thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

এক সাকিব কত ব্যবসায়!

২০২২ জুন ০৪ ১৮:২৬:৪৪
এক সাকিব কত ব্যবসায়!

মাহি হাসান,দ্য রিপোর্ট: সাকিব আল হাসান! বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই ক্রিকেটারের পাশাপাশি উদ্যোক্তার পরিচয় লাগিয়েছিলেন নিজের নামের পাশে। বিভিন্ন খাতে ব্যবসার প্রসার এতোটা বাড়িয়েছেন যে তিনি ক্রিকেটার না ব্যবসায়ী সেটা নিয়ে আলোচনা করছেন অনেকেই। শুরুর দিকে ব্যবসাগুলোয় ভালো করতে না পারলেও দিন দিন দক্ষ হয়ে উঠছেন সাকিব।

তবে সাকিব আল হাসান বরাবরই বলে এসেছেন ব্যবসায় নয় মানুষের কর্মসংস্থানই তার উদ্দেশ্যে। অন্তত হাজার দশেক মানুষের কর্মসংস্থান করতে চান তিনি। যেমন বলেছেন ঠিক তেমনটাই করছেন। ই কমার্স, স্বাস্থ্য সেবা, রেস্টুরেন্ট কিংবা হোটেলের পাশাপাশি স্বর্ণের ব্যবসায় জড়িয়েছেন। শেয়ার ব্যবসা করতে গিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের পাশে নিজের নাম লিখিয়েছেন।

দেশসেরা এই ক্রিকেটারের ব্যবসা জগতের গল্পটা শুরু হয়েছে সাকিবস সেভেন্টি ফাইভ নামে একটি রেঁস্তোরার মাধ্যমে। পরবর্তীতে সাকিবস ডাইন নামে আরেকটি রেস্টুরেন্ট চালু করেন। তবে পরে বিক্রি করে দেন। রেঁস্তোরার পাশাপাশি আবাসিক হোটেল ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন ২০১৮ সালে। কক্সবাজারে হোয়াইট সেন্ড রিসোর্ট নামের রিসোর্ট কাম শপিংমল ২০ হাজারস্কয়ার ফিট স্পেস কিনেছিলেন সাকিব আল হাসান । করেছিলেন প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবসায়ও। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে কসমিক জভিয়ান নামে নামিদামী কসমেটিকসের দোকান দিয়েছিলেন। পরবর্তিতে বন্ধ হয়ে যায় দোকানটি।

কাঁকড়ার ব্যবসায়ও করেছেন বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের এই অধিনায়ক। সাতক্ষীরায় করেছেন কাঁকড়ার খামার। পরবর্তীতে এ ব্যবসায় নানা জটিলতায় পড়েছেন। বেতন পরিশোধ নিয়ে ঝামেলার গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিলো। ২০১৬ সালে শুরু করা খামারটি চালু ছিলো ২০২০সাল পর্যন্ত। কোভিড পরবর্তী সময় আর চালু হয়নি খামারটি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায় জড়িয়েছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ২০১৫ সালে পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ফিয়েস্তা নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ফার্মে। শাহ সেভেন্টি ফাইভ নামের একটি ট্যুর এন্ড ট্রাভেল এজেন্সিও ছিলো
মিস্টার অলরাউন্ডারের।

সম্প্রতি চালু করেছেন ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম সাকিব সেভেন্টি ফাইভ হেলথ কেয়ার।এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে বুকিংয়ের মাধ্যমে রেজিস্টার্ড ডক্টরদের সেবা নিতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। ডিজিটাইজেশনের এই যুগে নিশ্চিন্তভাবে অনলাইনে চিকিৎসা সেবা একদমই নতুন ধারণা।

ক্রিকেট মাঠে দলের যখন শোচনীয় অবস্থা থাকে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় এসে খাদের কিনারা থেকে অনেকবারই টেনে তুলেছেন সাকিব। ঠিক তেমনি ই-কর্মার্স ব্যবসায় যখন মানুষের কাছে আস্থা হারাবার চূড়ান্ত সীমায় তখনই মোনার্ক মার্ট নামের ই কর্মার্স সাইটের জন্ম সাকিব আল হাসানের হাত ধরে। এই বছর জানুয়ারী মাসে যাত্রা শুরু করা মোনাক মার্টের সাথে যুক্ত হয়েছে দেশ সেরা নামীদামি অনেকগুলো ব্রান্ড। ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়্তা পাচ্ছে সাইটটি। সর্বশেষ বিপিএলে সাকিবের দল ফরচুন বরিশালের টাইটেল স্পন্সর ছিলো এই মোনাক মার্ট । গুঞ্জন রয়েছে ফরচুন বরিশালের মালিক শেয়ার মার্কেট কারসাজি চক্রের এক হোতা মোনার্ক মার্টে সাকিবের পার্টনার। হিরু নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তদন্তও করেছে। যেখানে সেকেন্ডারী মার্কেটে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমাণ মিলেছে।

গত বছর এই ক্রিকেটার যুক্ত হয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়। রিলায়েবল কমোডোটি একচেঞ্জ এবং বুরাক কমোডোটি একচেঞ্জ নামের সাকিব মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে থেকে স্বর্ণ আমদানি করে থাকে। এই দুই প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে । এর পাশাপাশি কিউরিয়াস লাইফ স্টাইলের সাথে যৌথভাবে স্বর্ণ ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন সাকিব। বনানীতে শোরুম রয়েছে এই ব্রান্ডটির।

ব্যাংকের পরিচালক হতে চেয়েছিলেন সাকিব। চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ‘পিপলস ব্যাংক লিমিটেড’-এর অনুকূলে ইস্যু করা লেটার অব ইনটেন্ডের (এলওআই) শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় আবেদন বা‌তিল করে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো ফর্মে ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে নাম ছিলো সাকিব আল হাসানের।

২০২১ সালে মে মাসে সাকিবে যুক্ত হয়েছেন শেয়ার ব্যবসায়ের সাথে। বিনিয়োগকারীদের লেনদেন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিং কাজ করে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সর্বশেষ এই সপ্তাহে সাকিব আল হাসানের দুইটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ আরো পাঁচ জন ব্যক্তি পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৮ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করার অনুমতি পেয়েছে। যার মাধ্যমে ক্যামিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজে পদচারনা শুরু সাকিব আল হাসানের।

একই সাথে এতো পরিচয়। নিজের আসল পরিচয় ক্রিকেটার এটা কি মনে থাকে সবসময়। এমন প্রশ্ন থাকে সাকিব আল হাসানের কাছে। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট সব সময় আমার প্রথম অগ্রাধিকার। এমন তো না যে, যারা ক্রিকেট খেলে তাদের আর কিছু করার সুযোগ থাকে না। খেলা যখন থাকে না, তখন এসব জায়গায় সময় দেওয়া হয়। আমি কিন্তু এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত অফিস করি না। কিছু দক্ষ লোক আছে, তারাই এসব সামলায়।’

মে মাসে বনানীতে নিজের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে নিজেকে অন্য উচ্চতায় আসীন করেছেন সাকিব। মাঠে পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য, মাঠের বাইরে ঠিক তার উল্টো। গত কয়েক বছরে নানা খাতে বিনিয়োগ করেও সে অর্থে সফলতা আসেনি। ব্যাপারটা সাকিবেরও অজানা নয়। তবু কেন আবার নতুন ব্যবসায়? সর্বশেষ আলোচনায় আসা ব্যবসায় স্বর্নের ব্যবসায় নিয়ে প্রশ্ন থাকে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের কাছে। এই অনুপ্রেরণাই বা কোথা থেকে পেলেন?

প্রশ্নের বাউন্সারটা সাকিব সামলালেন মাঠের হার না মানা মানসিকতায়, ‘যদি শেষ ১০০ বছরের রেকর্ড দেখেন, সোনার দাম কখনো কমেনি। পৃথিবীতে হয়তো অনেক জিনিসেরই ক্ষয় আছে কিন্তু সোনার সেটা নেই। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে মানুষ কিনতেই পারে। ছোট বেলায় দেখতাম, মানুষ উপহার হিসেবে সোনা দিত। সে রেওয়াজ এখন হয়তো অনেকটা কমে গেছে। সে জায়গা থেকে আমরা একটা সুবিধাজনক ব্যাপার চালু করতে যাচ্ছি। গ্রামে থেকেই মানুষ সোনা কিনতে পারবে। আমার ধারণা এরকম কিছু বাংলাদেশে প্রথম। মানুষের হাতের নাগালে যেন সোনা পৌঁছে দিতে পারি, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’ ঠিক যেমন বাউন্সার বলে ছয় মেরে দেওয়ার মতো জবাব।

অর্থনৈতিক প্রাঙ্গণে সাকিবের পদাচরণ যেমন আমাদের জন্য আশার খবর, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবসায়ীদের সাথে তার নাম একই শিরোনামে আসা ভ্রু কুচকানোর কারণ হয় বৈকি! সাকিব বিশ্বক্রিকেটে যেভাবে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করেছেন, এই প্রত্যাশা করা ভুল নয় যে সাকিব এই মন্দাগ্রস্ত সময়েও মানুষের কর্মসংস্থান করবেন এবং করে যাবেন।

(দ্য রিপোর্ট/ মা হা/ টিআইএম/ ৪ জুন ২০২২)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

খেলা এর সর্বশেষ খবর

খেলা - এর সব খবর