thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

ভারত কাশ্মির চায়, কাশ্মিরিদের নয়

২০১৯ আগস্ট ০৭ ১৬:৫৯:১৩
ভারত কাশ্মির চায়, কাশ্মিরিদের নয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: কিছুদিন ধরেই ভারত সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে কাশ্মিরে দুই ধরনের মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল: ক্ষোভ অথবা আশা। কিন্তু কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিল এবং জম্মু-কাশ্মিরকে দ্বিখণ্ডিত করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার খবর শোনার পর মঙ্গলবার কাশ্মিরিদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে শুধু পরাজয়ের চিহ্ন।

শ্রীনগরের লাল চকের কাছাকাছি এলাকার ৪৫ বছরের বাসিন্দা সাঈদ খান বলেন, এখন আর মত জানতে চেয়ে কী লাভ? সবকিছুই তো শেষ।

কাশ্মিরের রাজধানী যেন এক ভুতুড়ে শহর এবং খানের এই অনুভূতি অনেকের কথাতেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে: হোক তা বাটমালোর এক ফল বিক্রেতা বা জনমানবহীন ঈদগাহের পাশ দিয়ে ছেলে হাঁটিয়ে নেওয়া কোনও এক বাবা কিংবা রামবাগে ব্যারিকেডের পাশে প্রহরায় দাঁড়ানো এক পুলিশ সদস্য।

রবিবার থেকে কার্যত অচল শ্রীনগর। টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট বন্ধ, উপত্যকাজুড়ে বিধিনিষেধ এবং অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনে শ্রীনগরে দখলকৃত কোনও শহর বলেই মনে হচ্ছে।

সাঈদ খান বলেন, ২০১৬ সালের বিক্ষোভের পর গত বছর পরিস্থিতির দারুণ উন্নতি হয়েছে। স্বাধীনতাপন্থীরা জেলে, কোনও ধর্মঘট বা হরতাল নেই, ইট-পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা খুব কম হয়েছে, স্কুলগুলো চলছিল, দোকান-পাট ছিল খোলা এবং পর্যটকদের আগমন বেড়েছিল। সবাই খুশি ছিল। কিন্তু একটি সিদ্ধান্তেই ভারতের পক্ষে থাকা সব কাশ্মিরিকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে সরকার। আমি জানি না, কবে কখন আমরা এই সিদ্ধান্তের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাবো।

সাঈদের প্রতিবেশী ও বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা (সরকার) ক্ষমতায় এতোই নিমজ্জিত যে তারা আমাদের মানুষ হিসেবেই মনে করছে না। তাদেরকে এই সিদ্ধান্তের ফল ভোগ করতে হবে না, আমাদেরকেই তা করতে হবে।

এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে সারাইবাল এলাকার বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ উনওয়ানি চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ। দক্ষিণ কাশ্মিরের ল্যাঙ্গেট কলেজের এই শিক্ষার্থী বলেন, কাশ্মির রাজনীতির বারুদের এক আগ্নেয়গিরি। তারা ওমর ও মুফতিকে জেলে পাঠিয়েছে। তারা আমাদের এমএলএ ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা করছে, যে ব্যক্তি আমাদের ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে বিরত থাকতে বলতেন। আর এখন এই সিদ্ধান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে বারুদ ঢেলে দিলো।

জম্মু-কাশ্মিরের পুলিশের মধ্যেও উদ্বেগের ছায়া। এক কনস্টেবল বলেন, আমি সরকারি কর্মচারি। আমি নির্দেশ পালন করি। কিন্তু আমার ছেলের কাছে এর কী ব্যাখ্যা দেবো আমি? তাকে কীভাবে বুঝাবো যে ভারত রাষ্ট্র তার সম্পর্কে কী ভাবছে এবং কেন তার ইট-পাটকেল ছোড়ায় যুক্ত হওয়া উচিত না। তরুণরা বলাবলি শুরু করছে, যখন মৃত্যু আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে তখন স্কুলে গিয়ে কী হবে।

অনিশ্চয়তা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যেও। কেউই জানেন না এই অচলাবস্থা কবে কাটবে ও যোগাযোগ ব্যবস্থা কতদিন বন্ধ থাকবে। যখন এই অবস্থা তুলে নেওয়া হবে তখন কী ঘটবে।

জম্মু-কাশ্মির পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এটা অপ্রত্যাশিত। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কখনও পড়িনি। এই বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। আমরা টিভি থেকে ঘটনা জেনেছি। আপাতত আমরা শুধু নির্দেশ পালন করছি।

গত কয়েক দিনে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের সহিংসতা হয়নি কাশ্মিরে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার দেখা মিলেছে মঙ্গলবারের শ্রীনগর-দিল্লি-শ্রীনগর ফ্লাইটেও। দিল্লি থেকে মাত্র ৩০ জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট যায় শ্রীনগরে। কিন্তু দিল্লি ফিরে একেবারে পূর্ণ হয়ে।

শ্রীনগরগামী ফ্লাইটের যাত্রীদের বেশির ভাগই ছিলেন উদ্বেগে থাকা কাশ্মিরি। যারা বাড়িতে ফিরতে উন্মুখ ছিলেন। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী, মালয়েশিয়া থেকে মেয়েকে দেখতে আসা এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কিংবা পরিবারকে নিয়ে ভ্রমণ করা এক ব্যবসায়ী; কেউ নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আমার বড় ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে, ছোট ছেলে মালয়েশিয়ায়। দুই মাস ধরে আমি মালয়েশিয়ায় ছিলাম। গতকাল দিল্লিতে পৌঁছে হতবাক হয়ে যাই। বড় ছেলে বলছিল যুক্তরাষ্ট্র চলে যেতে। কিন্তু আমার মেয়ে থাকে শ্রীনগরে। গত কয়েকদিন ধরে তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।ফলে আমি তাড়াহুড়ো করে রওনা দেই। আমরা জানি না কীভাবে বাড়িতে পৌঁছাবো। কারণ কাশ্মিরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। শ্রীনগর পৌঁছে দেখা যাবে কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি-না।

এম. টেক ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থীর হাতে ছিল ৩৭০ ধারা বাতিলের খবর সম্পর্কিত একটি স্ক্রিনশট। তিনি বলেন, আমি পুলওয়ামাতে থাকি। জানি না আমার বাবা-মা এই খবর সম্পর্কে জানেন কিনা। স্যাটেলাইটের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। শ্রীনগর পৌঁছে যদি কোনও গাড়ি না পাই তাহলে আমাকে হেঁটে পুলওয়ামা যেতে হবে।

নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত এই শিক্ষার্থী। বলেন, পড়াশোনা শেষ করে কাশ্মিরের কোনও কলেজে শিক্ষকতার পরিকল্পনা ছিল আমার। কিন্তু ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ায় আমার এই সুযোগও শেষ। এমনিতেই কাশ্মিরে কোনও কর্মসংস্থান নেই। তারা মনে করছে এভাবে আমাদের মন জয় করা যাবে। কিন্তু এটা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, তারা শুধু কাশ্মির চায়, কাশ্মিরিদের নয়।

শ্রীনগরের ঈদগাহ এলাকার ডায়পার নির্মাতা ও উদ্যোক্তা গত ১২ দিন ধরে কলকাতা ও দিল্লিতে ছিলেন। তিনি জানান, শ্রীনগর যাচ্ছেন পরিবারের লোকদের নিয়ে আসতে। কিন্তু বলেন, এক সিদ্ধান্তেই তারা সবকিছু শেষ করে দির। ভারতের হাত থেকে চলে গেলো কাশ্মির। তারা পাকিস্তানের প্রবেশের পথ করে দিলো। গত কয়েক বছরে যা অর্জন সব হারিয়ে গেলো। তারা ওমর ও মেহবুবাকে তীব্র অশ্রদ্ধা করেছে, যারা ছিল তাদের লোক। কাশ্মিরিদের সঙ্গে তাদের যে সেতুবন্ধন ছিল তা ছারখার করে দিয়েছে তারা। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ০৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর