thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

‘মরতে যখন হবে যুদ্ধ করেই মরব’

২০১৪ মার্চ ২৬ ১২:০৪:৫৮
‘মরতে যখন হবে যুদ্ধ করেই মরব’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সাবের আহমেদের বাড়ি রাজধানীর সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেনে। ২৫ মার্চের বিভীষিকা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। দেখেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার। এ থেকে দেশকে মুক্ত করতে যুদ্ধে যান সাবের আহমেদ।

২৫ মার্চের ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘রাতে পাটুয়াটুলী এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলাম। শুনলাম শহরে সেনাবহিনী নেমেছে। সেনাবাহিনী নামার খবর শোনার পরপরই আমরা তাড়াতাড়ি যে যার বাসায় চলে যাই।’

‘গভীর হয় রাত। কারফিউ চলছে, থমথমে পরিবেশ সবখানে। শাঁখারি বাজারের দিক থেকে কানে আসে গুলির শব্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও গোলাগুলির খবর পাই। নয়াবাজার ও রায়সাহেব বাজার এলাকায় কাঠের দোকানগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় মিলিটারিরা। ঘরে বসেই আগুনের সেই লেলিহান শিখা দেখতে পাই।’

ফজর ওয়াক্তের পর বাইরে বের হই আমরা। প্রথমে গেলাম বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়ির দিকে। যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি রক্ত। এখানে সেখানে পড়ে আছে লাশ, কেউ কেউ আবার কাতরাচ্ছেন। শাঁখারি বাজার, তাঁতিবাজার এলাকার এমন কোনো বাড়ি ছিল না, যেখানে হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন নেই। ঠেলাগাড়িতে লাশ ও আহতদের উদ্ধার করে আমরা তাদের হাসপাতালে পাঠাই।’

‘সদরঘাট এলাকায়ও গিয়ে দেখি অনেক লাশ। পাটুয়াটুলী, প্রসন্ন পোদ্দার লেন, রাজার দেউরি, গোয়ালনগর, কোর্ট হাউজ স্ট্রিট এলাকায় ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। দোকানে দোকানে চালায় লুটপাট।’

সাবের আহমেদ বলেন, ‘১৯৭০ সালে বাবা এম এ কবির হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। একাত্তরের দুর্যোগময় দিনে তিন ভাই লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরি। ক্রমেই বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। সিদ্ধান্ত নিলাম যুদ্ধে যাব। সিদ্ধান্ত নিলাম মরতে যখন হবে যুদ্ধ করেই মরবো, মাকে জানালাম ইচ্ছের কথা। মা বাধা দেননি।’

‘মায়ের আলমারি থেকে কাপড়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখা একশ টাকা আর কিছু খুচরো টাকা নিয়ে আমি ও বন্ধু ইরফান কবির রওয়ানা দিলাম কুমিল্লার উদ্দেশে। অনেক বিপত্তি পেরিয়ে ইরফানের নানির বাড়ি পৌঁছালাম।’

‘পরের দিন সন্ধ্যায় চান্দিনা বাজার হয়ে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের পাশ দিয়ে আগরতলার উদ্দেশে রওনা হই আমরা। সঙ্গে একজন গাইডও ছিল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই সারারাত হাঁটি। সিঅ্যান্ডবি রোড পার হয়ে আগরতলা বক্সনগর কংগ্রেস ভবনে উঠি আমরা। দুইদিন থাকি সেখানে। সেখানের রেজিস্ট্রার খাতায় নাম লিখতে গিয়ে দেখি আমার মামার (শহিদুল হক) নাম আছে। আমার মামাও ট্রেনিং নিতে এসেছেন, জেনে আনন্দিত হলাম। কিন্তু মামা কোথায়, কোন ক্যাম্পে আছেন তা জানতে পারিনি।’

‘দুইদিন পর আমাদের হাপানিয়া ইয়ুথ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। তারপর আমাদের নেওয়া হয় দুই নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টারে। এখানে এসে মামাকে দেখতে পাই। মামাকে পেয়ে আমার আনন্দ আর ধরে না।’

‘মেলাঘরে আমাদের তিন সপ্তাহের ট্রেনিং দেওয়া হয়। ট্রেনিংয়ের সময় ভেবেছি আমাদের অপারেশনে পাঠানো হবে, কিন্তু তা আর হয়নি। আমাদের বলা হলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। পরে আমাদের পাঠানো হয় পালাটোনায়। সেখানকার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন সুজাত আলী। ট্রেনিং শেষে আবারও মেলাঘরে যাই। এরপর মুক্তিযোদ্ধা দলের সঙ্গে ফিরে আসি দেশে। ঢাকার কেরানিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপন করি আমরা। এ ক্যাম্পের পাশেই ছিল সেকশন কমান্ডার সুলতান উদ্দিন রাজার ক্যাম্প। রাজার দলের সঙ্গে এক হয়ে আমরা কেরানীগঞ্জের গোলাম বাজারে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সেই যুদ্ধে পাক বাহিনীর অনেক সৈন্য মারা যায়।

সর্বশেষ জিঞ্জিরা হাইস্কুল মাঠে পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমণ করি আমরা।

সাবের আহমেদের দুই ভাই তাহের আহমেদ তারু ও আব্দুল কাদের বাবুলও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাহের আহমেদ কিছুদিন আগে মারা গেছেন। সাবের আহমেদ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোতোয়ালী থানা কমান্ডের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএম/একে/মার্চ ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর