thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

এরশাদের অবর্তমানে জাপার ভবিষ্যৎ কী

২০১৯ জুলাই ০৪ ০৭:৪৬:১৯
এরশাদের অবর্তমানে জাপার ভবিষ্যৎ কী

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গুরুতর অসুস্থ। এরশাদের অবর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির (জাপা) কী হবে, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কার নেতৃত্বে চলবে সংসদের বিরোধী দল জাপা, কে হবেন বিরোধীদলীয় নেতা তা-ও মীমাংসিত ইস্যু নয়।

গত ৪ মে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে তার হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেন এরশাদ। জাপার নেতারা জানিয়েছেন, এরশাদের অবর্তমানে জি এম কাদেরই হবেন দলের প্রধান। কিন্তু এরশাদপত্নী রওশন এরশাদের অনুসারীরা তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেবেন কি-না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বুধবার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের যৌথ সভায়ও আলোচনা হয়েছে, জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের কবর কোথায় হবে এবং তার অবর্তমানে দল কীভাবে চলবে। কবর কোথায় হবে– এ বিষয়ে ঐকমত্য না হলেও উপস্থিত নেতারা জি এম কাদেরের নেতৃত্ব মেনে চলার কথা বলেছেন। তবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না রওশন এরশাদ ও তার অনুসারী জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাই তাদের ভূমিকা কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, এরশাদের ইচ্ছা তার অবর্তমানে সংসদে দলকে নেতৃত্ব দেবেন রওশন এরশাদ। এরশাদের পর উপনেতা থেকে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন রওশন এরশাদ। আর দলের চেয়ারম্যান হবেন জি এম কাদের। ভাবি-দেবরের যৌথ নেতৃত্বে চলবে জাপা। কিন্তু রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের অনুসারীরা যৌথ নয়, একক নেতৃত্ব চান।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, এখন জাপা যেভাবে চলছে, এরশাদের অবর্তমানে সেভাবেই চলবে। জাপা চেয়ারম্যান নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, তার অবর্তমানে কী করতে হবে। তিনি জি এম কাদেরের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন। তিনিই জাপার নেতা হবেন।

বুধবারের বৈঠকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন জি এম কাদের। তিনি বলেন, এরশাদ শুধু তার ভাই নয়, তার পিতৃতুল্যও। এরশাদ গুরুতর অসুস্থ। তিনি তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালনে সবার সহযোগিতা চান। জাপার নেতারা সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

তবে নেতারা একমত হতে পারেননি– কোথায় হবে এরশাদের কবর। সভায় উপস্থিত ৩৮ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি একমত হয়েছেন, ঢাকাতেই কবর দেওয়া হবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও একটি দলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার কবর উন্মুক্ত স্থানে হওয়া উচিত, যেখানে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা যেতে পারবেন। সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদকে বনানী বা সেনানিবাসে কবর দিলে এ সুযোগ থাকবে না।

কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য দাবি করেন, এরশাদকে সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে কবর দিতে হবে। কারণ, তার শাসনামলে জাতীয় সংসদ ভবনের যাত্রা শুরু হয়। জি এম কাদের তা নাকচ করে বলেন, এতে রাজনৈতিক বিতর্ক হবে। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সফিকুল ইসলাম সেন্টু মোহাম্মদপুর আদাবরে জায়গা কিনে এরশাদকে কবর দেওয়ার প্রস্তাব করেন। সেখানে মসজিদ নির্মাণসহ এরশাদের মাজার করা হবে। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, রাজধানীতে জায়গা পাওয়া না গেলে তিনি সাভারে কবরের জন্য জায়গা দিতে রাজি আছেন।

৮৯ বছর বয়সী সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বছরখানেক ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। একাদশ নির্বাচনের আগে-পরে তিন দফায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নেন বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদ। নির্বাচনের পর শপথ নিতে হুইলচেয়ারে সংসদে যান। গত আট মাসে তাকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

বুধবার জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জানিয়েছেন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এরশাদ মাইলিড প্লাস্টিক সিনড্রোমে ভুগছেন। তার অবস্থা উন্নতির দিকে। তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

জাপার একাধিক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, এরশাদ শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তিনি বেঁচে থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার মতো সুস্থ হবেন– এমন আশা করা যাচ্ছে না। তাই দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের সময় এসে গেছে। তবে এরশাদ যত দিন বেঁচে আছেন, তত দিনই দলের প্রধান থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন জি এম কাদের।

বুধবারের বৈঠকে রওশন এরশাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জানিয়েছেন, বিরোধীদলীয় উপনেতা অসুস্থ। তাই তিনি আসতে পারেননি। অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি সিএমএইচে এরশাদের শয্যাপাশে রয়েছেন। দুই জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার কেন বৈঠকে আসেননি– এ বিষয়ে উত্তর পাওয়া যায়নি দলটির কোনো নেতার কাছ থেকে। গত মাসে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ যৌথ সভায়ও তারা আসেননি।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই বিরোধ চলছে জাপায়। এরশাদ ও জি এম কাদের নির্বাচন বর্জন করলেও রওশনের নেতৃত্বে জাপার একাংশ ভোটে অংশ নেয়। ভোটের পর ২০১৬ সালে জি এম কাদেরকে জাপার কো-চেয়ারম্যান করেন এরশাদ। এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান রওশন এরশাদ। এরশাদকে 'অব্যাহতি' দিয়ে রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তার অনুসারীরা। পরে রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করে পরিস্থিতি সামাল দেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ।

একাদশ নির্বাচনের পর ফের অস্থিরতা শুরু হয় জাপায়। গত জানুয়ারিতে জি এম কাদেরকে উত্তরসূরি ঘোষণা করেন এরশাদ। দশম সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করা রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে নিজে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নেন; জি এম কাদেরকে উপনেতা করেন।

দুই মাসের মাথায় সিদ্ধান্ত বদল করেন এরশাদ। জি এম কাদেরকে সরিয়ে উপনেতা করেন রওশন এরশাদকে। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছেন– রওশনপন্থিদের এমন 'ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে' পদ হারিয়েছিলেন জি এম কাদের। তার আগের দিন গত ২১ মার্চ জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান পদ থেকেও সরিয়ে দেন। জাপার দুর্গ খ্যাত রংপুরের নেতাদের চাপে দুই সপ্তাহ পর তাকে ফের কো-চেয়ারম্যান পদে বহাল করেন। পরে করা হয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ০৪,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর