thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

স্মৃতিতে একাত্তর-দুই

‘বুঝলাম অল্পের জন্য বেঁচে গেছি আমরা’

২০১৪ মার্চ ২৬ ০৯:২৮:১৫
‘বুঝলাম অল্পের জন্য বেঁচে গেছি আমরা’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাবুল আজাদ ১৯৭১ সালে ছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। ৭ মার্চ ফরাশগঞ্জ থেকে ট্রাকযোগে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে আসেন। এরপর যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘২৫ মার্চের পর দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকলে বন্ধু মতিউর রহমান রিন্টু ও আমি যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। রিন্টু তার মায়ের ১০০ টাকা চুরি করে। সেই টাকা নিয়ে একদিন রাতে সদর ঘাট থেকে চাঁদপুরের লঞ্চে উঠি। এরপর চাঁদপুর নেমে উঠি লাকসামের ট্রেনে। ট্রেনে ওঠার আগে রিন্টুর পানি পিপাসা পেয়েছিল। পানির জন্য আমরা এদিক-ওদিক ঘুরছিলাম। দেখতে পাই এক স্থানে আর্মিরা বাঙ্কার খুঁড়ছে। দুজনই ভড়কে গেলাম। আমাদের দেখে এক আর্মি উর্দুতে বলল, ‘পালিয়ে পালিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’ আমি খানিকটা উর্দু জানতাম। ভাঙা ভাঙা উর্দুতে বললাম, স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়ি যাচ্ছি। আর্মিরা আমাদের ছেড়ে দিল।’

‘সামনে আসতেই এক লোক বলল, ‘ক্যামনে ছাড়া পাইলেন। কিছুক্ষণ আগেও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে নদীর পাড়ে গুলি করে মেরেছে।’ বুঝলাম অল্পের জন্য বেঁচে গেছি আমরা।

‘লাকসাম হয়ে বাগমারায় সীমান্ত পার হয়ে কলেজ টিলার মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট ক্যাম্পে গেলাম। সেখান থেকে মেলাঘরের লেম্বুচড়া ট্রেনিং ক্যাম্প। প্রথমে সাত দিনের ট্রেনিং নিলাম। এরপর আরও সাতদিনের কমান্ডো ট্রেনিং। ট্রেনিং শেষে প্রতিজন একটি স্টেনগান, ১০টি গ্রেনেড, কিছু বিস্ফোরকসহ দেশে ফিরতে রওয়ানা দিলাম। পূর্বদিক দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়ি আমরা। যেদিকে যাই সেদিকেই পাকিস্তানি বাহিনীর টহল। তারপরেও সুযোগ খুঁজছিলাম ঢাকায় প্রবেশের। ঢাকায় ফেরার পথে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা যুদ্ধও হয়। অবশেষে ঢাকায় ফিরে আসি। ঢাকায় এসে আরও কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দিতে আগরতলা নিয়ে যাই।’

১৬ ডিসেম্বরের পর ফরাশগঞ্জে ফিরে এলাম। যুদ্ধ চলাকালে যেসব অবাঙালি বাঙালিদের ওপর অত্যাচার শুরু করেছিল ঢাকায় এসে এ রকম কয়েকজন অবাঙালিকে ধরে নিয়ে আসি বন্ধু রিন্টুর বাড়িতে। রিন্টুর মা সবাইকে ছেড়ে দিতে বলেন। তারপরেও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে শাস্তি দিয়েছিলাম। এরপর এলাকার কয়েকজন মিলে আমাদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করে।’

‘আমার আগ্নেয়াস্ত্রটি মোটরসাইকেলযোগে আমার কাছে পৌঁছে দেওয়ার সময় ফরাশগঞ্জের সরদার মাওলা বখসের ছেলে নাসিরউদ্দিন বখস অসর্কতাবশত গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। বিজয়ের আনন্দ পরিণত হয় শোকে। সে কথা মনে পড়লে মনটা ভারি হয়ে ওঠে।’

মুক্তিযোদ্ধা বাবুল আজাদের বাসা রাজধানীর ৬৪, বি কে দাস লেনে। তবে এখানে আর থাকেন না তিনি। বর্তমানে তার ঠিকানা রামপুরায়। দুই ছেলে আর পরিবার নিয়ে এখানেই চলছে তার সাজানো সংসার।

(দ্য রিপোর্ট/আরএম/একে/এনআই/মার্চ ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর