thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

হারিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির বীরত্বগাঁথা

২০১৪ মার্চ ২৬ ১০:১৮:১৮
হারিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির বীরত্বগাঁথা

এইচএম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি : রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাননি খাগড়াছড়ির শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা ও চিহিৃত করা যায়নি তাদের কবরস্থান। অযত্মে-অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্যগুলোও। একইসঙ্গে নতুন প্রজম্ম জানতে পারছেন না স্বাধীনতা যুদ্ধে খাগড়াছড়ির অবদান ও শহীদদের বীরত্বগাঁথা।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শেষ রাতে জেলার রামগড়, লাচারী পাড়া ও বাগান বাজার ইপিআর ক্যাম্পে বাঙ্গালি সৈন্যরা সুবেদার মফিজুল বারীর নেতৃত্বে পাক সেনাদের হত্যা করে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে মেজর জিয়াউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা সীমান্তবর্তী শহর রামগড়ে ঘাঁটি স্থাপন করে প্রশিক্ষণ শিবির খুলেন। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে রামগড় ছাড়াও মহালছড়ি, মানিকছড়ির চেম্প্রুপাড়া ও গাড়ীটানায় ভারতের মিজো, চাকমা দেওয়ান ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মূখ যুদ্ধ হয়।

১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা সমর কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড় সম্মূখ যুদ্ধটি হয় মহালছড়িতে। সেখানে পাক কমান্ডো ব্যাটালিয়নের এক কোম্পানি সৈন্য ও এক মিজো ব্যাটালিয়নের প্রায় ১ হাজার সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ করে। এ সময় ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের অসীম সাহস আর সুদক্ষ যুদ্ধ কৌশল নিয়ে শত্রুদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে একজন সহযোদ্ধাকে বাঁচাতে গেলে শত্রুদের গুলিতে আহত হন। সহকর্মীরা গুরুতর আহত আফতাবকে নিয়ে একটি চাঁদের গাড়ি করে রামগড়ের দিকে রওয়ানা হন। পথে তিনি শহীদ হন। পরে জানাজা শেষে রামগড় উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে সামরিক মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হলেও কবরটি পড়ে আছে অযত্ম-অবহেলায়। জানা যায়, তখনও আফতাবুল কাদেরের হাত থেকে মুছে যায়নি বিয়ের মেহেদি। এরপর প্রথমে মহালছড়ি এবং পরে রামগড়ের পতন হয়। কিন্তু সে ইতিহাস জানে না নতুন প্রজম্ম।

মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৭৩ সালে সরকার ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরকে মরণোত্তর ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়। কিন্তু মহালছড়ি ও মানিকছড়িতে শহীদ গৌরাঙ্গ মোহন দেওয়ান, চিত্তরঞ্জন কার্বারী, সব্যসাচী মহাজন এবং ইপিআর সদস্য রমণী রঞ্জন চাকমা এখনও পাননি শহীদের মর্যাদা। তাদের পরিবারের খবর নেয়নি কোনো সরকার।

শহীদ চিত্তরঞ্জনের ছেলে ড. সুধীন চাকমা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার অপরাধে আমার বাবাকে হানাদাররা ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। দেশ স্বাধীন হলো আজ ৪২ বছর অথচ এখনো আমরা স্বীকৃতি পায়নি।

আফতাবুল কাদেরের সহযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মো. মোবারক আলী বলেন, সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে একদিন ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাবে মহালছড়ির মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের অবদান।

স্থানীয় সাংবাদিক দীপক সেন জানান, স্বাধীনতার প্রায় ৪২ বছরে পার হলেও শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরের মৃত্যুবার্ষিকী সরকারিভাবে কিংবা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে কখনো পালিত হয়নি। এমনকি তার স্মৃতি রক্ষার্থে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

নতুন প্রজম্মের জন্য খাগড়াছড়ির ঘটনাবহুল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্য-পুস্তকে লিপিবব্ধ ও শহীদদের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান তাদের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা।

(দ্য রিপোর্ট/এইচএমপি/ডব্লিউএস/মার্চ ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর