thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

বাড়বে এলপি গ্যাসের দাম

২০১৯ জুন ২৬ ১৫:৪৬:১৯
বাড়বে এলপি গ্যাসের দাম

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রস্তাবিত বাজেটে এলপি গ্যাসের ওপর করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদন পর্যায় মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট, এলপিজি আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ আগাম কর ও সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা হয়েছে।

ফলে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়বে। এতে চাপে পড়বে ভোক্তা।

এদিকে বাজেটে এলপিজি স্টিল সিলিন্ডার আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে বাজারে স্টিল সিলিন্ডার কম দামে পাওয়া যাবে। কিন্তু দেশীয় সিলিন্ডার তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে।

বিপাকে পড়বেন এলপি গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা। এলপিজির ওপর এই কর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত এলপিজির ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালুর ওপর ভ্যাট দিতে হয়। প্রতি সিলিন্ডারের ট্যারিফ ভ্যালু ধরা আছে ৬০ টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো। এ হিসাবে প্রতি সিলিন্ডারে ভ্যাট দিতে হতো ৯ টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে এর ওপর ট্যারিফ প্রথা তুলে দিয়ে বাজারমূল্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি সিলিন্ডারের বাজারমূল্য ৮৭৯ টাকা।

এখন এর ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এতে ভ্যাট আছে ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ নতুন পদ্ধতিতে ভ্যাটের পরিমাণ বেড়েছে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা। এর বাইরে আছে দুই পর্যায়ে আগাম কর। এলপিজি আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ আগাম কর দিতে হবে। এখন কর দিতে হয় ২ শতাংশ। ফলে আমদানিতেও দাম বাড়বে ৩ শতাংশ। এ ছাড়া সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপের কারণে এর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে সিলিন্ডারের দামও বেড়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী বলেন, এলপি গ্যাস ব্যবহার সহজলভ্য, জনপ্রিয় ও ভোক্তাসাধারণের ক্রয় সাধ্যের মধ্যে রাখতে বিক্রয় পর্যায়ে ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট আরোপিত ছিল।

কিন্তু নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনে প্রস্তাবিত বাজেটে ট্যারিফ মূল্য তুলে দেয়া হয়েছে। ন্যায্য বাজারমূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে এলপি গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমদানি পর্যায়েও ৫ শতাংশ আগাম কর ও সিলিন্ডার তৈরিকে কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপের ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। সব মিলিয়ে এলপি গ্যাস যারা ব্যবহার করেন তাদেরকে এ খাতে বাড়তি খরচ করতে হবে।

তিনি বলেন, এলপিজি স্টিল সিলিন্ডার আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার ফলে দেশীয় সিলিন্ডার তৈরির উদ্যোক্তারা অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বেন। তিনি বলেন, এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়ার কারণে সিলিন্ডার তৈরির শিল্প গড়ে উঠেছে। স্টিল সিলিন্ডার আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করার ফলে এগুলোর দাম কমে যাবে। ফলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তার মতে, দেশের বিকাশমান এই অত্যাবশ্যকীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এলপিজি বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট, আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ আগাম কর ও সিলিন্ডার তৈরিতে আগাম কর প্রত্যাহার করতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে পর্যালোচনায় দেখা যায়, উৎপাদন পর্যায়ে ১২ কেজি ওজনের একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হতো ৮৭০ টাকা। এর ওপরে ট্যারিফ ভ্যালু থাকায় তখন ভ্যাট দিতে হতো ৯ টাকা।

সব মিলিয়ে এই ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের উৎপাদন পর্যায়ে বিক্রি হতো ৮৭৯ টাকা। তবে বাজেট প্রস্তাবে ট্যারিফ ভ্যালুর পরিবর্তে বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় ১২ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদন পর্যায়ে ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে এই গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়বে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমরা বলছি যেসব পণ্য ভোক্তা সংশ্লিষ্ট সেগুলোতে যেন বাড়তি ভ্যাট না থাকে। এতে ভোক্তার ব্যয় বাড়বে। তাই বাজেট ভোক্তাবান্ধব হতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বাজেটের কারণে কোনোভাবে যেন ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আরও দেখা গেছে বিভিন্ন পণ্যের ওপর বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে ওইসব পণ্যের দাম বাড়বে। এতে ভোক্তার ওপর বাড়তি ব্যয়ের চাপ পড়বে।

এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে নির্মাণাধীন ৪টি প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি এলপিজি সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি রয়েছে। যাদের সমন্বিত বিনিয়োগ প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর এসব কোম্পানিতে আনুমানিক ৪ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে বাজারে এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা ৬০ লাখ পিস। যদিও দেশীয় এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৯০ লাখ পিসের।

দেশীয় শিল্প সম্প্রসারণ ও এলপিজি ব্যবহার উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার এই শিল্প রক্ষার্থে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আসছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট আরোপ করায় এ খাতে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে, সঙ্গে ভোক্তারও এই পণ্য কিনতে বেশি টাকা ব্যয় করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ২৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর