thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

র‍্যাগিং ও রাজনীতিতে জড়িত হলে বুয়েট থেকে বহিষ্কার

২০১৯ ডিসেম্বর ০৩ ১২:০০:০৮
র‍্যাগিং ও রাজনীতিতে জড়িত হলে বুয়েট থেকে বহিষ্কার

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: র‍্যাগিংয়ের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করবে। এখানেই শেষ নয়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা করবেন। কোনো শিক্ষার্থী রাজনীতিতে জড়িত হলেও তাকে বহিষ্কার করবে বুয়েট।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বুয়েট প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সোমবার জারি করা নতুন নীতিমালায় ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো শিক্ষার্থী রাজনীতিতে জড়িত থাকলে, রাজনৈতিক পদে থাকলে, রাজনীতি করতে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে, বা রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে গেলে (ক্যাম্পেইন, মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নেয়া, গ্রাফিতি অঙ্কন, পোস্টারিং ইত্যাদি) তার শাস্তিস্বরূপ সতর্কতা, জরিমানা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো মেয়াদে বহিষ্কার বা চিরতরে বহিষ্কার করা হবে। অর্থাৎ, বুয়েটে কেউ সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি করলে সর্বোচ্চ সাজা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার।

র‍্যাগিংয়ের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে কয়েক ধাপে। র‌্যাগিংয়ে কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুর শাস্তি বুয়েট থেকে বহিষ্কার ও থানায় মামলা দায়ের। কোনো ছাত্র গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হলে অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে।

মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা এবং সাময়িক মানসিক ক্ষতিসহ এ-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সতর্কতা, জরিমানা, হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার বা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত রাখা। এ ধরনের অপরাধীকে শিক্ষাজীবনে ফিরতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউন্সেলিং করতে হবে।

ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। গত ১৩ নভেম্বর এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

পরে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বুয়েটের ২৬ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আরও ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদ বহিষ্কার করা হয়েছে।

আবরারের বাবার দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র জমার প্রতিক্রিয়ায় ১৪ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, তিনটি দাবি বাস্তবায়ন হলে তারা একাডেমিক অসহযোগ থেকে সরে গিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন। তারা আরও বলেছিলেন, তিন দফা দাবি পূরণ হলে ২৮ ডিসেম্বর থেকে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিতে তারা প্রস্তুত আছেন। সেই দাবিগুলোর একটি ছিল অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার। দাবি অনুযায়ী ২৬ জন শিক্ষার্থীকে আজীবন বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ৬ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়।

তিন শর্তের দ্বিতীয়টি ছিল বুয়েটের আহসানউল্লাহ, সোহরাওয়ার্দী ও তিতুমীর হলে এর আগে ঘটে যাওয়া র‍্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোতে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি। গত বৃহস্পতিবার বুয়েটের আহসানউল্লাহ ও সোহরাওয়ার্দী আবাসিক হলের ৯ ছাত্রকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম চার থেকে সাত টার্ম পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে। আহসানউল্লাহ হলের চার ছাত্রকে সতর্ক করা হয়। আর সোহরাওয়ার্দী হলের ১৭ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়।

শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দাবিটি ছিল, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‍্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে তা সংযোজন করা। সোমবার সেই দাবিটিও পূরণ করা হলো।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ০৩,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর

ক্যাম্পাস - এর সব খবর