thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

ক্ষমতা উৎখাতের পশ্চিমা রাজনীতির 'বড় শিকার' মুরসি

২০১৯ জুন ১৯ ২০:৩৪:৩১
ক্ষমতা উৎখাতের পশ্চিমা রাজনীতির 'বড় শিকার' মুরসি

রাফসান গালিব

সাকিবের সেঞ্চুরিটা দেখতে পারি নাই। ওইসময় মিশরে মুরসি মারা গেছেন। দ্রুত নিউজ দিতে কিবোর্ড নিয়ে বসে গেলাম। আদালতে বিচারকের প্রশ্নবাণের মুখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। সেখানেই মারা গেছেন। বিবিসি আল জাজিরায় এতটুকুই আসছে তখন। দ্রুত নিউজ রেডি করে ব্রেকিং নিউজ ছেড়ে যেই টিভির সামনে আসলাম তখন সাকিবের পাশে বরাবর তিন সংখ্যা জ্বলজ্বল করছে।

সেটা দেখে একটু চিল্লাফাল্লা করে আবার বসে গেলাম, বিস্তারিত নিউজ দিতে। সেটা দিতে গিয়ে মিস করলাম লিটনের হ্যাট্রিক ছক্কা। এগুলো বুঝতেছি পরে। তখন কিন্তু মুরসির ছবিটাই ভাসতেছিল চোখে।

বিদেশে ক্ষমতা উৎখাতের পশ্চিমা রাজনীতির নিঃসন্দেহে 'বড় শিকার' মুরসি। এ মৃত্যু বিশ্ব রাজনীতির 'জঘন্যতম' ঘটনা। একটা দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এক বছরেও ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি পশ্চিমা শক্তি। যাদের সবার বিশেষ করে বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের পেয়ারা মিত্র হচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনকে কোনঠাসা করে রাখতে মিশরের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েলের জন্য। যাতে দেখা যায়, গাজা সীমান্ত বন্ধে মিশরের কড়াকড়ি আরোপসহ আরও নানান কর্মকাণ্ড। সেইসঙ্গে ইসরায়েলি আগ্রাসনে মিশরের নিরব ভূমিকা।

সেখানে ফিলিস্তিনের হামাস মিত্র মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত সরকার মিসরের ক্ষমতায় চলে আসা মানে ইসরায়েলের জন্য বড় হুমকি। সেইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের শক্তির ওপর আঘাত মানে পুরা অঞ্চলে পশ্চিমা আধিপত্যের ওপর হুমকি। ক্ষমতায় এসেই ফিলিস্তিনিদের জন্য মিশরের রাফা সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন মুরসি।

মুরসিকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছিল কাতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণে। অভিযোগ আকারে যেটি হচ্ছে, কাতারকে গোপন নথিপত্র সরবরাহ করা। হামাসকে তথ্য পাচারেরও অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ২০১৭ তে কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন বাণিজ্যিক যুদ্ধটা তো সবার জানাই আছে। মূলত বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিকে পুনর্গঠনে সহযোগিতা করে যাচ্ছিল কাতার। সেটা সহ্য হয়নি ইসরায়েলের। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব দেশ যেখানে মিশরও আছে তারা যেহেতু সবাই পারস্পরিক মিত্র এবং ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক স্বার্থসহ ক্ষমতাচর্চায় যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজন পড়ে, ফলে সবার আক্রোশ গিয়ে পড়ে কাতারের ওপর। সেই কাতার সম্পর্কিত কারণে মুরসিকে কাঠগড়ায় তুলল মিশরের সিসি সরকার। মার্কিনি ইন্ধনে ২০১৩ সালে যিনি মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করছিলেন।

ইসলামি সরকার বলে ব্রাদারহুড সমর্থিত মুরসিকে উৎখাত করার দোহায় দেয় পশ্চিমা গোষ্ঠী। ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উত্থানে ভীত হয় তারা। বিপরীতে দেখবেন ভারতে কট্টর হিন্দু সাম্প্রদায়িক দল ক্ষমতায় আসলে বাহবা যোগায় পশ্চিমারা, আলাদাভাবে ইসরায়েল। যার ফলাফল, ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘে ভারতকে দেখা যায় ইসরায়েলের পক্ষ নিতে। আদতে অর্থে এ রাজনীতি হইতেছে ইসলামি আইডোলজিরে থ্রেট বা হুমকি মনে করার পশ্চিমা শক্তির যে ঐতিহাসিক কারণ তার ধারাবাহিকতারই অংশ । সঙ্গে যুক্ত থাকে স্থানীয় পুঁজিপতিদের স্বার্থ ও ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা আস্বাদনের লোভ।

যাক, আদালতে মুরসির এই মৃত্যুুকে হত্যাকাণ্ড না বলে আর কি বলা যাবে? গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বৈধ একজন প্রেসিডেন্টকে জোর করে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করা হল। এরপর বিচারের নামে আটকাবস্থায় ছয় বছর ধরে দৈনিক ২৩ ঘন্টা নির্জন সেলে বন্দি রেখে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হল। নিঃসন্দেহে বিশ্ব ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম এক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে এ মৃত্যু।

আরব বসন্তের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের শাসক পরিবারগুলো এবং তাদের মদদদানকারী মুরুব্বি দেশগুলোর সরাসরি এক প্রতিশোধ হিসেবেও দেখা যায় এ মৃত্যুকে। নিশ্চয়ই আরব বসন্তের তরুণ-তরুণীরা সকলে মুরসির দল ব্রাদারহুডের সমর্থক ছিলেন না। এমনকি অনেকে তাদের বিরোধীও ছিল। মুরসির বিরুদ্ধে জনগণের একাংশের আন্দোলনও ছিল। কিন্তু মুরসি পপুলার ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন, এটিও ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই।

এই অধ্যায়ের সবচেয়ে নির্মম দিক হলো আরব বসন্তের জেরে ক্ষমতা হারানো স্বৈরাচারী শাসক হোসনে মুবারক এখনও জীবিত। অথচ আরব বসন্তের শত শত তরুণ-তরুণী এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা মৃত।

সর্বশেষে, সামরিক বা সামরিক সমর্থনপুষ্ট সরকার শুধু মিশরেই না। সামরিক কর্তৃত্ববাদিতার ছায়া অনেক কথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যেও আছে। সেটার বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই জারি থাকুক। বিদায়, মুরসি।

লেখক: সাংবাদিক

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ১৯,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর