thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

জাহালম কাণ্ড: ১১ দুদক কর্মকর্তার নাম হাইকোর্টে

২০১৯ আগস্ট ২৮ ২২:৫৫:৪৯
জাহালম কাণ্ড: ১১ দুদক কর্মকর্তার নাম হাইকোর্টে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাহালমকাণ্ডে নিজেদের যে ১১ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে সেই কর্মকর্তাদের নাম ও কোন কর্মকর্তা কী জন্য দায়ী তা হাইকোর্টের কাছে উপস্থাপন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতিকে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই তালিকা উপস্থাপন করেন।

নিজেদের যে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে দুদক তারা হলেন- সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল্লাহ-আল-জাহিদ, রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মেজবাহ উদ্দিন, উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান, বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক (সাবেক সহকারী পরিচালক) দেবব্রত মণ্ডল, উপপরিচালক সেলিনা আক্তার মনি, ঢাকা-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমিত্রা সেন, সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস, সহকারী পরিচালক মেফতাহুল জান্নাত, সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সাবেক উপসহকারি পরিচালক) রাফী মো. নাজমুস সাদাত।

জাহালমকাণ্ডে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। এরা হলেন- শ্যামলী শাখার ব্যবস্থাপক সাবিনা শারমীন ও আসাদগেট শাখার ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. ফয়সাল কায়েস।

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংক পৃথক এক প্রতিবেদন দিয়ে হাইকোর্টকে জানিয়েছে, জাহালমের ঘটনার প্রেক্ষাপটে নিজেদের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এরা হলেন- সোনালী ব্যাংকের মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক আজিজুল হক, একই শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক আখলাফুন নাহার, একই শাখার সাবেক সিনিয়র অফিসার নিজাম উদ্দিন, একই শাখার সাপোর্টিং সাব স্টাফ মো. মাইনুল হক, ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাপোর্টিং সাব স্টাফ মো. মিজানুর রহমান, স্থানীয় কার্যালয়ের সাপোর্টিং সাব স্টাফ আজিজুল হক, স্থানীয় কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান এবং স্থানীয় কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহতাব উদ্দিন।

আজ শুনানির পর হাইকোর্ট আগামী ২৪ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ মো. জাকির হোসেন। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

এর আগে গত ২১ জুলাই দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেছিলেন, দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্তের আলোকে জাহালমের মামলা সংশ্লিষ্ট দুদকের ১১ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।

এরপর আদালত বলেন, আমরা সাধুবাদ জানাই যে দুদক ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন তাদের নাম কোথায়?

জবাবে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, নামগুলো দুদক আমাকে দেয়নি তাই আপনাদের কাছে দেয়া প্রতিবেদনে নামগুলো উপস্থাপন করা হয়নি।

দুদক আইনজীবীর জবাবে আদালত বলেন, আমরা এ প্রতিবেদন আজ গ্রহণ করছি না। নাম-পরিচয়সহ ওই কর্মকর্তাদের তথ্য আমাদের আবার দেবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কী কারণে মামলা করা হয়েছে, সে কারণগুলোসহ প্রতিবেদন দিন। সেই অনুযায়ী আজ দুদক প্রতিবেদন আকারে তাদের কর্মকর্তাদের বিষয়টি হাইকোর্টে উপস্থাপন করেন।

পাটকল শ্রমিক জাহালমের প্রায় ৩ বছর ভুল আসামী হয়ে কারাভোগের বিষয়ে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সার্বিক বিবেচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, জাহালমকে আবু সালেকরূপে চিহ্নিত করার যে ভুলটি হয়েছে, তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে।’

এর আগে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না, আমি নির্দোষ।’

আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ২৬টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। যিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।

এরপর তদন্ত করে দুদক বলেছে, জাহালম নিরপরাধ। একই মত দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

পত্রিকায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। এরপর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে ক্ষতিপূরণ রুলসহ জাহালমকে মুক্তির আদেশ দেন। এ আদেশের পর কারামুক্ত হন জাহালম।


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ২৮,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর