thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে কী হবে

২০১৯ জুলাই ২৩ ১৭:৪৮:২৭
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে কী হবে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: গত কয়েক মাসে একাধিকবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ইরান। প্রায় প্রতিটি শিরোনামেই মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির নামের পাশে বসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম। এর কারণ হচ্ছে, অধিকাংশ সময়ই ট্রাম্প ইরানকে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। হুংকার ছাড়তে ইরানও কম যায় নি। তেহরানেরও সাফ জবাব ছিল- হামলা হলে দেখিয়ে দেব।

সম্প্রতি হরমুজ প্রণালি থেকে ব্রিটেনের একটি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছে ইরান। তেহরানের দাবি ট্যাংকারটি সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এর তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা একে ছাড়বে না। বিশ্বের পঞ্চশক্তির অন্যতম ব্রিটেনের এতে ক্ষেপে যাওয়াই স্বাভাবিক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে ইরানকে ‘কঠোর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। এই ‘পরিণতি’ যে যুদ্ধের হুমকি তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। বোঝার ওপর শাকের আটির মতো ট্রাম্পের হুমকির সঙ্গে এখন ইরানের কাঁধে সওয়ার হয়েছে ব্রিটেনের হুমকি।

এই হুমকি-পাল্টা হুমকিতে শেষ পর্যন্ত যদি যুদ্ধ বেঁধেই যায় তাহলে কী হবে? মধ্যপ্রাচ্য অশান্ত হলে কী হয় তার ছোট্ট নজির বিশ্ব দেখেছে ইরাক যুদ্ধের সময়। তবে ইরানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ মারান্দি বলেছেন, ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের যুদ্ধ বাঁধলে সেটা হবে বিশ্বের অর্থনীতির জন্য বড় ধরণের বিপর্যয়।

মোহাম্মদ মারান্দির মতে, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ ও দুর্ভাগ্যজনক দখলদারিত্বের পর থেকেই সম্ভাব্য মার্কিন হামলা ঠেকাতে ইরান ভূগর্ভস্থ বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। পারস্য উপসাগর, হরমুজ প্রণালি এবং ওমান উপসাগরের কাছাকাছি এলাকাগুলোও এই নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে। গোপন স্থান থেকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র হরমুজ প্রণালিকে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের কবরস্থানে পরিণত করবে। পাশাপাশি ইরান ও তার মিত্ররা পুরো অঞ্চলে দুর্দান্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। কোনো যুদ্ধবাজ শক্তির সঙ্গে লড়াই করার ইচ্ছা এবং সামর্থ্য দুটোই এই জোটের রয়েছে। স্বল্প পরিসরে সামরিক হামলা চালিয়ে আগ্রাসনকারী ও তার সহযোগীদের ব্যাপক ও বিস্তৃত ক্ষয়ক্ষতি করার সক্ষমতা রয়েছে ইরানের। সেই সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক সুবিধা প্রদানকারী সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের তেল খনি ও স্পর্শকাতর স্থাপনায় দ্রুত বিপুল ক্ষতি করার মতো সক্ষমতা রয়েছে দেশটির। লেবাননে থাকা হিজবুল্লাহ গেরিলা, সিরিয়ায় ইরানের মিত্র যোদ্ধারা এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা যে তখন একযোগে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল ও সৌদি আরবের ওপর হামলা চালাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে ব্যাপক। বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ তেল রপ্তানি হয় ইরানের নিয়ন্ত্রণাধীন হরমুজ প্রণালি দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এই পথ দিয়ে প্রতিদিন দুই কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়েছে। ওপেক সদস্য সৌদি আরব, আমিরাত, কুয়েত ও ইরাক তাদের অধিকাংশ অপরিশোধিত তেল এই পথ দিয়ে রপ্তানি করে। কাতারের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসও এই পথ দিয়ে রপ্তানি হয়।

তাই যুদ্ধ বাঁধলে স্বাভাবিকভাবে ইরান হরমজু প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। প্রাণে বাঁচতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ অভিমুখে ছুটবে লাখ লাখ মানুষ। আবুধাবি ও দুবাইয়ে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের দেশে ফিরে যাবে। এর মানে হচ্ছে, একদিকে মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে। এর পাশাপাশি ‍বিদেশি শ্রমিকরা তাদের দেশে ফিরে যাওয়ায় ওই সব দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহতে বড়সর ধাক্কা আসবে।

পশ্চিমাদের জন্য তাই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়া মানেই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মহাবিপর্যয়। এখন দেখার বিষয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যুদ্ধের এই ঝুঁকি নেবে নাকি সব ভুলে ইরানের কাঁধে হাত রাখবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ২৩,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর