thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৪ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

পুঁজিবাজারে ভাটা প্রবণতা, পেছনের কারণ

২০২০ নভেম্বর ২৯ ১৩:৫০:৫০
পুঁজিবাজারে ভাটা প্রবণতা, পেছনের কারণ

আব্দুল্লাহ শুভ: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্ব আসার পরপরই বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করে। বিনিয়োগকারীরা এতে আশার আলো দেখতে পান। এরই ধারাবাহিকতায় পারফরমেন্সের ভিত্তিতে সম্প্রতি বিশ্বের সেরা বাজারে ভূষিত হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সবমিলিয়ে পুঁজিবাজার বিনিয়োগবান্ধব হয়ে ওঠে বলে মত দেন বিশেষজনেরা। কিন্তু গত অর্ধমাসে বাজারের লেনদেন এবং মূল্য সূচকের ব্যাপক পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত তিনমাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে ২২ নভেম্বর রবিবার। এদিন দিনভর লেনদেন হয় মাত্র ৪৯৫ কোটি টাকা। আর সকল মূল্য সূচকের বড় পতন দেখা যায়। সোমবার ২৩ নভেম্বর সারাদিন চরম নাটকীয়কায় লেনদেন শেষ হয়। দিনের শুরুতেই ডিএসইর মুল সূচক ৫০ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর দুই কার্যদিবসে সূচক বাড়লেও লেনদেনে উত্থান দেখা যায়নি বরং কমেছে।

বাজারে সূচকের এহেন পতন এবং লেনদেনে ভাটার চিত্র দেখে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে বাজার আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে কিনা । অর্থ্যাৎ, ২০১০ সালের ধ্বস পরবর্তী সময়। ২০১০ সালে মহাবিপর্যয়ের পর শেয়ারবাজারের অবস্থা যেখানে টালমাতাল অবস্থা বিরাজ করছিল,২০২০ নতুন কমিশন দায়িত্বে আসার পর বাজার অনেকটাই ঘুরে দাড়ায়। এসময় ডিএসইর প্রধান সূচক পাঁচহাজার অতিক্রম করে এবং দৈনিক গড়ে এক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। কিন্ত গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ার বাজারের মূল্য সূচকে ব্যপক ভাটা দেখা যায়। সর্বশেষ ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪৮৬৯ পয়েন্টে।

আলোচ্য সপ্তাহ শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমে ২ হাজার ৭৬৬ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৯ টাকা। সপ্তাহশেষে ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪৮ টাকা। যা আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৯ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ২১৭ টাকা।

এদিকে গত সপ্তাহে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমান কিছুটা কমেছে। আলোচিত সপ্তাহটিতে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৬০ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৬৫৭ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহে ডিএসই’র পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১৩.০৩ যার তার আগের সপ্তাহে ছিলো ১৩.২৩।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ৩ হাজার ১৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ১৩ হাজার ২৪৯ টাকার লেনদেন হয়। যা আগের সপ্তাহ থেকে ৭৬০ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৬৫৭ টাকা বা ১৯.৪৫ শতাংশ কম হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৯০৯ কোটি ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৬ টাকার ।

ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয় ৬২৯ কোটি ৭৮ লাখ ৮২ হাজার ৬৫০ টাকার। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছিল ৭৮১ কোটি ৮২ লাখ ৭ হাজার ৭৮১ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে গড় লেনদেন ১৫২ কোটি ৩ লাখ ২৫ হাজার ১৩১ টাকা কম হয়েছে।

এসব পতনের সমীক্ষাকে আমলে নিয়ে অনেকেই বলছেন শেয়ারবাজার পুনরায় উল্টো পথে যাত্রা করলো কিনা। তবে, ডিএসইর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুসুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, বাজারের বর্তমান নেতিবাচক অবস্থা দেখে এই ভাবার কারণ নেই যে বাজার পুনরায় মন্দার যুগে ফিরে যাচ্ছে। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অল্প সময়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রবি আজিয়াটা অন্যতম।কোম্পানিটি একাই ৫০০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে। এর ফলে সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে টাকা প্রাইমারি মার্কেটের দিকে মোড় নিয়েছে। এর ফলেই মূলত বাজারে ভাটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারবাজারে চাঙ্গা ভাব চলে আসবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, গত চার মাসে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, এসোসিয়েট অক্সিজেন, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ডমিনেজ স্টীল বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেড, এবং সর্বশেষ রবি আজিয়াটা লিমিটেডের মতো কোম্পানি আইপিও অনুমোদন পাওয়ায় অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ কমে গেছে।

তবে, আরও কিছু ফ্যাক্টর পুঁজিবাজারে পতনের প্রবণতার সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের বীমা খাতের শেয়ারের মূল্যে অস্বাভাবিক উত্থান অন্যতম। এসময় কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ৪শ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। সেগুলোতে এখন মূল্য সংশোধন চলছে। এসব শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি স্বত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা উচ্চ মূল্যে বীমার শেয়ার কিনে বিপুল লোকসানের মুখে পড়েছেন। পরে বিএসইসি, বীমা খাতের অস্বাভাবিক উত্থানের পেছনে কোন কারসাজি আছে কিনা জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর ফলে বাজারে কিছুটা অস্বস্তিবোধ কাজ করছে বলে মনে করছেন অনেকে।

বাজার বিশ্লেষণে জানা যায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত ৩৫ টি কোম্পানি ৩০ জুন ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোন লভ্যাংশ পাঠায়নি। বেশিরভাগ কোম্পানির ইপিএস কমেছে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর নেতিবাচক আর্থিক প্রতিবেদন শেয়ারের দাম কমিয়ে দিয়েছে অনকেটাই।

তাছাড়া, তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার আগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা যায়। বাজার চাঙ্গাভাব বজায় থাকে। কিন্তু অধিকাংশ কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করে ফেললে বাজারে সে চাঙ্গাভাবটা থাকেনা। বাজারে আগস্ট মাস থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে থাকে। নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে অধিকাংশ কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করে ফেলায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে বলেও মত বাজার বিশ্লেষকদের।

এ বিষয়ে ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের কনভেনার শরীফ আনোয়ার হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, বাজারে উত্থান-পতন থাকেই। শেয়ারবাজারে উদ্বেগের মতো কিছু ঘটেনি। আশা করছি অতি শীগ্রই বাজার ইতিবাচক প্রবণতার দিকে মোড় নিবে।

দ্য রিপোর্ট/এএস/২৯ নভেম্বর,২০২০

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর