thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

ছয়টি ছড়া ।। রহমান মুজিব

২০১৯ মে ১৮ ১৫:০০:৫১
ছয়টি ছড়া ।। রহমান মুজিব

এই সব কার

এই যে নিখিল আকাশের নীল
হাসে খিলখিল লাগে অনাবিল!

ওই জলা বিল উড়ো গাঙচিল
করে ঝিলমিল লাগে অনাবিল!
ওই দেখ নদী চলে নিরবধি
নাই তার দিশে সাগরেতে মিশে

হয় একাকার; ওই যে পাহাড়
তারকার হার আহা কী বাহার!

এই সব কার?

ওই সাদা কাশ মখমলে ঘাস
এই তরুলতা প্রাণে প্রাণে কথা
কতো উৎসব কার এই সব;
আছে অনুভব? খোকা বলে ‘রব’
তাঁর এই সব।

খুকি শোনে কয় তিনি অক্ষয়
সবকিছু তাঁর সেরা উপহার
মহিমা অপার।

ইচ্ছেপাখির ডাক

ইচ্ছেপাখি ডাকছে তোমায় তরুণ
এবার পাখি আনবে ভোরের অরুণ
ডাকছে সুরে ভাসতে রঙের আভায়
তোমায় তারা হাঁকছে ত্বরায় ওঠো
তরুণ অরুণ আভায় ওঠো জ্বলে।

ডাকে নিশাচর

জীবনের জলসা ঘরে
করে নাচ খল নাগরে
জানে না দুদিন পরে
চলে জল জল সাগরে।
তবে কেন ছলা-কলা
ওখানে কোথায় পলা?

দুনিয়া আঁধার হলে
আপামর পড়বে কলে
ও কলের নীলাভ বিষে
খলও কী পাবে দিশে?

ইতিহাস আজো তাজা
কোথা সেই ফারাও রাজা
হালাকু নমরুদেরা
সে কালের জম দূতেরা
আছে কি এই ভুবনে?
ভাবা চাই ধ্যানের সনে।

খুলো তাই মনের তালা
খুঁজে নাও পথ উজালা
ধরণি উঠবে জ্বলে
পলা আর প্রেমের বলে।

এসো রে এসো নেমে
দুনিয়া সৃষ্টি প্রেমে;
এ প্রেমে মজলে মানব
বেঘোরে হারবে দানব।

জেতা চাই পঞ্জা লড়ে
মাতাল এই ঝঞ্ঝা ঝড়ে।
ফাগুনি ফুল বাসরে
জাগো সব কোরাস করে
জাগোরে জাগো...।

মাসতুতো ভাই

মুরগি খেয়ে পেট ফুলায়ে শিয়াল বলে,“ইন্দুর
নিজের জীবন করতে রঙিন
লোকের বুকে বিন্ধাবি পিন
খেতের ফসল ফেলবি খেয়ে –জানিস এমন দিন দূর।
দেখে আধার ঘুটঘুট
কেটেই যাবি কুটকুট
দাম দিতে আর শিখলিনারে লোকের অশ্রুবিন্দুর!”

ইঁদুর বলে,“শিয়াল
গাইবি না আর খিয়াল
লোকের মুরগি করলি চুরি
এখন দেখাস বাহাদুরি!
পাল্টা আগে নিজের স্বভাব
না-হয় পরে সাজিস নবাব
জারিজুরি বন্ধ;
নিজের গতর সাফ রেখে তুই
খুঁজিস পরের গন্ধ।

তুই তো দেখি আমার মাঝেই চিরটাকাল পাস ছুতো
নিজের চরকা খসখসে
অন্যরে তেল যাস ঘসে
পরের গায়ে থুথু ফেলে ক্যান যে মিছে খাস গুঁতো!
আসিস না আর ঘাটতে
আপন আপন স্বার্থে
সবাই জানে চোরে চোরে ভাই হয়ে যায় মাসতুতো”।

শিয়াল বলে,“দোস্ত –
তুই কেটে খা কাটুর কুটুর
আমি চাটি গোস্ত
থাকবো দুজন সুস্থ্য”।

আহহারে কী পরিপাটি!
কাটাকাটি
চাটাচাটি
বলছো কিছু – জীবন মাটি।


এটাই নাকি চল

মোষের মাথায় মুকুট দিয়ে
ছাগল ভেড়ার দল
নাচছে অবিরল
এটাই নাকি চল!
পাইলে ছুতা
মোষ মেরে দেয়
শিংগে গোঁতা
গুঁতা খেয়ে রক্ত ঝরে
চোখে নামে ঢল
এটাই এখন চল।
এই দুনিয়ার কোণায় কানায়
চলেছ অবিরল
কে খুঁজে কার তল
এটাই এখন চল!


লাল বরণের ফড়িং ওড়ে

চলার পথে চকিৎ দেখি খেলছে শিশু মায়ের সনে
তার মাঝে মা তোমায় পেয়ে
চমকে গিয়ে থমকে চেয়ে
লাল বরণের ফড়িং দেখি উড়াল মারে বুকের বনে!
মাছরাঙা মা মৎস ধরে
ঠোঁটে পোরে যত্ন করে
খাওয়ায় যখন বাচ্চাদেরে মা তোমারে পড়ে মনে।

দশটি ছানা সঙ্গে নিয়ে গর্বে হাঁটে মোরগ মাতা
হামলে পড়ে হঠাৎ এসে
দন্তধারী দানুর বেশে
তীক্ষ্ণ নখর খাস শিকারী আকাশচারী বাজ এক যা-তা।
মোরগ মাতা মেলে ডানা
আগলে রাখে আপন ছানা
দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে মা ঠিক খুলে যায় মনের খাতা–

খাতার পাতায় তোমার ছবি ভেসে ওঠে সেই সে ক্ষণে
মৌ মাখা এক গন্ধ ছড়ায়
তোমায় আঁকি ছন্দ ছড়ায়
শুভ্র ডানার পায়রা ওড়ে বুকের খাঁচার নীল গগনে;
হাজার তারার জোনাক জ্বলে
জিজ্ঞাসাতে যায় যে বলে
এই দুনিয়ায় আর কে আছে বসতে পারে মা’র আসনে?


রহমান মুজিব : খানিকটা নিভৃতচারী। আশির দশকের শেষভাগ থেকে লেখালেখি শুরু। ছড়ার প্রতি অনুরাগ ছোট বেলা থেকেই। এছাড়া সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তার বিচরণ রয়েছে ।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মিয়াঁও মিয়াঁও বিল্লিছানা (ছড়া-২০০০), ঝলকে ওঠে স্মৃতির ঠোঁটে (ছড়া-২০০২), আলোর পাপড়ি (ছড়া-২০০৪), ছঙভঙ (ছড়া-২০০৪), তেলেসেমাতি (ছড়া-২০০৪), পলিমাটি ডট কম (ছড়া সমবায় -২০১৬), রমুছাঁচ (নতুন কাব্য কাঠামো-২০১৮)। তাঁর উদ্ভাবিত রমুছাঁচ ৫৬-৮০ মাত্রায় সমাপিতব্য একটি কাব্য কাঠামো। মিল বিন্যাস ‘কখখকগগক’। ১, ৪, ৭ নম্বর চরণ ১১-১৬ মাত্রার সমিল সমমাপের এবং ২,৩,৫,৬ নম্বর চরণ ৫-১০ মাত্রার । ২, ৩ নম্বর চরণ সমিল সমমাপের। ৫, ৬ নম্বর চরণ সমিল সমমাপের।]

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ১৮,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর