে রজিথা সেনারত্ন বলেন, এটা দুনিয়ার একমাত্র দেশ যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দেয় না। আমরা দায় এড়ানোর চেষ্টা করছি না। কিন্তু এটিই বাস্তবতা।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, হুমকির তথ্য থাকার পরেও পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ। হামলার পর তৌহিদ জামায়াতকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম।

এই গোষ্ঠী খুব পরিচিত না হলেও বিশেষজ্ঞদের দাবি, দক্ষিণ এশিয়ায় তারা ইসলামি জঙ্গিবাদ মতাদর্শ বহন করে। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধমূর্তি ভাঙচুরের অভিযোগ থাকলেও সন্ত্রাসী হামলার কোনও প্রমাণ নেই।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক বিশ্লেষক জ্যাসন বার্ক জানান, সোমবার নৃশংস হামলার জন্য লঙ্কান কর্মকর্তারা ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতকে দায়ী করেছেন। তবে তাদের এই দাবি তদন্তে পাওয়া নতুন তথ্যের ভিত্তিতে নাকি ১০ দিন আগের হামলার হুমকির প্রেক্ষিতে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জ্যাসনের মতে, এই নামটি শ্রীলঙ্কার পরিচিত একটি ইসলামি সংগঠনের নামের কাছাকাছি। শ্রীলঙ্কান তাওহিদ জামাত (এসএলটিজে) দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে সক্রিয় রয়েছে। হামলার হুমকি এই সংগঠনের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে কিনা জানা যায়নি। এসএলটিজে শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলভিত্তিক ছোট সংগঠন। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় স্থাপনা ভাঙচুরে এরা জড়িত। এই সংগঠনের নামের অর্থ হলো আল্লাহর নামে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। ইসলামি জঙ্গিরা এমন নাম সচরাচর গ্রহণ করে থাকে।

২০১৬ সালের নভেম্বরে পুলিশ এসএলটিজে’র সেক্রটারিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উসকানির অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। এক বিক্ষোভে দেওয়া ভাষণে অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগার করায় এই অভিযোগ আনা হয়। এক মাস পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফেসবুকে সংগঠনটি রবিবারের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের গভর্নর মাহমুদ লেব্বে আলিম মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, হামলায় জড়িত হিসেবে সন্দেহ করা ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত (এনটিজে) কম পরিচিত একটি সংগঠন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের শ্রীলঙ্কা প্রধান অ্যালান কীনান জানান, গত বছর কয়েকটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় জড়িত থাকা সংগঠনই হতে পারে এনটিজে। তিনি বলেন, মারভানেলাতে গত ডিসেম্বরে কয়েকটি বৌদ্ধ মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ ওই ঘটনায় কয়েকজন তরুণকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত তরুণরা জিজ্ঞাসাবাদে এক মওলানার শিষ্য বলে জানিয়েছিল। ওই মওলানার নাম রবিবারের হামলার গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এপ্রিল ২২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর