thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

নেক্সিয়াম সেক্স কাল্ট: যৌন গুরু রনিয়্যারির যত অপরাধ

২০১৯ জুন ২০ ২০:৩৪:১৯
নেক্সিয়াম সেক্স কাল্ট: যৌন গুরু রনিয়্যারির যত অপরাধ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : মেয়েদের যৌন দাসত্বে বাধ্য করা নেক্সিয়াম সেক্স কাল্ট বা যৌন গোষ্ঠীর গুরু কেইথ রনিয়্যারিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিউইয়র্কের একটি আদালত।

প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে বিচার কার্যক্রমের পরে ৫৮ বছরের রনিয়্যারিকে দোষী বলে রায় দেন নিউইয়র্কের আদালতের জুরিরা। খবর বিবিসির

তিনি তার 'নেক্সিয়াম' গোষ্ঠীর মধ্যে পিরামিড আদলে যৌনতার জন্য 'দাসী এবং প্রভু' জাতীয় একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন।

তার বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে, যার মধ্যে আছে দলবাজি করে অপরাধ করা, যৌনতার জন্য মানব পাচার আর শিশু পর্নগ্রাফি।

যদিও এসব অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন মি. রনিয়্যারি, তবে অপরাধের কারণে তার যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে।

আইনজীবীরা বলছেন, রনিয়্যারি নিজেকে 'বিশ্বের সবচেয়ে চালাক,' ব্যক্তি হিসাবে দাবি করতেন, যিনি নিজেকে আইনস্টাইন এবং গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করতেন।

আইনজীবীদের অভিযোগ, তিনি নারীদের মগজ ধোলাই করে দাস হিসাবে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতেন এবং তার সঙ্গে যৌন মিলনে বাধ্য করতেন।

এদের মধ্যে হলিউডের নায়িকা এবং মেক্সিকোর সাবেক একজন প্রেসিডেন্টের কন্যাও রয়েছে- যারা রনিয়্যারির বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এই গোষ্ঠীর অন্য সদস্যরা অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন।

সেপ্টেম্বর মাসে রনিয়্যারির সাজা ঘোষণা করা হবে। এসব অপরাধে তার যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজা হতে পারে।

আদালতে যা জানা গেছে

নেক্সিয়ামের ট্যাগ লাইনে বলা হয়েছে, রনিয়্যারি এবং তার অনুসারীরা 'একটি উন্নত পৃথিবী' গড়ার জন্য কাজ করতেন।

তবে মামলার সাক্ষীরা আদালতে এই ব্যক্তির আলাদা এক চেহারা তুলে ধরেছেন।

আদালতে তুলে ধরা হয়, নেক্সিয়ামের ভেতর 'ডস' নামের আলাদা ও গোপন একটি সমাজ তৈরি করেছিলেন রনিয়্যারি।

কৌসুলিদের অভিযোগ, ডসের 'গ্র্যান্ডমাস্টার' হিসাবে তিনি নারীদের শোষণ ও ব্লাকমেইল করতেন, যাদের মধ্যে ১৫ বছরের এক কিশোরীও ছিল।

এফবিআই বলছে, নিয়োগের সময় এই নারীদের বলা হতো, এটি পুরোপুরি মেয়েদের একটি সংগঠন। এভাবে তাদের কাছ থেকে স্পর্শকাতর ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হতো এবং পরবর্তীতে সেগুলো প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করা হতো।

তবে মি. রনিয়্যারির আইনজীবীরা বলছেন, সব যৌনতার ঘটনাই পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে।

নেক্সিয়াম সম্পর্কে কী জানা যায়

আলব্যানি ভিত্তিক এই গ্রুপটি নিজেদের পরিচয় সম্পর্কে লিখেছে, ' মানবিক নীতিমালায় পরিচালিত একটি কম্যুনিটি, যারা মানুষকে ক্ষমতাবান করতে চায়।'

১৬ হাজারের বেশি ব্যক্তির সঙ্গে তারা কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায় তাদের কর্মকাণ্ড রয়েছে।

১৯৯৮ সালে নিউইয়র্কের আলব্যানিতে প্রথম গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যক্তিগত উন্নয়ন কোম্পানি হিসাবে এর যাত্রা শুরু।

এই গ্রুপের সদস্য হিসাবে রয়েছেন সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক নারী ও হলিউডের অভিনেত্রীও।

তবে তদন্তকারীরা বলছে, আসলে মেনটরিং গ্রুপের আদলে প্রতিষ্ঠিত হলেও আসলে যৌন পাচারকারীদের একটি সংগঠন, যেখানে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি আর সংঘবদ্ধ অপরাধ ঘটানো হতো।

কুমারিত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে তোলা

এই গোষ্ঠীর সাবেক একজন সদস্য, যাকে আইনজীবীরা ড্যানিয়েলা বলে বর্ণনা করেছেন, তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তার ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর্যন্ত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে নানাভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে, রনিয়্যারি তার কুমারিত্ব নিতে পারে।

১৮ বছর হওয়ার পরে রনিয়্যারি তাকে বলেন, ''এখন সময় হয়েছে।'' যৌন মিলন করার জন্য রনিয়্যারি তাকে অফিসের একটি গুদাম ঘরে নিয়ে যান।

ড্যানিয়েলার আরেকজন বোনও এই গোষ্ঠীর নেতার যৌন পর্নগ্রাফির শিকার হয়। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদের দুই বোনকেই কাল্ট নেতা রনিয়্যারি গ্রুপ সেক্সে বাধ্য করতেন।

''আমরা পুরো সময়টা ধরে কাঁদতাম,'' আদালতে বলেছেন ড্যানিয়েলা।

একপর্যায়ে তারা দুই বোনই গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তবে রনিয়্যারি তাদের গর্ভপাতে বাধ্য করেন।

দুই বছর ধরে বেডরুমে আটকে রাখা

লরা সলজম্যান নামের ৪২ বয়সী একজন নারী সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, মোটা হয়ে যাওয়া আর আরেকজন পুরুষের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ায় ড্যানিয়েলাকে একটি বেডরুমে দুই বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।

ড্যানিয়েলাকে বলা হয়েছিল, তাকে মেক্সিকোয় ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে, যদি সে রনিয়্যারি আর মিজ সলজম্যানকে সন্তুষ্ট করতে না পারে।

তখন একই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও পুরো সময়টা জুড়ে পরিবারের কোন সদস্যের সঙ্গে ড্যানিয়েলাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি।

এই বন্দীদশা থেকে বাঁচতে তার পরিবার আমেরিকায় থাকলেও একপর্যায়ে মেক্সিকো ফেরত যেতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন ড্যানিয়েলা।


দাসী ও প্রভু

আদালতে উপস্থাপিত তথ্যে জানা যাচ্ছে, নেক্সিয়ামের ভেতর 'ডস' বা 'ভোউ' নামের আরেকটি গোপন চক্র ছিল।

সেখানে অনেকটা পিরামিডের আদলে 'দাসী' আর 'প্রভু' ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। এই চক্রের সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিলেন রনিয়্যারি, পুরো গ্রুপের একমাত্র পুরুষ সদস্য।

'দাসী'দের দায়িত্ব ছিল তাদের নিজেদের জন্য আরো 'দাসীর' নিয়োগ করা, যারা সবাই আসলে রনিয়্যারির সেবায় কাজ করতো।

এখানে যোগ দিতে হলে নারীদের এমন সব স্পর্শকাতর তথ্য দিতে হতো, যারা তারা প্রকাশ করতে চান না। যার মধ্যে রয়েছে, নিজের বা পরিবারের সদস্যদের গোপন ছবি বা ভিডিও।

এই নারীদের নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে চলতে হতো, যাতে তারা শুকনো থাকতে পারেন। তাদের বাড়ির কাজ থেকে রনিয়্যারির যৌন চাহিদা মেটাতে নারীদের প্রস্তুত করার মতো কাজ করতে হতো।

গুরুর চিহ্ন দিয়ে নারীদের ব্রান্ডি করা

অনেক সময় গ্রুপের নারীদের তলপেটের একটি অংশ পুড়িয়ে রনিয়্যারির নামাঙ্কিত চিহ্ন বসিয়ে দেয়া হতো এবং সেগুলোর ভিডিও করা হতো।

আদালতে উপস্থাপিত তথ্য অনুসারে, নেক্সিয়ামের সদস্যদের বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নগ্ন করে এভাবে ব্রান্ডি করে দেয়া হতো।

আদালতে কয়েকজন সাক্ষ্য দিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে চারটি অনুষঙ্গ থাকতো। বাতাস, মাটি আর পানি, পোড়ানোর কলমটি আগুন হিসাবে বিবেচনা করা হতো।

তবে রনিয়্যারির আইনজীবী দাবি করেছেন, নারীরা স্বেচ্ছায় ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন।

পুনঃ প্রতিশ্রুতি অনুষ্ঠানের সময় গ্রেপ্তার

মিজ সলজম্যান আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, যখন মেক্সিকো বাড়িতে রনিয়্যারিকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন রনিয়্যারির সঙ্গে তিনিসহ সাতজন শীর্ষ 'দাসী' মিলে পুনঃ প্রতিশ্রুতি অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল।

সেখানে তারা সবাই একত্রে রনিয়্যারির সঙ্গে যৌন মিলন করার মাধ্যমে গ্রুপ এবং রনিয়্যারির প্রতি তাদের আস্থা আর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার কথা ছিল। এই সাতজনের মধ্যে ছিলেন স্মলভিলের নায়িকা অ্যালিসন ম্যাকও।

তবে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে এফবিআই এবং মেক্সিকোর এজেন্টরা সেখানে হানা দেয় এবং রনিয়্যারিকে গ্রেপ্তার করে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ২০,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর