thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা কমছে

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৭ ১১:২০:৪৫
১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা কমছে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ব্যর্থতার ঘানি টানছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। বৈদেশিক সহায়তা থেকে চলতি অর্থবছরে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বরাদ্দ কাটছাঁট করা হচ্ছে। এটি গত অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা বেশি।

মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ব্যর্থতার ঘানি টানছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। বৈদেশিক সহায়তা থেকে চলতি অর্থবছরে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বরাদ্দ কাটছাঁট করা হচ্ছে। এটি গত অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা বেশি।

ছয় মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অর্থব্যয় কাঙ্ক্ষিত না হওয়ায় সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ চূড়ান্ত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ইআরডি ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রোববার পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দিয়ে ইআরডির পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন সম্পর্কে জানানো হয়েছে। কিন্তু এত টাকা কমানোর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।

এ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের দোহাই দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এটি অবশ্যই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ব্যর্থতা।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন রোববার বলেন, ইআরডির চিঠি এখনও তার কাছে আসেনি। তবে এত টাকা কমার তো কোনো কারণ দেখছি না। অর্থবছরের শুরু থেকে বৈদেশিক সহায়তাসহ সার্বিক এডিপির বাস্তবায়ন বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বরাদ্দের চিঠি পেলে কারণ খতিয়ে দেখা হবে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে কঠোর গোপনীয়তায় বৈদেশিক সহায়তা হিসাব-নিকাশ করে ইআরডি। শুরুতে সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত অর্থবছরের চেয়ে কম টাকা ছেঁটে ফেলতে হবে। কিন্তু চূড়ান্ত হিসাবে তার উল্টোচিত্র উঠে এসেছে।

পরিকল্পনা কমিশনকে দেয়া ইআরডির প্রাক্কলনের হিসাব দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে বরাদ্দ রয়েছে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির জন্য বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া খাতভিত্তিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাটছাঁট করা হয়েছে পরিবহন খাতের বরাদ্দ।

এ খাতে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৯১৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সেখান থেকে তিন হাজার ৮০২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কমিয়ে আরএডিপিতে রাখা হচ্ছে ১৭ হাজার ১১২ কোটি ২০ লাখ টাকা।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প প্রস্তাবে কোন বছরে কত টাকা এবং কোন কোন খাতে কত ব্যয় হবে, তার একটি পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু সে অনুযায়ী খরচ হচ্ছে না কেন? এখানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর দক্ষতা ও অবহেলা রয়েছে। এটা মোটেও কাম্য নয়।

ড. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, আমরা শুরু করি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে। এরপর যে অর্থ পাওয়া যায় সেটিও ব্যয় করতে পারি না। এটা প্রতি বছরের চিত্র। তবে চলতি অর্থবছর কেন এতো টাকা কমাতে হচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু প্রকল্পে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। অধিকাংশ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে সরকার, না হয় অন্য কোনো দেশ বা সংস্থা। তাহলে এখানে করোনাভাইরাসের দোহাই দেয়ার কোনো সুযোগই থাকে না।

ইআরডির দাবি- মূল এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপিতে প্রতি বছর বরাদ্দ কমে। কিন্তু গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় এ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে ১১ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে বরাদ্দ ছিল ৫১ হাজার কোটি টাকা।

আইএমইডি সূত্র জানায়, বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা দেশের অনুমতি নিতে হয়। এতে বেশকিছু সময় চলে যায়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়।

এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ঋণ চুক্তির সময় উন্নয়ন সহযোগীরা অহেতুক কিছু শর্ত আরোপ করে, যা এ দেশের কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন না। বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অর্থছাড়ে জটিলতা দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা এবং উদাসীনতায়ও প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়।

চলতি অর্থবছরে ইআরডির প্রস্তাবিত ১৭টি খাতে বরাদ্দ হল- কৃষি খাতে এক হাজার ৭৬৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা মূল এডিপিতে ছিল দুই হাজার ৭৯১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পল্লী উন্নয়ন খাতে দুই হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, যা মূল এডিপিতে রয়েছে তিন হাজার ৪১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

পানিসম্পদ খাতে ৯০৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মূল বরাদ্দ এক হাজার ২০৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যসব খাতে সংশোধিত এডিপিতে প্রাক্কলিত বরাদ্দ- শিল্প খাতে ২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা; বিদ্যুৎ খাতে ১০ হাজার ৩১২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা; তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে এক হাজার ২৮৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা; যোগাযোগ খাতে ৪১৭ কোটি টাকা; ভৌত অবকাঠামো খাতে পাঁচ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা; শিক্ষা ও ধর্ম খাতে দুই হাজার ২০৩ কোটি টাকা; ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ নেই; স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা এবং পরিবারকল্যাণ খাতে তিন হাজার ৭০৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা; বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১২ হাজার ১৫৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা; গণমাধ্যম খাতে ২২ কোটি টাকা; শ্রম ও মানবসম্পদ খাতে ১৮ কোটি টাকা এবং সমাজকল্যাণ খাতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এসব খাতে কারিগরি সহায়তা কর্মসূচিতেও কিছু বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের (২০১৮-১৯) এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সেখান থেকে সাত হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ৫১ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়।

এ বরাদ্দও পুরোপুরি ব্যয় হয়নি। পুরো অর্থবছর বৈদেশিক সহায়তা অংশ থেকে ব্যয় হয়েছিল ৪৭ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা বা ৯২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অব্যবহৃত অর্থ থেকে যায় তিন হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা বাস্তবায়নের এ হার তার আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) তুলনায়ও কম।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ১৭,২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর