thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

দিনমজুর থেকে ‘মোহাম্মদপুরের সুলতান’ রাজীব

২০১৯ অক্টোবর ২০ ১০:১৩:২৫
দিনমজুর থেকে ‘মোহাম্মদপুরের সুলতান’ রাজীব

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ছিলেন দিনমজুর। বহু কষ্টে জমানো টাকায় খুলে বসেছিলেন একটা টং দোকানও। তারপর খুব দ্রুত বদলে গেল সবকিছু। দিনমজুর সেই লোকটিই রাতারাতি হয়ে গেল বিলাসবহুল আটটি বাড়ি আর মার্সিডিস, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টসসহ নামিদামি সব ব্র্যান্ডের গাড়ির মালিক। এই হলো কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীবের গল্প।

রাজীবের গল্পটা শুনে মনে হতেই পারে যে, সে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ পেয়েই ধনী হয়ে গেছে। কিন্তু গল্প আর বাস্তব এক নয়। তবে গল্পের সাথে বাস্তবের কিছু মিল থেকেই যায়। রাজীবের আলাদীনের প্রদীপ না থাকলেও ছিল প্রদীপের দৈত্যের মতো বিশাল রাজনৈতিক গডফাদার। মূলত এই গডফাদারদের জোরেই টং দোকানদার থেকে মোহাম্মদপুরের `সুলতান’ হতে পেরেছিল রাজীব।

জানা গেছে, মোহাম্মদপুরে যুবলীগ দিয়েই শুরু রাজীবের রাজনৈতিক জীবন। মাত্র এক বছরের রাজনীতি করেই বাগিয়ে নেয় মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কের পদ। এ পদ পেয়েই থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করে। সে সময় যুবলীগ থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়। শোনা যায়, রাজীব মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে উল্টো ঢাকা মহানগরী উত্তর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বনে যায়। এই পদ কিনতে সে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ করেছিল বলে জানা যায়।

২০১৪ সালে কাউন্সিলর হওয়ার পর মাত্র কয়েক বছরেই রাজীব কয়েক শ কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। শোনা যায়, কাউন্সিলর নির্বাচন করার আগে রাজনীতির পাশাপাশি এক চাচাকে কাজকর্মে সহযোগিতা করতো সে। ওই চাচা ঠিকাদারি করতেন। নির্বাচনের সময় তার ওই চাচা একটি জমি বিক্রি করে ৮০ লাখ টাকা দিয়ে রাজীবকে কাউন্সিলর নির্বাচন করতে সহযোগিতা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ওই চাচার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে রাজীব।

মাত্র ছয় বছর আগেও মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির একটি বাড়ির নিচতলার গ্যারেজের পাশেই ছোট্ট এক বাড়িতে ৬ হাজার টাকায় সস্ত্রীক ভাড়া থাকত রাজীব। তবে এখন একই হাউজিং এলাকায় নিজের ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে তার। নামে-বেনামে তার অন্তত ৬টি বাড়ি রয়েছে শুধু মোহাম্মদপুরেই। বিদেশেও আছে অঢেল সম্পত্তি।

জানা গেছে, রাজীবের আয়ের মূল উৎস হলো সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, জমি দখল, তদ্বির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো ব্যবসা।

২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে রাজীব ছিল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বিভিন্ন কারসাজি করে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারায় সে। অভিযোগ রয়েছে, এর পর থেকেই এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নানাভাবে অপমান অপদস্থ করে আসছিল সে। মোহাম্মদপুরের পুরো নিয়ন্ত্রণই চলে গিয়েছিল তার হাতে। মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, বসিলার পরিবহনে চাঁদাবাজি এবং অটোরিকশা, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বাস থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলে তার লোকজন। পাঁচ বছর ধরে এলাকার কোরবানির পশুর হাটের ইজারাও নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল রাজীব। সেপ্টেম্বরে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর সে অন্তত ২০০ কোটি টাকা খরচ করে তার গ্রেপ্তার আটকাতে চেয়েছিল বলে দাবি করেছে একটি সূত্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার সমস্ত চেষ্টাই বিফলে গেল। গতরাতে র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর ছয় বছর ধরে গড়ে তোলা রাজীবের সাম্রাজ্যের পতন ঘটলো।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ২০,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর