thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

‘ক্যাসিনো খালেদ’ যুবলীগ থেকে বহিষ্কার

২০১৯ সেপ্টেম্বর ২০ ১৬:৩৪:১৮
‘ক্যাসিনো খালেদ’ যুবলীগ থেকে বহিষ্কার

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতার যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শৃংখলাভঙ্গের অভিযোগে শুক্রবার তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ।

খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকাসহ নানা অভিযোগ উঠে। পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার তাকে অস্ত্র ও নারীসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় দেশব্যাপী। যুবলীগের ইমেজ মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পরিপ্রেক্ষিতে খালেদকে আজ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় যুবলীগ।

গত রাতে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় ইয়ংমেন্স ক্লাবের নিষিদ্ধ জুয়ার ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে ১৪২ নারী-পুরুষকে আটক করে র্যা ব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদা দাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। যুবলীগের কয়েক নেতা সম্পর্কেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে।

আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরও দমন করা হবে।

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ওইসব কথা বলেছিলেন বলে জানান অনেক নেতা।

এরপরই যুবলীগের বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় প্রশাসন। বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয় যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদকে।

যুবলীগের একটি সূত্র জানায়, গণমাধ্যমে অভিযোগের খবর আসার পর প্রথম পর্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে শোকজ করা হয়।

যুবলীগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুবলীগের কোনো নেতা বা কোনো শাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সংগঠনটি নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এর তদন্ত ও বিচার করবে। এ জন্য যুবলীগ চেয়ারম্যান বা সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযোগ ও প্রমাণ পাঠাতে বলা হয়েছে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে এগুলো চলার পাশাপাশি বুধবার র‌্যাব তার বাসা এবং ক্লাবে অভিযান চালায়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে খবর ছড়িয়ে পড়ে খালেদকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়; কিন্তু তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পরে বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ওই দুই নেতাকে (সম্রাট-খালেদ) শোকজ করা হয় দুদিন আগে।

ওই নেতা আরও বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রথমবার শোকজের চিঠি পাঠানোর পর জবাব মনঃপূত না হওয়ায় সম্প্রতি দ্বিতীয়বার শোকজের চিঠি পাঠানো হয়। এই চিঠির জবাব নিয়ে আগামীকাল শনিবার তাদের সরাসরি ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল।

উল্লেখ্য, বুধবার ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবে নিষিদ্ধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র‌্যাব। এখান থেকে দুই নারীসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোতে মদ আর জুয়ার বিপুল সরঞ্জামের পাশাপাশি প্রায় ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ক্লাবটির সভাপতি যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অনেক দিন ধরে এখানে জুয়াসহ নানা অপকর্ম চলছিল। সাম্প্রতিককালে অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার পর বুধবার অভিযান পরিচালিত হয়। ইয়াংমেন্স ক্লাবের পর ওই রাতেই ঢাকার আরও তিনটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব।

বুধবার রাতেই গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনি মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যা ব। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ ক্যাসিনোর নেতৃত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।

খালেদ মাহমুদের সন্ধানে বুধবার দুপুরের পর থেকে তার গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর রোডের ৫নং বাসা ঘিরে রাখে র্যা ব। প্রিমোরোজ গার্ডেন নামে ৬ তলাবিশিষ্ট এ ভবনের তিনতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন যুবলীগ নেতা খালেদ।

বাড়ির ব্যবস্থাপক জানান, প্রথমে ডিবি পরিচয়ে একদল লোক বাসায় আসে। এর পর আসে র‌্যাব। রাতে এখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বাসার লকার ও দেয়াল আলমিরা থেকে অবৈধ অস্ত্র, ইয়াবা, টাকা, ডলার উদ্ধার করা হয়।

শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবের সভাপতি। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ক্লাবটি একসময় ফুটবল খেলার জন্য বিখ্যাত ছিল। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নানা ধরনের অপকর্ম শুরু হয়। বসে জুয়ার আসর। তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে অনেককে হাহাকার করতে দেখা গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গ্রেফতার খালেদ বর্তমানে ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন। ৭ দিনের রিমান্ডে এখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২০,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর