thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৮ শাওয়াল 1445

বেয়নেটের খোঁচায় রক্তাক্ত মুক্তার মুখে ছিল ‘জয়বাংলা’

২০১৪ মার্চ ২৫ ২২:৪৮:২৪
বেয়নেটের খোঁচায় রক্তাক্ত মুক্তার মুখে ছিল ‘জয়বাংলা’

গৌতম বাবুল, নেত্রকোনা : ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ২ নম্বর আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন ব্রাশ ফায়ারে শহীদ হন। এ সময় তার মুখে ছিল ‘জয়বাংলা’। একইভাবে ‘জয়বাংলা’ বলতে বলতে স্বাধীনতার জন্যে আত্মোৎসর্গ করেন নেত্রকোনার সাতগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদিউজ্জামান মুক্তা। তার এ আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম ওঠেনি তার। তবে পরিবারের সান্ত্বনা, তারা পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ১টি চিঠি ও ২ হাজার টাকার চেক।

১৯৭১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি (বাংলা ১৩৭৮ সনের ২৬ কার্তিক) একদিনের ঘটনা। সকাল ১০টার দিকে শহর থেকে ১০কিলোমিটার দূরের বিরামপুর বাজার ঘিরে ফেলে রাজাকারসহ পাক সেনারা। এ সময় বাজারের একটি দোকানের বেঞ্চে আলাপরত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সতর্ক হওয়ার আগেই গ্রেনেডসহ হানাদাররা আটক করে মুক্তিযোদ্ধা মুক্তা, শান্ত, ইসলাম উদ্দিন, ইসমাইল, সিদ্দিকুর রহমান ও শ্রীরামচন্দ্র তালুকদার লেবুকে ।

তাদের বাঁচাতে মুদি দোকানদার আব্দুল জলিল সঞ্জু এগিয়ে আসেন। সেনাদের রাইফেলের আঘাতে তার বাম হাত ভেঙ্গে যায়। পরে লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের পাশে মগড়া নদীতে ইসলাম উদ্দিন, ইসমাইল, সিদ্দিকুর রহমানকে গুলি করে ফেলে দেয় । মুক্তা ও শান্তকে নিয়ে সেনা ও তাদের সহযোগীরা মেতে ওঠে বীভৎসতায়। শান্তকে মোক্তারপাড়ার ব্রিজে ফেলে তার উপর চালিয়ে দেয় জিপ।

অপরদিকে মুক্তাকে নিয়ে নির্মম খেলা যেন শেষ হওয়ার নয়। প্রথমে কাচারি মাঠে উলঙ্গ অবস্থার পুরুষাঙ্গে গ্রেনেড বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখে। এরপর গলায় গ্রেনেড বেঁধে খোলা জিপে তুলে সারা শহর প্রদক্ষিণ করে। সবশেষে বেয়নেটে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে মরিচের গুঁড়া, লবণ ছিটিয়ে দেয়। তখনও মুক্তা বলতে থাকেন, ‘ভাইসব আপনারা ভয় পাবেন না, পাকিস্তানি জালেমদের বাংলার মাটিতে পতন হবেই... জয় বাংলা।’

রাত ১২টার দিকে মোক্তারপাড়া ব্রিজে পর পর ৭টি গুলি করে মুক্তাকে হত্যা করা হয়। তারপর ব্রিজের নিচে ইট-পাথর বেঁধে লাশটি নদীতে রেখে দেয়। বড় ভাই আসাব উদ্দিন ও ভাগিনা সবুজ মিয়া পরিচয় গোপন রেখে ৩০০ টাকায় ব্রিজের নিচের লাশ পাহারার দায়িত্ব নেন। ৪ দিন পর তারা কৌশলে লাশটি নৌকায় করে বাড়িতে এনে দাফন করেন।

এভাবেই স্বাধীনতা দিবসের দুদিন আগে শহীদ মুক্তার ওপর করা নির্যাতন ও হত্যার কথার বর্ণনা করেন তার বড় দুই বোন আয়েশা আক্তার, জহুরা আক্তার ও ভাগিনা সাইদুর রহমান হামজা।

শহীদ মুক্তার ভাতিজা আলী রেজা কাঞ্চন জানান, ২০১০ সালে ১২ আগস্ট মুক্তার ভাতিজা আলী রেজা কাঞ্চন বাদী হয়ে মানবতাবিরোধী অভিযোগ নিয়ে ১২জনের নাম উল্লেখ করে নেত্রকোনা জেলা জজ কোর্টে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা। আসামিরা হলেন- ওবায়দুল হক তাহের, আতাউর রহমান ননী, শহীদুল্লাহ পিন্টু, শহিদুল ইসলাম মাজু, ফজলুল রহমান, মো. ইউসুফ, মিস্টার মিয়া, মো. হাফিজ উদ্দিন মীর, ওয়াহাব খান রনু, মানিক মিয়া, আ. রশিদ এবং ফরিদ আহম্মেদ। এর মধ্যে দু’জন আসামি ইতোমধ্যে মারা গেছেন।

(দ্য রিপোর্ট/ জিবি/ ডব্লিউএস/ এনআই/মার্চ ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর