thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

আম্পানের তাণ্ডবে কোন জেলায় কেমন ক্ষয়ক্ষতি

২০২০ মে ২২ ০৯:৪৯:১৪
আম্পানের তাণ্ডবে কোন জেলায় কেমন ক্ষয়ক্ষতি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেলো ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আগে থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে এই আম্পানের তাণ্ডবে। সমুদ্রের প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটারজুড়ে ছিলো আম্পানের বিস্তৃতি। তবে আগে থেকেই নানা প্রস্তুতির ফলে আশঙ্কা অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এর প্রভাব ছিলো লক্ষ্য করার মতো। দেশের বেশকিছু জায়গায় ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের মধ্যে প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন দেশের অর্ধেকের বেশি গ্রাহক। অনেক জায়গায় ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেকে।

উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে আম্পান এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আম্পান স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এটি এখন রাজশাহী-রংপুর হয়ে ক্রমশ উত্তরদিকে সরে যাচ্ছে। এ কারণে রাজশাহী, রংপুর অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। আগামী কয়েক ঘণ্টা পর এ স্থল নিম্নচাপের কেন্দ্র ক্রমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে রংপুরের দিকে চলে যাবে। তবে আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে এ অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দিনভর এ অবস্থা থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। দেখে নেয়া যাক আম্পানের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতির সর্বশেষ অবস্থা

সুন্দরবন

আম্পানের প্রভাবে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে। গাছ গাছালির মধ্যে কেওড়া গাছ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুন্দরবনে থাকা বন বিভাগের ১০টির বেশি কাঠের জেটি এবং ৩০টির বেশি স্টাফ ব্যারাকের টিনের চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বনবিভাগের ৬০টির বেশি পুকুরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে।

তবে সুন্দরবন হচ্ছে দেশকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষায় ঢালস্বরুপ। দেশকে নানা দুর্যোগ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই সুন্দরবন। বনটির ক্ষয়ক্ষতি হলেও কয়েক বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মে অনেকখানি সামলে ওঠে। তাই আম্পানের তাণ্ডবে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে চারটি কমিটি করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সহকারী বন সংরক্ষক পদাধিকারী রেঞ্জ অফিসারদের নেতৃত্বে এসব কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিগুলোকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

বরিশাল

বরিশালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এবার ব্যাপক কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও প্রাণহানি হয়েছে বেশ কয়েকজনের। ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে গাছচাপা পরে ২ জন, নৌকাডুবিতে ২ জন এবং দেয়াল চাপা পড়ে ১ জন মারা যায়। এছাড়া বেশ কিছু জায়গায় কাঁচা ঘর-বাড়ি, ফসল, বিদ্যুৎ ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন।

ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল দু-একটি জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে, কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ওইসব ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। ৯৫ ভাগ জায়গায় বিদ্যুত সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

ঝড় শুরুর আগেই বিভাগের ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৩ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলো। এছাড়া ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৪টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। তবে বিভাগে মারাত্মক কোন ক্ষতি হয়নি বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, বিদ্যুৎ, কাঁচা ঘর-বাড়ি, বেড়িবাঁধ, মৎস্য ও কৃষি বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে দ্রুততার সাথে কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করা হবে।

সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরা শহরের কামাননগর এলাকায় গাছচাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মাপুকুর, গবুরা ও আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চাউলখোলা এলাকায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০০ ফুটের মত এলাকা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। কামালকাটি ও চন্ডিপুর এলাকায়ও একই অবস্থা। গাবুরা ইউনিয়নের জেলেখানি ও নাপিতখালী এলাকা, আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, হিজলা, দিঘলাররাইট, কোলা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকছে বলে নিশ্চিত করেছেন আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা।

এদিকে সাতক্ষীরা শহর, পাটকেল ঘাটা, তালা ও কলারোয়ায় গাছ গাছালি ভেঙ্গে ও কাঁচা ঘরবাড়ী ও টিনের চাল উড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া মরিচপাচসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। হালকা দমকা হওয়ার সাথে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ও গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার গয়ারঘাট, হাজরাকাটি, কুড়িকাউনিয়া, মনিপুরি ও বিছট এলাকার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাটল দেখা দেয়।

আম্পানের সময় জেলার ১৪৭টি সাইক্লোন শেল্টার ও ১ হাজার ৬৯৮টি স্কুল-কলেজে ৩ লাখ ৭০ হাজার ১৫০ জন মানুষ আশ্রয় নেয়। জেলায় ১২ হাজার সেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি ১০৩ জনের মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে ২৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি উপকূল এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা ও দূর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, নোবাহিনী ও কোস্টগার্ড নিয়োজিত রয়েছে।

যশোর

সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবে অনেকটা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে যশোর। এখন পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গাছ ভেঙে বিভিন্ন সড়কে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অনেক জায়গায়।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে যশোরে নিহত ছয় জনই গাছ চাপায় মারা গেছেন। এর মধ্যে শার্শা উপজেলায় তিন জন, চৌগাছা উপজেলায় দুই জন এবং বাঘারপাড়ায় একজন রয়েছেন। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।

নিহতরা হলেন, শার্শা উপজেলার গোগা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার শাহজাহান আলীর স্ত্রী ময়না খাতুন (৪০), জামতলা এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে মুক্তার আলী (৬৫) ও শার্শা সদরের মালোপাড়া এলাকার সুশীল বিশ্বাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস (৫৫), চৌগাছা উপজেলার চানপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী খ্যান্ত বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩) এবং বাঘারপাড়া উপজেলার বুদোপুর গ্রামের সাত্তার মোল্লার স্ত্রী ডলি বেগম (৪৮)।

বুধবার মধ্যরাত ১২টার পর যশোরের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায়। গোটা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা, ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারাদিন থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হলেও রাতে প্রচণ্ড বেগে ঝড় হয়। রাত ৮টার পর থেকে বাড়তে থাকে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত। ঝড়ের গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।

ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ গাছপালা ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাতে গোটা শহরের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে রয়েছে দোকানের সাইনবোর্ড, টিনসহ বিভিন্ন ছিন্নভিন্ন জিনিসপত্র।

পটুয়াখালী

সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে ৫ বছরের শিশু রাশেদ মারা গেছে। আর কলাপাড়ায় জনসচেতনে প্রচার কাজ চালাতে গিয়ে ধানখালীর ছৈলাবুনিয়া এলাকায় খালে নৌকাডুবে নিখোজঁ সিপিপি'র দলনেতা শাহ আলমের লাশ ৯ ঘণ্টা পর উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল।

এছাড়া জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার অন্তত ১৭টি গ্রাম। উচ্চ জোয়ারে নদী-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পায়। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্ধশত চরসহ নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়।

তবে চরাঞ্চলসহ দুর্গম অঞ্চলের বেশকিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। আম্পানের ক্ষয়-ক্ষতি মনিটরিং করার জন্য জেলা ও উপজেলায় ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলায় মোট ৭৫২টি আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে ৩২৫টি ম্যডিকেল টিম করছে।

পাবনা

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে দেশের অন্যতম লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনার ঈশ্বরদীতে লিচু চাষিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। প্রায় ২২ শতাংশ আধাপাকা লিচু ঝড়ে গেছে। প্রাথমিক হিসেবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অন্তত দেড়শ’ কোটি টাকা। লিচুর বোঁটা নরম হওয়ায় ঝড়ো বাতাসে আধাপাকা প্রায় ২২ শতাংশ লিচু ঝরে পড়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার হিসাব অনুযায়ী শুধু লিচুতেই ১৫৪ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ২০ শতাংশ আম, ১০ শতাংশ সবজি এবং ২৫ শতাংশ জমির কলা নষ্ট হয়েছে।

এদিকে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে আরো ১ থেকে ২ দিন লেগে যাবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। তবে আম ও লিচু বাগানের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে অনেক চাষির পথে বসার অবস্থা বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈশ্বরদীর খ্যাতিমান চাষি এবং বাংলাদেশ ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহজাহান আলী বাদশা ওরফে পেঁপে বাদশা জানান, চলতি করোনা সংকটের কারণে সবজিপ্রধান ঈশ্বরদী এলাকার চাষিরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্থ। এখন এ ঘূর্ণিঝড় মরার উপর খড়ার ঘা’র মত। চাষিদের পুনর্বাসনে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ফল-ফসলের ক্ষতি ছাড়া ঝড়ে তেমন কোনো বড় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। কোনো হতাহতের ঘটনাও নেই। এরপরও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ সাময়িক যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত নিরসনের জন্য কাজ চলছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আম্পানের প্রভাবে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে চাঁপাইনাববগঞ্জে ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমির আম বাগানের আম ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সারাদিনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয় এবং রাত ১২টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে প্রায় ২৫ ভাগ আম গাছ থেকে ঝড়ে গেছে।

আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল ও সদর উপজেলায় ব্যাপক তান্ডবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমের। কত কয়েক বছর থেকে আমের লোকসান গুনতেই আছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমী করোনার প্রার্দুভাবের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা না কাটার আগেই আম্পান ঘূর্ণিঝড়ে আম গাছ থেকে প্রায় ২৫ ভাগ আম ঝড়ে পড়েছে বলছেন কৃষকরা। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে কিনা- এটাও প্রশ্ন তাদের মনে।

নওগাঁ

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে নওগাঁয় আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আম চাষিরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ে আম বাগানের প্রায় ৫০ শতাংশ আম ঝরে পড়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তারা এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে পারেনি।

বৃ্হস্পতিবার সকালে জেলার সাপাহার ও পোরশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাগানে–বাগানে মাটিতে পড়ে আছে ঝরে পড়া আম। ফেটে নষ্ট হয়েছে অনেক আম। কোনো কোনো বাগানে আমের গাছ উপড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ডাল ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছের।

নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এ বছর ২১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ৪ হাজার ৮০০ আম চাষির প্রায় ৭ হাজার বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৫ মেট্রিক টন। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ১ লাখ ৮৫ হাজার আম ঝরে পড়েছে। ভরা মৌসুমে আমের দাম ৪০ টাকা কেজি ধরলে এর দাম প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

নোয়াখালী

সুপার সাইক্লোন আম্পানে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় কাঁচা ঘরবাড়ি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ফসলি জমি ও মৎস্য খামারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে হাতিয়ার ৪ টি ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে ২ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেসে গেছে।

উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, চরঈশ্বর, নলচিরা ও শুখচর ইউনিয়নে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে অন্তত ৪০টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে মাছ। ৫ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ উপজেলায় কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

নিঝুমদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দীন জানান, তার ইউনিয়নে ৮-১০ ফুট জলোচ্ছ্বাস এসে ৭টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। অনেক কাঁচা পাকা রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামার তলিয়ে পানির স্রোতে মাছ ভেসে গেছে। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন বাসিন্দারা।

ঝালকাঠি

ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে বিষখালি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি ৭ থেকে ৮ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত। গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বহু স্থাপনা ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বাড়ি ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ।

বিষখালী নদীর ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঝালকাঠি সদর উপজেলার সাচিলাপুর, চরকাঠি, কিস্তাকাঠি ও চর ভাটারাকান্দা, কাঠালিয়া উপজেলার আউরা, জয়খালী, চিংড়াখালী, বড়কাঠালিয়া, আওরাবুনিয়া, রগুয়ারচরসহ কমপক্ষে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে শতশত একর জমির ফসল, জলাশয়ের মাছ ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে গেছে গ্রাম অঞ্চলের অনেক স্থানের কাঁচা সংযোগ সড়ক। গাছপালা ভেঙে ছিঁড়ে যায় বিদ্যুতের তার। জেলা শহরের কিছু এলাকায় ১৮ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়। তবে এখনও জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়নি।

বরগুনা

বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের তোড়ে ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে এখনো লোকালয়ে পানি ঢুকছে। জোয়ারের পানি ঢুকে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ও রবি ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ১৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। বুধবার রাতে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে জেলার বিভিন্ন স্থানের ১৫টি পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয়লা পাতাকাটা, জাঙ্গালিয়া, বুড়িরচর, লবনগোলা, মাইঠা, নলটোনা, পাথরঘাটার জিনতলাসহ অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, বরগুনার প্রধান তিনটি নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাড়ে আট ফুট উচ্চতায় জোয়ার প্রবাহিত হয়েছে। জোয়ারের তোড়ে পাথরঘাটা এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে।

বাগেরহাট

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে চার হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে তিন শতাধিক বাড়িঘর। এছাড়া আউশের বীজতলা ভেসে, বেড়িবাঁধ ভেঙে, গাছপালা পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার রাতের এ ঝড়ে ৩৫০টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, প্লাবিত হয়েছে ২০০ বাড়িঘর, আর চার হাজার ৬৪৯টি বাড়িঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ করছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২২মে, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর