thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

‘আমাজন পৃথিবীর ফুসফুস হলে সুন্দরবন বাংলাদেশের ফুসফুস‘

২০১৯ আগস্ট ২৭ ১৯:১৯:৪২
‘আমাজন পৃথিবীর ফুসফুস হলে সুন্দরবন বাংলাদেশের ফুসফুস‘

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ‘বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেন তৈরিকারী বন আমাজন যদি পৃথিবীর ফুসফুস হয় তাহলে সুন্দরবন হলো বাংলাদেশের ফুসফুস,‘ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তরল গ্যাস বোতলজাতকরণ প্রকল্পের জন্য এলপিজি কারখানা স্থাপনে পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য করা পৃথক তিনটি আবেদন শুনানির সময় মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেছেন।

সুন্দরবন নিয়ে শুনানির সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘আজ আমাজন পুড়ছে। বিশ্বের মানুষ আমাজনকে রক্ষায় সচেষ্ট। আমাজন যেমন পৃথিবীর ফুসফুস ঠিক তেমনই সুন্দরবন আমাদের ফুসফুস। তাই সুন্দরবনকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।’

পরে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

তিনি জানান, এলপিজি কারখানা স্থাপনে পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য করা পৃথক তিনটি আবেদনের বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে সুন্দরবনের মোংলা এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে শিল্প এলাকায় বোতলজাত এলপিজি উৎপাদনের জন্য রিটাকারী কোম্পানিকে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

সঙ্গে সঙ্গে রায়ের দেয়া পর্যবেক্ষণে সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় কতগুলো শিল্প কারখানা হবে, সেটা নির্ধারণ করবে সরকার। ভবিষ্যতে সংকটাপন্ন এলাকায় নতুন শিল্প স্থাপন বন্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে এ রায় বাধা হবে না বলেও পর্যবেক্ষণ দেন আদালত।

২০১৬ সালে এলপিজি কারখানা স্থাপনে পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে আবেদন করে তিনটি কোম্পানি। সরকারের অপরাপর প্রতিষ্ঠানের অনুমতি পেলেও পরিবেশগত ছাড়পত্র পাচ্ছিল না কোম্পানিগুলো।

পরে ২০১৮ সালের অক্টোবরে এলপিজি কারখানা স্থাপনে পরিবেশগত ছাড়পত্র না পাওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করে টিএমএমএসসহ অন্যান্য কোম্পানি। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় ঘোষণা করা হয়েছে আজ।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

শুনানিতে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, টিএমএমএস একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। তারা পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে বোতলজাত এলপিজি কারখানা করতে চায়। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর ছাড়পত্র দিচ্ছে না।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর বিরোধিতা করে বলেন, একজনকে দেয়া হয়েছে বলে কারখানা করার জন্য আরেকজনকে দিতে হবে, বিষয়টি এমন হলে তো আর এভাবে পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন থাকবে না।

আদালত বলেন, ডিসক্রিমিনেশন হচ্ছে না তো। সেখানে ১৫৪টি বিভিন্ন রকমের ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সুন্দরবনের পরিবেশগত অবস্থা যাতে ঠিক থাকে তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশনা চান। আদালত তাতে সাড়া না দিয়ে রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।

গত ২৩ আগস্ট দেশের গণমাধ্যমে ‘পুড়ে ছাই হচ্ছে পৃথিবীর ফুসফুস’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ পায়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, আগুন লেগেছে আমাজনে, ভয়াবহ আগুন। দিকে দিকে সে আগুনে পুড়ে কয়লা হচ্ছে শতসহস্র বর্গমাইলের চিরহরিৎ বন। প্রাণ বাঁচাতে আগুনের মুখে ছুটছে অবলা প্রাণিকুল, না পেরে পড়ে থাকছে অঙ্গার হয়ে। কিন্তু কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সে আগুন, পুড়ে খাক হচ্ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’।

প্রায় ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের আমাজন বন আকারে ইউরোপ মহাদেশের প্রায় অর্ধেক। ব্রাজিলের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেশির ভাগ এলাকা, কলম্বিয়া, পেরুসহ দক্ষিণ আমেরিকার নয়টি দেশে বিস্তৃত এই বন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ২৭ ,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর